সাধারণ সর্দির টিকাও আসছে

মানুষের ফুসফুস কোষে রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস কণা (নীল রং)। ছবি: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের সৌজন্যে
মানুষের ফুসফুস কোষে রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস কণা (নীল রং)। ছবি: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের সৌজন্যে

করোনার টিকা কবে আসবে, সে প্রতীক্ষায় রয়েছে বিশ্ব। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান করোনার টিকা তৈরিতে জোরালো চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যেই সাধারণ সর্দি সৃষ্টিকারী ভাইরাসপ্রতিরোধী টিকা নিয়ে সুখবর শোনালেন বিজ্ঞানীরা।

‘দ্য জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজেস’ সাময়িকীতে এই গবেষণাবিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।

গবেষকদের দাবি, সাধারণ সর্দি সৃষ্টিকারী অন্যতম প্রধান রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে, এমন একটি টিকার পরীক্ষা চালিয়ে সফল হয়েছেন তাঁরা। টিকা পরীক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ২০২৪ সাল নাগাদ টিকা বাজারে আসতে পারে। ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গবেষকেরা বলেন, রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাসটি এত সংক্রামক যে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ ২ বছর বয়সের মধ্যেই এর সংক্রমণের শিকার হয়েছে। এটি সাধারণত সর্দির উপসর্গ দেখায়, তবে তা শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে মারাত্মক অসুস্থতা তৈরি করতে পারে। বিশ্বজুড়ে শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা সৃষ্টির জন্য ভাইরাসটি দায়ী। এখন পর্যন্ত এটি প্রতিরোধে কার্যকর কোনো টিকা নেই।

জার্মান কোম্পানি বাভারিয়ান নরডিক সাধারণ সর্দি সৃষ্টিকারী ভাইরাসটি প্রতিরোধে সক্ষম ‘এমভিএ-বিএন-আরএসভি’ নামের টিকাটি তৈরি করেছে। তারা আশা করছে, কয়েক বছরের মধ্যেই টিকাটি তারা বাজারে আনতে পারবে। তার আগে টিকাটি তৃতীয় ধাপের মানব পরীক্ষায় যাবে। এরপর তা মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য অনুমোদন নেবে।

টিকাটির প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা মূলত এর নিরাপত্তা ও ডোজ নির্ধারণের জন্য করা হয়েছিল। এ ধাপের পরীক্ষায় এর কার্যকারিতা নিয়ে ইতিবাচক ফলও পাওয়া গেছে। তবে প্রতিরোধী ক্ষমতা ঠিক করার জন্য এ ধরনের পরীক্ষার আকার ও বিস্তৃতি যথেষ্ট নয়।

এ টিকার গবেষণার জন্য ৫৫ বছরের অধিক ৪২০ জনকে টিকার প্রথম ডোজ প্রয়োগে ব্যাপক প্রতিরোধী সক্ষমতা ও এর নিরাপত্তার দিকটি দেখা হয়েছে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে টিকা ও অন্য ওষুধ দিয়ে করা এ পরীক্ষায় টিকা দেওয়ার ফলে যে টি সেলের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তা ছয় মাসের বেশি স্থায়ী হয়েছে। এরপর টিকা গ্রহণকারীদের বুস্টার দেওয়ার পর আরও উন্নত প্রতিরোধী সক্ষমতা দেখা গেছে। যাঁরা একটি বা দুটি ডোজই পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অন্য ওষুধের তুলনায় অ্যান্টিবডির স্তর ৫৬ সপ্তাহ পর্যন্ত বেশি স্থায়ী হয়েছে। এ টিকার উচ্চ ডোজের একটি একক ইনজেকশনে টি সেলের প্রতিক্রিয়া অনেক দিন থাকবে বলে দাবি করছেন গবেষকেরা।

গবেষকেরা বলেন, আরএসভি ভাইরাসটি আমাদের প্রতিরোধী ক্ষমতাকে ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে থাকতে পারে। অর্থাৎ, প্রাপ্তবয়স্করা বারবার সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হতে পারেন। যখন মৃদু সর্দি-কাশির উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে, তখন শরীরের দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে আরএসভি আক্রমণ করে। এ টিকা কার্যকর প্রমাণ হলে তা প্রতিবছর শ্বাসনালির সংক্রমণে আক্রান্ত ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে স্বস্তি দেবে। প্রতিবছর ৬০ হাজার শিশুর জীবন রক্ষা পাবে। তাই এ নিয়ে আশাবাদী হওয়া চলে।

গবেষকেরা আগামী বছর ১২ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর টিকাটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালাবেন। বাভারিয়ান নরডিকের গবেষকেরা বলছেন, টিকাটি বিস্তৃত প্রতিরোধী ক্ষমতার যে সম্ভাবনা দেখিয়েছে, তাতে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষাতেও তাঁরা সফল হবেন বলে আশাবাদী।