টাইম মেশিনে মহাবিশ্ব ভ্রমণ

রকেটে আমরা খুব দ্রুত মহাকাশ প্রদক্ষিণ করতে পারি। তাহলে এমন কোনো মেশিন কি আবিষ্কার করা যায় না, যা আমাদের আরও দ্রুত গতিতে মহাকাশ ভ্রমণের ব্যবস্থা করবে? তাহলে কত অজানা রহস্য আমরা জানতে পারতাম। যেমন, কয়েক লাখ বছর আগে পৃথিবীটা কেমন ছিল?

ধরা যাক, সেই সময় পৃথিবীতে একটা বিস্ফোরণ ঘটেছিল। সেই সময় বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি এখন কয়েক লাখ আলোকবর্ষ দূরে মহাশূন্যে রয়েছে। আমরা যদি কোনো টাইম মেশিনে মহাশূন্যের সেই বিন্দুতে চট করে পৌঁছে যেতে পারি, তাহলে সেই সময়ে পৃথিবীর বিস্ফোরণের চিত্র নিজ চোখে দেখতে পারতাম! কিন্তু এটা কখনো সম্ভব না। কারণ তাহলে সেই মেশিনকে আলোর গতির চেয়ে দ্রুত চলতে হবে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন প্রমাণ করেছেন, আলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে কোনো কিছু চলতে পারে না। তাই টাইম মেশিন কেবল বিজ্ঞান-কল্পকাহিনীতেই সম্ভব।

আলোর গতি সেকেন্ডে প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল। আর মানুষ রকেটে এখন পর্যন্ত সেকেন্ডে ৭ মাইলের মতো গতিতে চলতে পারে। তাহলে আলোর গতির চেয়ে বেশি তো নয়ই, কাছাকাছি যাওয়াও অনেক দূরের ব্যাপার।

‘সিরিয়াস’ নক্ষত্র, রাতের আকাশে উজ্জ্বল তারকা ‘ডগস্টার’, প্রায় ৯ আলোকবর্ষ দূরে। ধরা যাক আমরা এমন একটা টাইম মেশিনে ‘সিরিয়াস’ নক্ষত্রে গেলাম, যা আলোর গতির কাছাকাছি, অর্থাৎ ১০০ শতাংশ না হোক, ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৯ শতাংশ গতিতে চলতে পারে। আইনস্টাইনে তত্ত্ব অনুযায়ী এটা খাতা-কলমে সম্ভব, যদিও বাস্তবে এমন অবিশ্বাস্য গতির মেশিন প্রায় অসম্ভব। যা হোক, সেই মেশিনে সকালে রওনা দিয়ে ‘সিরিয়াস’ নক্ষত্রে বেড়িয়ে মাঝ রাতে ফিরে এলাম!

তাহলে এক মজার ঘটনা ঘটে যাবে। আমার বয়স মাত্র এক দিনেরও কম বাড়বে। কিন্তু এরই মধ্যে অন্যদের বয়স অন্তত ১৮ বছর বেড়ে যাবে। কারণ আলোর গতির কাছাকাছি চলার কারণে আমার হাতের ঘড়িতে সময় খুব ধীর গতিতে চলবে, অন্যদিকে পৃথিবীতে ব্যবহৃত ঘড়ির কাঁটা তুলনামূলক দ্রুত চলবে। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এটাই বলছে।

* আব্দুল কাইয়ুম: সম্পাদক, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা