মহামারিতে কার্বন নিঃসরণ রেকর্ড পরিমাণ কমেছে

লকডাউন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বা ২ দশমিক ৫ গিগাটন কমেছে। ছবি: রয়টার্স
লকডাউন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বা ২ দশমিক ৫ গিগাটন কমেছে। ছবি: রয়টার্স

মানব ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্বে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ রেকর্ড পরিমাণ কমেছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশে দেশে অচলাবস্থার কারণেই এই অগ্রগতি বলে নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, লকডাউন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বা ২ দশমিক ৫ গিগাটন কমেছে। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনির একদল বিজ্ঞানী ৩৮টি অঞ্চল ও ২৬টি সেক্টরের অবস্থা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই গবেষণা করেন। গবেষণাটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী প্লস ওয়ানে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকেরা বলেছেন, বিশ্বে সূক্ষ্ম ধূলিকণা দূষণ কমেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্য দুই ধরনের বায়ুদূষণ কমেছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। কার্বন নিঃসরণ সবচেয়ে কমেছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে। এই কমার কারণ হচ্ছে, বিমান চলাচল, জ্বালানি শক্তি, পানি ও গ্যাসের ব্যবহার কমে যাওয়া।

গবেষণার সহলেখক অরুনিমার মতে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত গবেষণায় পাওয়া গেছে, বিশ্বে মোট কর্মীর ৪ দশমিক ২ শতাংশ অর্থাৎ ১৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষ পূর্ণকালীন কাজ হারিয়েছেন। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মহামন্দার পর থেকে বিশ্ব অর্থনীতি এতটা বড় ধরনের ধাক্কা আর কখনো খায়নি। এই অর্থনৈতিক মন্দা কার্বন নিঃসরণ কমাতে ভূমিকা রেখেছে। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভরশীল জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর। ফলে অর্থনীতিতে স্থবিরতা মানে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমা। এই জীবাশ্ম জ্বালানির অতিশয় ব্যবহারের কারণেই বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়ে।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তিমতে, ২০৫০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা ১ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে রাখা। করোনাকালে ব্যাপকভাবে কার্বন নিঃসরণ কমলেও ওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আরও কাজ করতে হবে। গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি প্রতিবছর বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমা অব্যাহত থাকে, তারপরও ওই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো যাবে না। জলবায়ু সংকটের ভয়াবহ প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সীমিত রাখতে ২০২০ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর আরও ৩ শতাংশ করে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। তাই চুক্তির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর আশা খুবই সীমিত।