ভ্যাকসিন কেবলই ধাঁধার একটি অংশ: জনসনের সিইও

জনসন অ্যান্ড জনসনের প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স গোরস্কি। ছবি: রয়টার্স
জনসন অ্যান্ড জনসনের প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স গোরস্কি। ছবি: রয়টার্স

করোনা ঠেকাতে ভ্যাকসিন তৈরির পেছনে ছুটছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আশা করা যাচ্ছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী বছরের শুরুতে কোনো ভ্যাকসিন চলে আসতে পারে। এ ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে শামিল হয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান জনসন অ্যান্ড জনসন (জেঅ্যান্ডজে)। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ কোভিড-১৯ এর ১০০ কোটি ডোজ তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অ্যালেক্স গোরস্কি গতকাল বুধবার সতর্ক করেছেন, যতই ভ্যাকসিন আসুক না কেন, সমাজকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তা যথেষ্ট হবে না।


ফরচুন সাময়িকী আয়োজিত ব্রেইনস্ট্রম হেলথ ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে গোরস্কি বলেছেন, 'অনেক গল্পকথা থাকতে পারে। আমরা যে মুহূর্তে ভ্যাকসিন পাব, জীবন তখন আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে—এমন কথা বলা হতে পারে। এ কথা ভেবে আমরা করমর্দন করে আবার আগের জীবনে ফিরে যাব, এমন কল্পনাও করতে পারেন অনেকেই। তবে আমি তা মনে করি না। এ ক্ষেত্রে তা ঘটার সম্ভাবনা কম।'


গোরস্কি বলেন, ইতিবাচক ছবি হচ্ছে, আগামী বছরের শুরুতেই বেশ কিছু ভ্যাকসিন প্রার্থী থাকবে। তবে সঠিক শিক্ষা ও বিতরণ পদ্ধতি এই ভ্যাকসিনগুলো যথাযথ জায়গায় সরবরাহের জন্য প্রয়োজন হবে। যে কাজের জন্য ৫ থেকে ৭ বছর সময় লাগে, তা ৫ থেকে ৭ মাসের প্রচেষ্টায় করে ফেলাকে অভূতপূর্ব বলে মনে হচ্ছে। বিশ্বকে আগে কখনো এত বিশাল আকারে ও এতটা জটিল কিছু করার প্রচেষ্টার মধ্যে যেতে হয়নি। এ কারণেই আমি ভ্যাকসিনকে মনে করি মহামারির পরিসমাপ্তি টানতে খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, একটি ধাঁধার অংশ।


জনসন অ্যান্ড জনসনের সিইও বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে কথা হলেও থেরাপিউটিক্স, হসপিটাল সিস্টেম প্রটোকল বা হাসপাতালের নিয়মকানুন, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার মতো বিষয়গুলো এখনো অনেক প্রয়োজনীয় বিষয়। এসবকিছুর যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল ভাইরাসকে নির্মূল করা সম্ভব হবে।


জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন সম্পর্কে গোরস্কি বলেন, তাঁরা সম্প্রতি ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত সংস্করণ নির্বাচন করে ফেলেছেন। সামনের দিনগুলোতে তাঁরা এর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাবেন। এরপর আগামী কয়েক প্রান্তিকে তাঁরা এ ভ্যাকসিনটির কয়েক লাখ ডোজ উৎপাদন শুরু করবেন এবং ২০২১ সালের মধ্যে কয়েকশ কোটি ডোজ তৈরি করবেন।


জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিনটি দাতব্য ভিত্তিতে উৎপাদনের চেষ্টা করছেন। তবে গোরস্কি কয়েকটি কোম্পানির আর্থিক লাভের জন্য এ প্রচেষ্টা চালানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, ২০০ টির বেশি কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরির জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এত দ্রুত সময়ে ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা সম্ভব হচ্ছে কারণ এক্ষেত্রে ব্যাপক গবেষণা, উন্নয়ন ও বিনিয়োগ হয়েছে। উদ্ভাবনের জন্য পুরস্কার এমন পরিবেশ বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ এখন। তবে তিনি এখন যেভাবে কোম্পানি, সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগগুলোর মধ্যে অংশীদারত্ব, সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময়ের মাত্রা দেখছেন তা আগে দেখেননি।


গোরস্কি আশা প্রকাশ করেন, আমরা এখন যে শিক্ষাটা পাচ্ছি, সে সহযোগিতার পাঠ যেন ভবিষ্যতেও চালু থাকে। এটাই দীর্ঘমেয়াদে এ শিল্পখাত ও স্বাস্থ্য সেবা সিস্টেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।