লিংকড-ইনে যেভাবে নিজেকে প্রকাশ করবেন

লিংকড–ইন পেশাজীবীদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তবে লিংকড–ইনের উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন পেশায় যুক্ত থাকা মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানো। ২০১৯ সালের জুনের হিসাব অনুযায়ী লিংকড–ইনে যুক্ত আছেন ৬৩ কোটির বেশি সদস্য। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, চাকরিতে নিয়োগের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম এই লিংকড–ইন।

লিংকড–ইনের সদস্যরা তাঁদের সহকর্মী, বন্ধু, বিভিন্ন ব্যবসা বা উদ্যোগ বা গ্রাহকের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সবাই একে অপরের সঙ্গে এবং এর বাইরেও নিজের দক্ষতা বা পছন্দের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকছেন। এখানে যেমন অপরের অগ্রগতি ও সাফল্যের খবর জানা যাচ্ছে, একইভাবে নিজের সাফল্যগুলো তুলে ধরার জন্যও এটি একটি বড় জায়গা।

একজন তাঁর নিজের ব্র্যান্ডিং করার জন্যও লিংকড–ইন ব্যবহার করতে পারেন, অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা পাওয়ার সুযোগ কম। চাকরি বা ব্যবসা, যেদিকেই আপনি পেশাজীবন এগিয়ে নিতে চান, সেভাবে এখানে উপস্থাপনের সুযোগ রয়েছে। নিয়োগকারী (রিক্রুটার) যখন কাজের জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খুঁজছে, তখন অন্য সবার চেয়ে আপনার উপস্থিতি যেন দৃঢ় হয়, সে বিষয়ে চেষ্টা করতে হবে।

লিংকড–ইন কার্যকরভাবে ব্যবহার করে নিজের পরিচিতি আরও সুগঠিত করা যায়, অন্যদিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সে জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।

প্রোফাইল তৈরি

নিজের ছবি ও তথ্য উল্লেখ করে কিছুটা সময় দিয়ে নিজের প্রোফাইলটি তৈরি করতে হবে। এটি আপনার জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি হিসেবে কাজ করবে—এমনভাবে তথ্য যোগ করতে হবে। তাই ভ্রমণের সময় বা ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বিশেষ ভঙ্গিমায় তোলা কোনো ছবি প্রোফাইলে না দিয়ে আপনার স্বাভাবিক ছবি দেওয়া উচিত। নিজের সম্পর্কে কয়েক লাইনের একটি বর্ণনা যোগ করা জরুরি। কারণ, রিক্রুটাররা এই তথ্যগুলো থেকে আপনার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাবে। প্রোফাইলের হেডলাইন (শিরোনাম) অংশটি নামের নিচে সব সময় দেখা যায়, তাই এখানে আপনার পরিচয়ের সঙ্গে সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ দক্ষতা উল্লেখ করতে হবে।

অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ

বর্তমানে যে কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং আগে যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, নির্দিষ্ট অংশে সেসব যুক্ত করতে হবে। লেখাপড়া এবং বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকলে সেগুলো উল্লেখ করা উচিত। কাজের ক্ষেত্রে শুধু প্রতিষ্ঠানের নাম না লিখে কোন পদে নির্দিষ্ট কী কাজ করছেন, সেটি লেখা এবং একইভাবে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিষয় ও কোর্সের বিস্তারিত উল্লেখ করা উচিত। পেশাদার কাজের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে সেসব প্রোফাইলে যুক্ত করা যেতে পারে। নেতৃত্ব দেওয়া বা দলের অংশ হিসেবে কাজ করার দক্ষতা প্রমাণের জন্য এগুলো কার্যকর হয়ে থাকে। বিশেষত শিক্ষার্থীরা প্রোফাইল তৈরির সময় লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য প্রকল্প ও কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করলে নতুন কাজ পাওয়া সহজ হয়। পাশাপাশি আপনার দক্ষতাগুলো উল্লেখ করার জন্যও আলাদা একটি অংশ রয়েছে।

অন্যদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া

নেটওয়ার্কিং লিংকড–ইনের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক। লিংকড–ইনে অন্য কারও সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারটিকে কানেকশন বলা হয়। সঠিক তথ্য দিয়ে প্রোফাইলটি পূর্ণ করা হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বর্তমান বা পুরোনো সহকর্মীদের যুক্ত করে আপনার নেটওয়ার্ক তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সম্ভাব্য অন্যান্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। তবে প্রোফাইল তৈরির সঙ্গে সঙ্গেই বহু মানুষকে যুক্ত করতে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাধা দেওয়া হয়। আপনার নেটওয়ার্কের অন্যদের কাজ বা দক্ষতা সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি রিকমেন্ডেশন যোগ করতে পারেন, একইভাবে তাঁদেরও অনুরোধ করতে পারেন।

গ্রুপে যুক্ত হওয়া

প্রোফাইল তৈরি করে বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন। আপনি যে বিষয়ে দক্ষ বা কাজ করতে আগ্রহী, সে ধরনের গ্রুপে যুক্ত থাকলে অন্যরা কী ধরনের কাজ করছে, সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। একইভাবে গ্রুপ আপনার নিজের নেটওয়ার্ক বড় করতে সাহায্য করবে।

নতুন কাজে যুক্ত হওয়া ও কাজ খোঁজা

বিশ্বব্যাপী নতুন কাজ খোঁজা এবং প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের জনপ্রিয় মাধ্যম লিংকড–ইন। নতুন নতুন চাকরির কথা যেমন জানা যাবে, তেমনি যাঁরা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুসন্ধান করছেন, তাঁরা যেন আপনাকে খুঁজে পান, সে সুযোগও রয়েছে। কাজ খোঁজার ক্ষেত্র পছন্দের নির্দিষ্ট কোনো বিষয়, এলাকা বা দেশ উল্লেখ করার ব্যবস্থা রয়েছে। আবার আপনি যদি চান, নতুন চাকরির জন্য আপনাকে কেউ খুঁজে পাবে না, এমন সুযোগও রয়েছে।

নিয়মিত হালনাগাদ করা

কাজের ক্ষেত্রে নতুন কোনো প্রশিক্ষণ, সাফল্য বা যেকোনো উল্লেখযোগ্য বিষয় নিয়মিতভাবে প্রোফাইলে যুক্ত করতে হবে। পছন্দ ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন বিভিন্ন তথ্য ভাগাভাগি করতে পারেন প্রোফাইল থেকে বা প্রাসঙ্গিক গ্রুপে। এর ফলে নেটওয়ার্কের অন্যরা আপনি এবং আপনার দক্ষতা সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন।

পরিচিত এবং বন্ধুরা যুক্ত আছেন বলেই যে এটি নিয়মিত আড্ডার জায়গা হবে এমন নয়। প্রতিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেরই একটি উদ্দেশ্য থাকে। সবাই যে সব মাধ্যমের সদস্য হবেন এমন নয়, যেটি প্রয়োজনীয় মনে হবে, সেটিতে আমরা যুক্ত থাকি। তাই পেশা বা কাজের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নয়, এমন কিছু লিংকড–ইনে প্রচার ও প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। লিংকড–ইনে এসব না করাই উচিত। যেমন—

l পুরোনো বা বর্তমান সহকর্মীদের নামে দুর্নাম করা

l ভুল বানানে কিছু প্রকাশ করা

l ইংরেজি অক্ষরে বাংলা অথবা বাংলা অক্ষরে ইংরেজি লেখা

l কোথাও কাজে যুক্ত থাকার সময় নতুন কাজ খুঁজছেন—এমন ঘোষণা দেওয়া

l নিয়মিত পোষা বিড়াল, পাখি বা অন্য কিছুর ছবি বা আপডেট পোস্ট করা

l নিজের ও পরিবারের ছবি প্রকাশ না করে সহকর্মী ও কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছবি প্রকাশ করা যেতে পারে

l সব ধরনের প্রাইভেসি সক্রিয় থাকলেও অন্য কেউ জানলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে—এমন কোনো তথ্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা উচিত না।

প্রত্যেকেই তাঁর পেশা ও কাজসংশ্লিষ্ট সবকিছুই প্রকাশ করবেন কিন্তু ব্যক্তি ও কাজ যেন মিলে না যায়, সেটিও ভাবা প্রয়োজন। যেমন কার্টুন আঁকা আপনার পেশা হলেও প্রোফাইল ছবি হিসেবে নিজের একটি ক্যারিকেচার ব্যবহার করা উচিত হবে না।

লিংকড–ইন এমন একটি জায়গা, যেটি দেখে অন্যরা আপনার পরিচয় ও আপনার ব্যাপারে প্রথমিক ধারণা পাবে। তাই যে তথ্য, লেখা বা ছবিই প্রকাশ করছেন, সেটির দায়িত্ব নিজের। তাই যেকোনো কিছু প্রকাশের আগে অতিরিক্ত একবার ভাবুন।