নিউইয়র্কে করোনার প্রকোপ বেশি কেন?

নিউইয়র্কে ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন প্রবাসী বাংলাদেশির করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মর্মান্তিক খবরটি শুনে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ড. আবদুল্লাহকে ফোন করি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার কথা। এর আগের কয়েক দিনেও বেশ কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে আমাদের একজন আত্মীয় পর্যন্ত আছেন। আবদুল্লাহ ভাই আইবিএমের স্টেশনপ্রধান ছিলেন। এখন অবসরে। থাকেন নিউইয়র্কেই। কেন্দ্র থেকে দেড় ঘণ্টা দূরে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করি, আমেরিকায় এত উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা, সেখানে কেন করোনায় এত মৃত্যু সইতে হচ্ছে? অথচ খোদ বাংলাদেশে সন্দেহভাজন ১০০ থেকে ১৫০ জনকে পরীক্ষা করে অন্তত এখন পর্যন্ত দিনে দু–একজনের বেশি করোনায় আক্রন্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। কোনো কোনো দিন হয়তো একজনও করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়নি।

বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার এখন পর্যন্ত কম। কত দিন কম থাকবে, বলা যায় না। দেখতে হবে। আমরা যদি সাবধান না থাকি, তাহলে তো দ্রুত করোনা ছড়িয়ে পড়বেই। কিন্তু আজ পর্যন্ত তো বলতে হয় তুলনামূলক কম। অথচ নিউইয়র্কের অবস্থা কাহিল কেন?

আবদুল্লাহ ভাই বললেন, নিউইয়র্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর মানুষ আসেন। তাই সেখানে ঝুঁকি বেশি ছিল। তারপরও নিউইয়র্কের গভর্নর ফেডারেল সরকারের কাছে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভেন্টিলেটর চেয়েও পাননি। তা ছাড়া ফেডারেল সরকার এর আগে নিউমোনিয়া, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগের বিস্তার যেভাবে ঘটেছে, তার অভিজ্ঞতার আলোকে করোনার প্রজেকশন করে চিকিৎসার কথা চিন্তা করেছে। এখানে হয়তো কিছু গরমিল হয়েছে।

গতকাল প্রচারিত বিভিন্ন খবরে জানা গেছে, লোকজনও এবং সেই সঙ্গে প্রবাসী বাঙালাদেশিরাও ছিল প্রথম দিকে বেশ উদাসীন। লকডাউন কড়াকড়িভাবে কার্যকর হয়নি। এ কারণে নিউইয়র্কে সংক্রমণ বেশি হয়েছে। চিকিৎসায় সামাল দেওয়াও কঠিন হয়েছে।

স্বাভাবিক অবস্থায় হাসপাতালে একটা ভেন্টিলেটর একজন রোগীর জন্য হয়তো এক দিন বা দুদিনের বেশি সময় লাগত না। কিন্তু এখন একজন রোগীর জন্য পাঁচ থেকে সাত দিন ধরে একটি ভেন্টিলেটর আটকে থাকছে। এ কারণে চিকিৎসায় সমস্যাও হচ্ছে। অবশ্য এটা এখন কেটে যাচ্ছে।

এখন এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে যে এপ্রিলের প্রথম দুই সপ্তাহ খুব ক্রিটিক্যাল। করোনার প্রকোপ অনেক বাড়তে পারে। এমনকি যদি লকডাউন ঢিলেঢালাভাবে চলে, বহুল প্রচারিত স্বাস্থ্যবিধিগুলো যদি মেনে চলা না হয়, তাহলে আমেরিকায় নাকি মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ থেকে দুই লাখও হয়ে যেতে পারে। এটা তো ভয়াবহ।

তাই নিউইয়র্কসহ আমেরিকার অন্যান্য রাজ্যে পুরো এপ্রিল মাস পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য এখান থেকে আমরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেব। যদি আমাদের দেশেও কোয়ারেন্টিন বা লকডাউন মানতে না পারি বা না চাই, যদি ঢিলেঢালা ভাব আসে, তাহলে নিউইয়র্কের মতো দুর্ভাগ্য আমাদেরও হতে পারে।

* আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক