করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টি-সেল

আমরা লক্ষ করেছি, অনেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুব বেশি কাবু হন না। আমরা বলি মৃদু লক্ষণ ছিল। তাঁরা দু-চার দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যান। অথচ তাঁদের দেহে কোভিড-১৯–এর রোগ প্রতিরোধক (অ্যান্টিবডি) ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়নি। কারণ, টিকা তো এখনো বাজারে আসেনি। আবার ওরা আগে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তও হননি। তাই তাঁদের করোনাভাইরাসের প্রতিরোধক থাকার কথা নয়। তাহলে কেন করোনাভাইরাস তাঁদের কাবু করতে পারে না? এর কারণ হতে পারে তাঁদের দেহে অন্য ধরনের কোনো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে। রক্তের বিশেষ ধরনের শ্বেতকণিকা, টি-সেল এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। টি-সেল হলো একধরনের ‘ইমিউন সেল’, যা দেহে বহিরাগত আক্রমণাত্মক প্যাথোজেন চিহ্নিত ও ধ্বংস করতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় এটা দেখা গেছে।

গত ২০ জুলাই প্রকাশিত বিবিসি ফিচারে টি-সেলের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগে থেকেই গবেষকেরা রক্তের বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষা করে টি-সেলের উপস্থিতি লক্ষ করেছেন, যা কোভিড-১৯–এর বহিরাবরণের উপস্থিতি শনাক্ত করতে সক্ষম। এই গুণ ওরা এখন করোনাভাইরাসের মহামারির সময় কাজে লাগতে পারে। টি-সেলগুলোর বহিরাবরণের প্রোটিন সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসূচক। এর লাখ লাখ সংস্করণ থাকতে পারে, যা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য খুঁজে বের করতে সক্ষম। কোনো রোগের সংক্রমণের কারণে রক্তে সৃষ্ট টি-সেল অনেক বছর টিকে থাকে। দেখা গেছে, পরীক্ষায় একজনের দেহে হয়তো কোভিড-১৯–এর অ্যান্টিবডি নেগেটিভ, কিন্তু টি-সেল পজিটিভ। এই টি-সেলই হয়তো কোভিড-১৯ সহজে ধ্বংস করতে পারে।

এ থেকে ধারণা করা যায়, কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই কারও কারও দেহে কিছু মাত্রায় রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা রয়েছে। এ ধরনের টি-সেল অনেকের দেহে রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

অবশ্য এটাও দেখা গেছে, সুনির্দিষ্ট টি-সেল থাকা সত্ত্বেও অনেকে করোনাভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর কারণ হয়তো এই যে কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে টি-সেলগুলো ভূমিকা রাখতে পারে না। এ নিয়ে আরও গবেষণা দরকার।

টিকা আবিষ্কারে অগ্রগতি
বেশ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অক্সফোর্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে বলে আমরা শুনছি। আবার রাশিয়া দাবি করেছে যে খুব দ্রুতই তাদের পরীক্ষিত টিকা ব্যবহার করা যাবে। চীনও তাদের টিকা পরীক্ষার প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমরা ধরে নিতে পারি, অল্প সময়ের মধ্যেই হয়তো বিশ্ববাসী করোনাভাইরাস প্রতিরোধের টিকা পাবে। এর চেয়ে বড় সুখবর আর কী হতে পারে।

টিকা আবিষ্কার হলেও অবশ্য আমাদের দেশের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হয়তো সময় লাগবে। তবে গেটস ফাউন্ডেশনসহ বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান দ্রুত সবার কাছে, বিশেষভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য টিকা সহজলভ্য করার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের অন্তত ৫০ থেকে ৬০ ভাগ মানুষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী হয়ে উঠলে এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আমরা সেই সুদিনের অপেক্ষায়।

ঈদের পর
দেশে করোনা পরিস্থিতি ভালোর দিকে ফিরছে কি না, তা এখনো সুনিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। গত কয়েক দিনের হিসাব অনুযায়ী আক্রান্তের হার এবং সে তুলনায় মৃত্যুহার গড়ে প্রায় একই অবস্থানে রয়েছে। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই কমতে শুরু করবে। কিন্তু পবিত্র ঈদুল আজহার সময় আবার প্রচুর মানুষ গ্রামের বাড়িতে যেভাবে গেছে, স্বাস্থ্যবিধি যেভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়েছে, তাতে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি আবার খারাপের দিকে যেতে পারে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এমনকি পরিস্থিতি উন্নত হতে থাকলেও ঘরের বাইরে সবার সব সময় মুখে মাস্ক পরতে হবে এবং কিছুক্ষণ পরপর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি তো মানতে হবেই। এই জীবনধারা কিন্তু আরও অনেক দিন পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। না হলে সারা বছর ধরেই আমাদের ঝুঁকির মুখে থাকতে হবে।

আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]