কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ

অবরোধের কারণে দেশের অন্যতম দুধ উৎপাদনকারী এলাকা পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার খামারিরা উৎপাদিত দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খামারিদের কাছ থেকে দুধ কেনা বন্ধ রাখায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেচতে না পেরে খামারিরা স্থানীয় বাজারে প্রতি লিটার দুধ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে খামারিদের প্রতি লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা লোকসান হচ্ছে। এদিকে খামারিদের লোকসান হলেও সস্তায় দুধ মেলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে পিঠা-পায়েস খাওয়ার ধুম পড়েছে।
পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার বেড়া-সাঁথিয়াসহ কয়েকটি উপজেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান গরুর দুধ উৎপাদনকারী এলাকা। এ অঞ্চলের লক্ষাধিক খামারে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ লাখ লিটার দুধ উপাদিত হয়। উৎপাদিত দুধ মিল্ক ভিটা, আড়ং (ব্র্যাক), প্রাণ, ফার্মফ্রেশ, অ্যামোমিল্ক, আফতাব, রংপুর ডেইরিসহ কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে সারা দেশে বিক্রি করে থাকে।
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সূত্র জানায়, অবরোধের কারণে খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা দুধ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই সোমবার (৫ জানুয়ারি) বিকেল থেকে দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছে। অবরোধ উঠে না যাওয়া পর্যন্ত দুধ সংগ্রহ বন্ধ থাকবে বলে তারা জানায়।
প্রাণ ডেইরির পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শরিফ উদ্দিন তরফদার বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন প্রায় এক লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু অবরোধের কারণে কোথাও দুধ পাঠাতে না পারায় বাধ্য হয়ে দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
তবে ব্র্যাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রজেক্টের এলাকা ব্যবস্থাপক (বেড়া-সাঁথিয়া) গোবিন্দ কুমার দে জানান, তাঁরা খমারিদের কথা চিন্তা করে দুধ সংগ্রহ কমাননি। সংগ্রহ করা দুধ রাতের বেলা ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে খামারিরা জানান, প্রতিষ্ঠানে দুধ বিক্রি করতে না পেরে তাঁরা স্থানীয় বাজারে পানির দরে দুধ বেচতে বাধ্য হচ্ছেন। কোনো কোনো খামারি আবার আত্মীয়দের মধ্যেও দুধ বিলিয়ে দিচ্ছেন।
সাঁথিয়ার সোনাতলা গ্রামের খামারি ও দুধ ব্যবসায়ী ফজলু মিয়া বলেন, ‘গ্রামের খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহের চুক্তি আছে আমার। সংগ্রহ করা দুধ ও আমার নিজের খামারের দুধ মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার লিটার দুধ প্রাণ ডেইরি ও মিল্ক ভিটায় সরবরাহ করি। অবরোধের কারণে প্রতিষ্ঠান দুটি দুধ নেওয়া বন্ধ রাখায় মহাবিপদে পড়েছি। স্থানীয় বাজারে ২৫ টাকা লিটার দরেও সব দুধ বেচা যাচ্ছে না। এতে লিটারে ১৫ টাকারও বেশি লোকসান হচ্ছে।’
বেড়া-সাঁথিয়ার আট থেকে দশজন খামারি তাঁদের লোকসানের বিবরণ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দুগ্ধশিল্পকে হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রাখার আবেদন জানান।
এদিকে সস্তায় দুধ পেয়ে বেড়া-সাঁথিয়ার মানুষের মধ্যে দুদিন ধরে পিঠা-পায়েস খাওয়ার ধুম পড়েছে। এমনিতে স্থানীয় বাজারে প্রতি লিটার দুধ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও অবরোধের কারণে তা বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।
বেড়া পৌর এলাকার হাতিগাড়া মহল্লার এনামুল হক বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে আমাগরে মতো গরিব মানুষের পিঠা-পায়েস খাওয়ার সুযোগ হলেও খামারিগরে সর্বনাশ। এরম অবস্থাকেই হয়তো জ্ঞানী লোক “কারও পৌষ মাস আর কারও সর্বনাশ” বলে থাকেন।’