কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর: ইলন মাস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে সতর্ক করেছেন ইলন মাস্ক। ছবি: রয়টার্স
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে সতর্ক করেছেন ইলন মাস্ক। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক দীর্ঘদিন ধরেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের বিপদ নিয়ে সতর্ক করে আসছেন। অবশ্য তাঁর মতের বিরোধী লোকেরও অভাব নেই। তবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপদ নিয়ে যাঁরা সন্দেহ পোষণ করেন তাঁদের জন্য মাস্কের বার্তা হচ্ছে, তাঁরা নিজেদের যতটা চালাক ভাবে তারা ততটা চালাক নন।

ব্যবসা ও প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী, এর আগেও মাস্ক সতর্ক বলেছিলেন পারমাণবিক যুদ্ধের চেয়েও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিপজ্জনক হতে পারে। তাঁর অন্যতম উদ্বেগ হচ্ছে, এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানব কর্মীর জায়গা নিয়ে নেবে। এ ছাড়াই স্কাই নেটের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একসময় সিদ্ধান্ত নেবে মানুষের আর কোনো প্রয়োজন নেই।

বিজনেস ইনসাইডারকে মাস্ক বলেছেন, ‘এক দশক ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপদের কথা বলে যাচ্ছি।’

নতুন করে মাস্ক সতর্ক করে বলেছেন, যেসব স্মার্ট লোক মনে করে তাদের যন্ত্র কখনো বোকা বানাতে পারবে না তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। তাদের পথে আসা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোনো চাতুরী থেকে সুরক্ষার প্রভাব কমাচ্ছে।

বিজনেস ইনসাইডারকে মাস্ক বলেছেন, এআই কোথায় যাচ্ছে সে সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ জানানো উচিত। যারা বেশি স্মার্ট তাদেরই এআই নিয়ে বেশি ভুল করতে দেখি। কারণ তারা ভাবতে পারে না, তাদের চেয়ে কম্পিউটারের বুদ্ধি বেশি হতে পারে। তাদের যুক্তির এখানেই বড় ত্রুটি। তারা নিজেদের যতটাই স্মার্ট ভাবে আসলে তারা তার চেয়ে বোকা বেশি।

মাস্ক অনেক সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে এমন সব কথাবার্তা বলেন যাতে অনেকেই সমর্থন করেন না। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গোপন গবেষণার বিপদ নিয়ে কথা বলেন। তবে তিনি সতর্ক করার পাশাপাশি এর সমাধানের পথও দেন। তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ ও এআই উন্নয়নের দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। তা না হলে আপত্তিজনক বা দায়িত্বহীন প্রযুক্তির বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা দিতে আমরা ব্যর্থ হব।

এর আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে মাস্কের সঙ্গে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গের বাদানুবাদও হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ইলন মাস্ক আর মার্ক জাকারবার্গের অবস্থান বরাবরই বিপরীতমুখী।

ফেসবুক লাইভে এক ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে মার্ক বলেন, যাঁরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তাঁরা আসলে দায়িত্বজ্ঞানহীন। নাম উল্লেখ না করলেও তাঁর এ বক্তব্য সরাসরি ইলন মাস্কের বিরুদ্ধেই যায়। অন্যদিকে কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই টুইটারে মাস্ক পাল্টা লেখেন, এ বিষয়ে (এআই) মার্ক জাকারবার্গের জ্ঞান খুবই সীমিত।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করলেও এর পরিণতি মানব সম্প্রদায়ের বিপক্ষে যাবে বলে প্রায়ই শঙ্কা প্রকাশ করেন ইলন মাস্ক। এআই নিয়ে আইন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এমনকি সভ্যতার বিপক্ষে একে সবচেয়ে বড় হুমকি বলেও উল্লেখ করেছেন।

সম্প্রতি এআই নিয়ে জাকারবার্গ ও মাস্কের বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছেন ফেসবুকের এআই বিভাগের প্রধান জেরোম প্রেজেন্তি। তিনি মাস্ককে টুইট করে এআই নিয়ে কম ধারণা রাখেন বলে খোঁচা দেন। কিন্তু মাস্ক কি টুইটারে খোঁচা খেয়ে দমার পাত্র? তিনি পাল্টা জবাবে দুই শব্দেই যা বলার বলে দিয়েছেন। মাস্ক লিখেছেন, ফেসবুক সাকস। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি ফেসবুককে লেইম বা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন।

মাস্কের মতে, এআই-এর কারণে চাকরির ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপর্যয় আসতে পারে আর রোবট সবকিছু আমাদের চেয়ে ভালোভাবে করতে সক্ষম হবে। মানব সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই একটি মৌলিক ঝুঁকি-এমন মন্তব্যও করেছেন তিনি।

জেরোম টুইটে লেখেন, আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইনটেলিজেন্সের (এজিআই) মতো কোনো জিনিস নেই এবং আমরা মানব বুদ্ধিমত্তার ধারেকাছেও যেতে পারিনি।

জাকারবার্গ আর জেরোমের মতো যাঁরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করার পরও এর বিপদ সম্পর্কে খোলাখুলি সব কথা বলেন না তাদেরই একহাত নিয়েছেন টেসলার প্রধান নির্বাহী।