মুখোমুখি পেন্টাগন ও আমাজন

আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। ছবি: রয়টার্স
আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোসের সম্পর্ক খুব ভালো নয়। ট্রাম্প পছন্দ করেন না বেজোসকে। তাই অনেকেই ধারণা করেন, সরকারি অনেক কাজ আমাজনের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের ১০ বিলিয়ন ডলারের এমনই একটি চুক্তি সম্প্রতি আমাজনের হাতছাড়া হয়ে গেছে। আমাজনের প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক্রোসফটের সঙ্গে ক্লাউড কম্পিউটিং বিষয়ক ওই চুক্তিটি করায় খেপেছেন বেজোস। পেন্টাগনের বিরুদ্ধে ইউএস ফেডারেল কোর্টে মামলা করেছেন আমাজন।

আমাজন কর্তৃপক্ষের দাবি, ক্লাউড কম্পিউটিং সেবায় তারা মাইক্রোসফটের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন। তাই এই চুক্তি হওয়ার কথা ছিল তাদের সঙ্গে। কিন্তু পক্ষপাত দেখিয়ে ওই কাজ মাইক্রোসফটকে দেওয়া হয়েছে।

গত ২৫ অক্টোবর মাইক্রোসফটের সঙ্গে ১০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে পেন্টাগন। চুক্তির আওতায় আগামী দশ বছর পেন্টাগনের সঙ্গে ক্লাউড-কম্পিউটিং নিয়ে কাজ করবে মাইক্রোসফট।

আমাজনের একজন মুখপাত্র বলেন, মাইক্রোসফটকে ১০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি প্রদানে যে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া মানা হয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ ও পক্ষপাতমূলক। মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীকে স্পর্শকাতর প্রযুক্তি প্রদানে আমাজন ওয়েব সার্ভিসেসের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা দুটোই আছে। দেশের জন্যও চুক্তিটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

চুক্তির বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করার কথা আমাজন আগেই জানিয়েছিল।

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উড়িয়ে দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন তাদের কম্পিউটারব্যবস্থা উন্নত করে ‘ক্লাউড’নির্ভর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি ১০ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করবে। ‘জয়েন্ট এন্টারপ্রাইজ ডিফেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার (জেডি) ’ নামের ১০ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের মাধ্যমে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও বেশি সক্ষম করে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

চুক্তির বিষয়ে পেন্টাগন জানিয়েছে, সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ শেষে মাইক্রোসফটকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

মাইক্রোসফটের সঙ্গে পেন্টাগনের চুক্তির বিষয়ে আমাজন জানিয়েছে, তারা এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত। আমাজন বলছে, চুক্তির বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা হলে হয়তো ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসত।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর তাদের পুরোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা পরিবর্তন করে ক্লাউডভিত্তিক একক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায়। ধারণা করা হচ্ছে, জেডি প্রকল্পের মাধ্যমে মার্কিন সামরিক বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরও সহজে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে ঢুকতে পারবে।

চুক্তির আওতায় মাইক্রোসফট পেন্টাগনকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ ও অতি গোপনীয় সামরিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সেবাসহ আরও কিছু সেবা দেবে।

শুরু থেকে জেডি প্রকল্প পাওয়ার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল আমাজন। জেডি প্রকল্পে আমাজন যুক্ত হতে পারে—এমন সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে এই কোম্পানির বিরোধীরা সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তবে আমাজনের জেডিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে বড় সমালোচক ছিলেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্প ওই চুক্তির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। গত জুলাইয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তিনি আমাজন ও পেন্টাগনের চুক্তি-সম্পর্কিত অজস্র অভিযোগ পেয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, অন্যান্য কোম্পানি তাঁকে জানিয়েছে, ওই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে চুক্তি হতে চলেছে, তা যথেষ্ট স্বচ্ছ নয়। এ জন্য কোন প্রক্রিয়ায় চুক্তিটি হতে চলেছে, সেটি যাচাই করার জন্য তাঁর প্রশাসন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।

অতীতেও বেশ কয়েকবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক জেফ বেজসের সমালোচনা করেছেন।

এর আগে এই প্রকল্পে আগ্রহ দেখিয়েছিল গুগলও। তবে গত বছরের অক্টোবরে ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তির দৌড় থেকে সরে দাঁড়ায় মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের অধীনে থাকা গুগল। নৈতিক নীতিমালার সঙ্গে ওই প্রকল্প যায় না বলেই এ সিদ্ধান্ত নেয় গুগল।

গুগলের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালার সঙ্গে জেডি চুক্তি যায় কি না, তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এবং ওই চুক্তির কিছু অংশ আমাদের আওতার বাইরে।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গুগলের আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স সফটওয়্যার ব্যবহারের মূল বাধা হচ্ছে এটি অস্ত্র বা যেকোনো ক্ষতিকর সার্ভিসে ব্যবহার করা হলে তা মানবাধিকার ও নজরদারির আন্তর্জাতিক নীতির বিরুদ্ধে যাবে।

গুগল কর্তৃপক্ষ তাদের ক্লাউড ব্যবসাকে বাড়াতে ওই চুক্তি করতে আগ্রহী হয়েছিল। এতে গুগলের বিপণন কাজে আরও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু গুগলের হাজারো কর্মী তার বিরোধিতা করেন। গুগলের প্রযুক্তি যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে বা মানুষের ক্ষতির কাজে না লাগে, সে বিষয়ে জোর দেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। গুগল কর্মীদের বিরোধিতার মুখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে নিয়মনীতি ঠিক করে।