বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নাম ব্যবহার করছে সাইবার অপরাধীরা

অপরাধীরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচওর নাম ও পরিচয় ব্যবহার করছে।
অপরাধীরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচওর নাম ও পরিচয় ব্যবহার করছে।

অর্থ, ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য চুরির উদ্দেশ্যে অপরাধীরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচওর নাম ও পরিচয় ব্যবহার করছে। সম্প্রতি করোনা বা কোভিড-১৯ নামের ভাইরাসের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মহামারি দেখা দিয়েছে। প্রত্যেকেই এই বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য জানা ও বর্তমান অবস্থা যাচাইয়ের চেষ্টা করছেন। এই সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সাইবার অপরাধী চক্রও সক্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, এই বিষয়–সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানতে পারলে প্রথমেই বিশ্বাস করে প্রচার ও প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগে যেন তথ্য যাচাই করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যা যা করবে না—
• ব্যক্তিগতভাবে নিরাপদ আছেন কি না জানার জন্য কখনোই কোথাও লগ–ইন করতে বলবে না
• ই–মেইলের মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ফাইল সংযুক্তি (অ্যাটাচমেন্ট) পাঠাবে না
• www.who.int ছাড়া অপর কোনো ওয়েবসাইট দেখতে বলবে না
• চাকরি, সম্মেলন বা হোটেল বুকিংয়ের জন্য অর্থ দাবি করবে না
• লটারি, পুরস্কার, সনদ পাওয়ার বার্তা পাঠাবে না
• সরাসরি কোনো অনুদানের জন্য অনুরোধ করবে না
• তারা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে তাদের সতর্ক করছে না
আতঙ্কিত হওয়া যাবে, তবে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকের সতর্কতা প্রয়োজন। কারণ, সাইবার অপরাধীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ই–মেইল, মেসেঞ্জার, মোবাইল ফোনকল, এসএমএস বার্তা, এমনকি ফ্যাক্সের মাধ্যমেও নানা ধরনের প্রতারণামূলক তথ্য প্রচার করছে। এসব ক্ষেত্রেই তথ্যগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পাঠিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এভাবে অন্য কারও পরিচয় ব্যবহার করে ই–মেইল বা অন্যান্য পদ্ধতিতে যোগাযোগ করাকে ফিশিং বলা হয়। ফিশিং সাধারণত ই–মেইলের মাধ্যমে হয়ে থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও এমন ঘটনা জানা যাচ্ছে।

তথ্য চুরি ও পাচারের জন্য হ্যাকাররা যা যা করছে
ফিশিংয়ের মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য যেমন বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করতে বলছে। জনপ্রিয় বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্যসূত্র রয়েছে উল্লেখ করা হয়, যদিও সেই ওয়েবসাইটগুলো মূল ওয়েবসাইটের অবিকল কপি।
ই–মেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাটাচমেন্ট পাঠানো হচ্ছে, যেগুলো মূলত কম্পিউটার ভাইরাস।

নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করে এই ধরনের ব্যক্তিগত ক্ষতি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব:
ই–মেইল ঠিকানা যাচাই করুন: যে ঠিকানা থেকে ই–মেইল এসেছে তা দেখে নিন, বিশেষত @ চিহ্নের পরের অংশটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। who.int কেবল মূল ওয়েবসাইট। তবে ‘@who.com’, ‘@who.org’ অথবা ‘@who-safety.org’ ঠিকানাগুলো ভুল।
ওয়েবসাইট দেখা: কোনো লিংকে ক্লিক করার আগে দেখে নিন। লিংকটি (https://www.who.int) থেকে শুরু হতেও পারে, তবে সেখানে ক্লিক করলে হয়তো অপর কোনো সাইট খুলতে পারে। সবচেয়ে ভালো হলো (www.who.int) ঠিকানাটি ব্রাউজারে লিখে সরাসরি ওয়েবসাইটি খুলে সেখান থেকে তথ্য জেনে নেওয়া।
ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার আগে ভাবুন: বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে কখনো হয়তো আপনার ব্যক্তিগত তথ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন হতে পারে। তবে সেটি বর্তমানের এই ভাইরাস–সংক্রান্ত কোনো কিছুর জন্য নয়। তবে প্রয়োজন যেমনই হোক, কখনোই তথ্য উল্লেখ করার ক্ষেত্রে ইউজারনেম/ই–মেইল ও পাসওয়ার্ড লিখতে হবে না।
তাড়াহুড়া করবেন না: বিশেষ জরুরি অবস্থার উদ্ভব হয়েছে এবং আপনার নিরাপত্তার জন্য তথ্য প্রয়োজন, অপরাধীরা এমন উল্লেখ করতে পারে। এটি সত্য নয়। জরুরি অবস্থা হয়ে থাকলে স্থানীয় সরকার মূল দায়িত্ব পালন করবে, নির্দিষ্ট ব্যক্তির থেকে তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হবে না।
তথ্য শেয়ার করে থাকলেও আতঙ্কিত হবেন না: আপনি যদি আগেই এমন কোনো পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত তথ্য, ইউজারনেম/ই–মেইল ও পাসওয়ার্ড শেয়ার করে থাকেন, তবু আতঙ্কিত হবেন না। যেসব অ্যাকাউন্টের তথ্য শেয়ার করেছেন, সেগুলোর পাসওয়ার্ড পুনর্নির্ধারণ করুন।
রিপোর্ট করুন: আপনি যদি এমন কোনো অবস্থার সম্মুখীন হয়ে থাকেন, তবে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানান। ওয়েব ঠিকানা: (www.who.int/about/who-we-are/contact-us)। 
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা