পৃথিবীর খুব কাছেই যে ব্ল্যাকহোল

পৃথিবীর নিকটতম একটি কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজ পাওয়া গেছে। ছবি : রয়টার্স
পৃথিবীর নিকটতম একটি কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজ পাওয়া গেছে। ছবি : রয়টার্স

দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকালে টেলিস্কোপিয়াম নক্ষত্রপুঞ্জের ওপরের দিকে নীল আলোক বিন্দু চোখে পড়ে। আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রসদৃশ এ আলোকবিন্দু মূলত কাছাকাছি কক্ষপথে আবর্তনরত দুটি নক্ষত্র, যার সঙ্গী হিসেবে রয়েছে আমাদের পৃথিবীর খুব কাছের একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল। বুধবার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্প্রতি অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস সাময়িকীতে এই গবেষণাবিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকেরা বলছেন, নতুন আবিষ্কৃত কৃষ্ণবিবরটি আমদের সৌরজগৎ থেকে ১ হাজার ১১ আলোকবর্ষ দূরে। এটি এইচআর ৬৮১৯ সৌরমণ্ডলে অবস্থিত। অদৃশ্য এ বস্তুটি দুটি দৃশ্যমান নক্ষত্রের মধ্যে আটকে রয়েছে। এটি সূর্যের ভর থেকে প্রায় চার গুণ ও পরবর্তী ব্ল্যাকহোলের থেকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ আলোকবর্ষ কাছাকাছি বলে ধারণা করা হয়।

বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী করিম আল-বাদরি বলেন, মনে হচ্ছে এটি চোখের সামনেই লুকিয়ে ছিল। আশির দশক থেকে উজ্জ্বল এ নক্ষত্রটি নিয়ে গবেষণা করা হলেও এতে অবাক করার মতো কিছু বিষয় লুকিয়ে ছিল।
পৃথিবীর নিকটতম কৃষ্ণবিবর বলা হলেও মানব স্কেলে, এক হাজার আলোকবর্ষ এক বিশাল দূরত্ব। তবে যদি মিল্কিওয়ে ছায়াপথকে স্কেল ধরা হয়, তবে সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব চুল পরিমাণ আর ওই কৃষ্ণবিবরের দূরত্ব দাঁড়ায় চার কিলোমিটার। তবে মহাবিশ্বের বিশালতা বিবেচনায় যা এক লাখের বেশি আলোকবর্ষ জুড়ে রয়েছে, এইচআর ৬৮১৯ পৃথিবীর বেশ কাছাকাছি।

গবেষকেরা দীর্ঘদিন ধরে ধারণা করেছেন যে মিল্কিওয়ে কয়েক মিলিয়ন ব্ল্যাকহোলের আবাসস্থল। কিন্তু তা খুঁজে পাওয়া কঠিন। গবেষকেরা এর পার্শ্ববর্তী বস্তুর মাধ্যাকর্ষণ প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে এর অবস্থান বের করেন।

ব্ল্যাকহোল কী
ব্ল্যাকহোল হলো এমন একটি জায়গা, যেখানে কোনো কিছু প্রবেশ করলে আর ফিরে আসে না। এমনকি আলোও এই গহ্বরকে অতিক্রম করতে পারে না।
গর্ত বলে পরিচিত হলেও ব্ল্যাকহোলের মধ্যে কিন্তু পুরোটা ফাঁকা জায়গা নয়। বরং এর মধ্যে খুব অল্প জায়গায় এত ভারী সব বস্তু আছে যে এসবের কারণে তীব্র মহাকর্ষীয় শক্তি উৎপন্ন হয়।
ব্ল্যাকহোলের পেছনে ‘ইভেন্ট হরাইজন’ নামের একটি স্থান আছে, যাকে বলা হয় ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’। এই জায়গায় মহাকর্ষীয় শক্তি এতটাই তীব্র যে এখান থেকে কোনো কিছুই আর ফিরে আসতে পারে না।