মাইক্রোসফটের কোয়ান্টাম কম্পিউটার

মাইক্রোসফটের কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি হচ্ছে। ছবি: মাইক্রোসফটের সৌজন্যে
মাইক্রোসফটের কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি হচ্ছে। ছবি: মাইক্রোসফটের সৌজন্যে

দিন কয়েক আগেই ‘কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি’ দাবি করেছে গুগল। সাধারণ কম্পিউটারে যে কাজ সারতে ১০ হাজার বছর লেগে যেত, গুগল দাবি করেছে, তাদের কোয়ান্টাম কম্পিউটার সে কাজ ২০০ সেকেন্ডে করে দেখিয়েছে। এদিকে মাইক্রোসফটও এমন কম্পিউটার নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তারা কিউবিটের কাজের পদ্ধতি বদলে এগোনোর চেষ্টা করছে।

প্রতিষ্ঠানটির দাবি, সফল হলে শুধু তাত্ত্বিক নয়, বাস্তব সমস্যা সমাধানেও তা কাজে লাগানো যাবে।

মাইক্রোসফটের গবেষণার মূলে রয়েছে টপোলজিক্যাল কিউবিট। পাঁচ বছর ধরে তারা এ নিয়ে গবেষণা করছে। এখন সেটি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত বলে গত বৃহস্পতিবার আইইইই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন রিবুটিং কম্পিউটিং সম্মেলনে দাবি করেছেন মাইক্রোসফটের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ক্রিসটা সভর।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কাজের ধরন জটিল। তৈরি যেমন কঠিন, প্রোগ্রাম তৈরি করে ব্যবহারও সহজ নয়। কাজ করে মহাশূন্যের চেয়েও শীতল পরিবেশে। তবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে এমন কাজ করা যাবে সাধারণ কম্পিউটারে, যা সম্ভব নয়। আরও কার্যকর উপায়ে রাসায়নিক সার তৈরি কিংবা যানজটের সময় দ্রুততম পথ খুঁজে বের করার মতো উদাহরণের উল্লেখ করেন ক্রিস্টা।

উন্নত কিউবিট
সাধারণ কম্পিউটার তথ্য সংরক্ষণ করে ০ কিংবা ১-এর মাধ্যমে। মানে বাইনারি পদ্ধতিতে। কিউবিটের ক্ষেত্রে দুটি বিটেই একসঙ্গে তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। এতে ‘সুপার পজিশন’ নামে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার নীতি মানা হয়। তা ছাড়া কিউবিটগুলো একে অপরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। এই পদ্ধতিকে বলে ‘এনট্যাঙ্গলমেন্ট’। এই দুই পদ্ধতি মিলিয়ে কোনো সমস্যার সম্ভাব্য বহু সমাধান একই সময়ে পরখ করে দেখতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। তবে একটি সমস্যা হলো, কিউবিট সহজেই ‘বিচলিত’ হয়ে ওঠে। সে জন্যই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল অংশ শীতল পাত্রে রাখতে হয়।

অবশ্য আলাদাভাবে হলেও, মানে কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি অর্জন করা সম্ভব না হলেও কিউবিটের মাধ্যমে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে অনেক কাজই দ্রুততার সঙ্গে করা যায়। সে কাজে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নকশা করার সময় কিউবিটের ভুল সংশোধনের জন্য একসঙ্গে একাধিক কিউবিট যুক্ত করে একক লজিক্যাল কিউবিটে পরিণত করে। মানে ব্যাপারটা হলো, কোনো কোনো সঙ্গী কিউবিট যদি কাজ না-ও করে, তবু সার্বিকভাবে লজিক্যাল কিউবিট দ্রুত গতির কম্পিউটিং সেবা দিতে পারে।

মাইক্রোসফটের টপোলজিক্যাল কিউবিটের সুবিধা হলো লজিক্যাল কিউবিট তৈরিতে সঙ্গী কিউবিটের সংখ্যা কম লাগে বলে জানিয়েছেন ক্রিস্টা সভর। সাধারণ ক্ষেত্রে লজিক্যাল কিউবিট তৈরিতে সচরাচর ১ থেকে ২০ হাজার সঙ্গী কিউবিটের প্রয়োজন হয়। আর মাইক্রোসফটের বেলায় লাগছে ১০ থেকে ১০০ সঙ্গী কিউবিট। অর্থাৎ কম কিউবিট ব্যবহার করেও কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করতে পারছে মাইক্রোসফট। এ ছাড়া কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য উন্নত নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা এবং সফটওয়্যার নিয়েও কাজে অগ্রগতি দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সমস্যা একটাই—টপোলজিক্যাল কিউবিট এখনো উন্মুক্ত করেনি মাইক্রোসফট। সূত্র: সিনেট