করোনাভাইরাস নিয়ে যে ১০ কাজ করবেন না

করোনাভাইরাস নিয়ে অনলাইনে ভুয়া তথ্যে বিশ্বাস করবেন না। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস নিয়ে অনলাইনে ভুয়া তথ্যে বিশ্বাস করবেন না। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী একটি বড় স্বাস্থ্যগত উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনো এর সঠিক নিরাময়ব্যবস্থা বের না হওয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত রোগকে ঘিরে অনেক জল্পনা চলছে। এ রোগে বিশ্বজুড়ে তিন হাজার মানুষ মারা গেছে। গত বছরে চীনের হুবেই প্রদেশে এ ভাইরাসের বিষয়ে প্রথম তথ্য জানানো হয়। এটি পরে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস নামে পরিচিত হয়ে ওঠে এবং চীনের বাইরে ৬০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে মানুষ নানা উপায় খুঁজছে। এ সুযোগে অনলাইনে অনেক ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। অনলাইনে করোনাভাইরাস নিয়ে যে ১০ কাজ করা যাবে না, তার তালিকা দেখে নিন:

১. করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর ফেস মাস্কের ব্যবহার বেড়েছে। এতে মাস্কের দাম ও চাহিদা বাড়তে দেখা গেছে। এ সুযোগ নিচ্ছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে অনলাইনে বিশেষ ফেস মাস্কের বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারিত হবে না। বিশেষ অফার, ছাড় বা অগ্রিম অর্থ দিয়ে মাস্ক কিনতে গেলে প্রতারিত হতে পারে। অনলাইনে ফেস মাস্ক কেনার আগে সাবধান থাকুন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস ঠেকাতে পারে—এমন কোনো বিশেষ মাস্ক এখনো তৈরি হয়নি। অনলাইনে যেসব বিজ্ঞাপন দেখেন, এর বেশির ভাগই ভুয়া।

২. অনেকেই এন৯৫ মাস্ককে সার্জিক্যাল মাস্কের চেয়ে ভালো বলে অনলাইনে দাবি করতে পারেন। এসব বিষয় পাত্তা দেবেন না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরিষ্কার করে বলেছেন, শুধু মাস্ক পরলেই করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত নয়। এ ভাইরাস এতটাই ক্ষুদ্র যে তা এস৯৫ মাস্কের ভেতর দিয়েও সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই অনলাইনে কোন মাস্ক সেরা, তা নিয়ে বিতর্কে না যাওয়াই ভালো।

৩. অনলাইনে করোনাভাইরাস সুরক্ষায় কোনো ওষুধের খোঁজ করবেন না বা কোনো ওষুধ অনলাইনে থেকে কিনবেন না। করোনাভাইরাস ঠেকানোর ওষুধ হিসেবে দাবি করা পোস্টগুলো ভুয়া। অনেক সময় অনলাইনে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী তেল, পানীয় বা নানা খাবারের কথা বলে বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হচ্ছে। এখনো যেহেতু করোনাভাইরাস ঠেকানোর নির্ভরযোগ্য কোনো ওষুধের কথা বলা হয়নি, তাই এসব পণ্যের ওপর ভরসা করবেন না। এগুলো অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল।

৪. সন্দেহজনক বা ক্লিকবেইট ওয়েবসাইটগুলোয় করোনাভাইরাস নিয়ে পোস্ট করা তথ্য পড়তে যাবেন না। এতে আপনি বিভ্রান্ত হবেন। অনেক সময় ভুয়া ও আজগুবি তথ্য দিয়ে আপনাকে সাইটে বেশিক্ষণ ধরে রাখার চেষ্টা করবে। এ ছাড়া নানা কৌশলে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। বিশ্বস্ত কোনো সাইট না হলে সেখানে ঢুকবেন না।

৫. করোনাভাইরাস শনাক্ত করার কথা বলে অনলাইনে বিভিন্ন টুল বা কিট বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন, এখন পর্যন্ত কোনো অফিশিয়াল টেস্ট কিট বাজারে আসেনি। তাই অনলাইনে করোনাভাইরাস শনাক্তের কিটের নামে যেসব বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে, তা ভুয়া। অনলাইনে বিক্রি হওয়া এসব কিট ভুয়া।

৬. করোনাভাইরাস নিয়ে আপনার হোয়াটসঅ্যাপে আসা কোনো বার্তা বিশ্বাস করবেন না। এমনকি টিকটক ভিডিওতেও বিশ্বাস করবেন না। সাইবার দুর্বৃত্তরা নানা উপায়ে আপনাকে এসব তথ্য ছড়াতে এবং বিশ্বাস করতে সাহায্য করবে। অনেক সময় আপনার ঘনিষ্ঠ কোনো বন্ধুর অ্যাকাউন্ট থেকেও এসব লিংক আসতে পারে। এসব লিংক মূলত স্প্যাম। এ ধরনের বার্তায় ক্লিক করলে আপনার অ্যাকাউন্ট বেহাত হতে পারে।

৭. এখন মানুষ ভিডিওতে আস্থা রাখে বেশি। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক ইউটিউবার এ সুযোগ নিয়ে ইউটিউবে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। তাই ইউটিউবার বা ভিডিও প্ল্যাটফর্মে অন্য কোনো প্রভাবশালী কারও পরামর্শ নেবেন না। এসব তথ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মনগড়া তথ্য হতে পারে। তাই চিকিৎসকের সামনাসামনি পরামর্শ ব্যতীত অনলাইনে কোনো বিশেষজ্ঞ দাবি করা ইউটিউবারের তথ্যে ভরসা রাখবেন না।

৮. করোনাভাইরাসের উপসর্গগুলো কেমন হতে পারে, এমন কোনো তথ্য অনলাইনে খুঁজবেন না। যদি অসুস্থ বোধ করেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাবেন। অনলাইনে করোনাভাইরাসের তথ্য দেওয়ার নামে অনেক প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। তাই এ ধরনের তথ্য খোঁজ করলে আপনাকে প্রতারকের খপ্পরে পড়তে হতে পারে।

৯. নিজে সচেতন থাকুন। ঝোঁকের বশে বা অধিক কৌতূহলী হয়ে করোনাভাইরাসসংক্রান্ত যাচাইহীন কোনো তথ্য সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করবেন না। মনে রাখবেন, আপনার শেয়ার করা তথ্য অন্যের জন্য ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কেবল যাচাই করা ও নির্ভরযোগ্য উৎসের তথ্যে আস্থা রাখুন।

১০. আপনার ই–মেইলে আসা প্রলুব্ধকর বা করোনাভাইরাসসংক্রান্ত কোনো মেইল থেকে সাবধান থাকুন। ফিশিং মেইল পাঠিয়ে সাইবার দুর্বৃত্তরা আপনার কৌতূহলের সুযোগ নিতে পারে। অনলাইন মেইলে পাঠানো লিংকে ক্লিক করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন। এ–সংক্রান্ত কোনো জরিপ, ফরম পূরণ বা তথ্য দেওয়ার আগে সচেতন থাকুন। সাইবার দুর্বৃত্তরা করোনার নামে ম্যালওয়্যার ছড়াচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নামে কোনো মেইল এলেও তা প্রকৃত উৎস থেকে আসা মেইল কি না, তা প্রেরকের মেইল ঠিকানা ভালোভাবে দেখে নিশ্চিত হন। তথ্যসূত্র: গ্যাজেটস নাউ