প্লাস্টিকের বোতল এখন সহজেই ধ্বংস হবে

প্লাস্টিক বোতল। ছবি: রয়টার্স
প্লাস্টিক বোতল। ছবি: রয়টার্স

প্লাস্টিকের পণ্য আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে। সেই প্লাস্টিক নিয়ে সুখবর দিলেন ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্লাস্টিক ভেঙে ফেলে তা পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। তাঁরা কম্পোস্ট করা পাতা থেকে খোঁজ পাওয়া একটি এনজাইম এ কাজে ব্যবহার করছেন।

ফ্রান্সের কারবায়োস নামের একটি কোম্পানি প্লাস্টিক ভাঙার পদ্ধতিটির আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছে। তারা ইতিমধ্যে পেপসি ও এল ওরিয়েলের সঙ্গে যৌথভাবে এ উপাদান শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার পরিকল্পনা করেছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ উপাদানটি শিল্প খাতে ব্যবহারের উপযোগী করে উৎপাদন করবে তারা।

কারবায়োসের উপপ্রধান নির্বাহী মার্টিন স্টেফান যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে বলেছেন, ‘বাজারে আমরা প্রথম কোম্পানি হিসেবে নতুন প্রযুক্তিটি আনছি। ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে বাজারে আনার লক্ষ্য আমাদের।

গত এক দশকে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল। নতুন এই আবিষ্কার এ সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দাবি করছেন উদ্ভাবকেরা।

ফ্রান্সের তুলুস ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার বা রিসাইক্লিং করার বিষয়েও প্রয়োগ করছেন। প্লাস্টিক অবশ্য সরাসরি রিসাইকেল করা যায়। প্লাস্টিকের ধরনের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন উপকরণ ও তাপমাত্রায় প্লাস্টিক ভাঙা হয়। অনেক প্লাস্টিক রিসাইকেল করা গেলেও তার বাজারদর কম থাকায় তা রিসাইকেল করা হয় না।

গবেষণা–সংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার’ সাময়িকীতে। গবেষকেরা বলেছেন, সবচেয়ে পরিচিত প্লাস্টিক পলি (ইথিলিন টেরেফথ্যালেট) বা পিইটি তাপ দিলে বা রিসাইকেল করতে গেলে এর অধিকাংশ রাসায়নিক কার্যকারিতা হারায়। নতুন উপাদান তৈরি করতে গেলে বর্জ্য বাড়তে থাকে।

নতুন উদ্ভাবিত এনজাইমটি ১০ ঘণ্টার মধ্যে কমপক্ষে ৯০ শতাংশ ডি-পলিমারাইজেশন সম্পন্ন করতে পারে। অর্থাৎ, এটি পলিমার বা বড় আকারের জটিল কণাকে ক্ষুদ্র কণায় রূপান্তর করতে পারে এক দিনেরও কম সময়ে। এটি জৈব ডিপলিমারাইজড প্লাস্টিকে রূপ নেয়, যা প্লাস্টিক বোতলের মতো প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কো-এনজাইম সংশ্লেষিত হতে পারে, সংস্থাগুলো আরও সাশ্রয়ী পুনর্ব্যবহারযোগ্য অবকাঠামো তৈরি করতে পারে। এতে কম খরচে রিসাইকেল করা প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করা যেতে পারে।

কারবায়োস সাধারণভাবে অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিকের ফিল্ম সমস্যার সমাধান করতে শুরু করেছে। ইউরোপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জোট বেঁধে ‘কারবায়োলিস’ নামে গত বছরে প্লাস্টিক কম্পোট করে দেখিয়েছিল। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, প্লাস্টিক ফিল্ম ও একবার ব্যবহৃত ব্যাগ সমস্যার সমাধান করা।

কারবায়োসের কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমাদের এই উদ্ভাবনের লক্ষ্য হচ্ছে বাজার উপযোগী অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান, যা একই সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক ও পরিবেশবান্ধব। এটা প্লাস্টিক ও টেক্সটাইলের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।’