করোনা নিয়ে ৭০ লাখ ভুয়া পোস্ট সরাল ফেসবুক

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন এ তিন মাসে ফেসবুক ৭০ লাখ করোনাভাইরাসসংক্রান্ত ভুয়া তথ্য সরিয়ে ফেলার কথা বলেছে। এর মধ্যে করোনাসংক্রান্ত ভুয়া প্রতিরোধী পদক্ষেপ, অতিরঞ্জিত করোনা সারানোর ওষুধের মতো পোস্টও ছিল।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক সম্প্রতি তাদের ‘ষষ্ঠ কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস এনফোর্সমেন্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে। ফেসবুক প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে ভুয়া কনটেন্ট ঠেকাতে ব্যবস্থা না নেওয়ার সমোলাচনার জবাবে ২০১৮ সাল থেকে তাদের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করে ফেসবুক।

ফেসবুকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ সপ্তাহে তারা তৃতীয় পক্ষের কাছে ফেসবুকের প্রতিবেদনে ব্যবহৃত বিভিন্ন মেট্রিকসগুলো অডিটের জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করবে। ২০২১ সাল থেকে এ অডিট শুরু হবে। সম্প্রতি ফেসবুকে ঘৃণ্য বক্তব্য নিয়ে ব্যবস্থা না নেওয়ার প্রতিবাদে বিজ্ঞাপন বন্ধ কর্মসূচি চালাচ্ছে অনেক ব্র্যান্ড। তাদের সঙ্গে আলোচনায় ফেসবুক এ অডিটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

ফেসবুক তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ঘৃণ্য বক্তব্য হিসেবে ২ কোটি ২৫ লাখ কনটেন্ট তারা সরিয়েছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে ৯৬ লাখ কনটেন্ট বেশি সরিয়েছে তারা। এ জন্য ঘৃণ্য কনটেন্ট শনাক্তকরণ ব্যবস্থার উন্নতির কথা বলেছে তারা।

ফেসবুকের দাবি, তারা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ৮৭ লাখ কনটেন্ট সরিয়েছে, যা বছরের প্রথম প্রান্তিকে ছিল ৬৩ লাখ।

ফেসবুকের পক্ষ থেকে অবশ্য তাদের প্ল্যাটফর্মে ঘৃণ্য বক্তব্যের প্রসবার ঠেকাতে পরিবর্তন আনার কথা বলেনি। তাই ব্যবহারকারীর অধিকার রক্ষার গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফেসবুক প্রতিবেদন দিয়ে কনটেন্ট সরানোর কথা বললেও তার কোনো অর্থ দাঁড়ায় না। ফেসবুক বলছে, গত এপ্রিল মাস থেকে কনটেন্ট পর্যালোচনার জন্য তারা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ওপর অধিক নির্ভরশীল। এ সময় করোনা পরিস্থিতিতে ফেসবুকের অফিসে পর্যালোচনাকারী অনেক কম উপস্থিত ছিলেন।

ফেসবুকের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ফেসবুক কনটেন্ট পর্যালোচনাকারী কম থাকায় গত প্রান্তিকে আত্মহত্যা বা নিজের ক্ষতি ও শিশু নিপীড়নের মতো কনটেন্টগুলোর ক্ষেত্রে কম পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে। ফেসবুকের কর্মকর্তা গাই রোজেন বলেন, যেসব গ্রাফিক কনটেন্ট পোস্ট করা হয় তা বাড়ি বসে সম্পাদনা করা কঠিন। ফেসবুক তাদের ঘৃণ্য বক্তব্যবিষয়ক নীতিমালা বিস্তৃত করছে।

ফেসবুক সম্প্রতি সমালোচনার মুখে পড়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোস্টের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে। ওই পোস্টে দাবি করা হয়েছে, শিশুরা প্রায় করোনাপ্রতিরোধী। ফেসবুক ওই পোস্ট মুছে দিয়ে বলেছে, কোভিডসংক্রান্ত ক্ষতিকর তথ্য এতে যুক্ত হয়েছে।

এর আগে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়োপোলিসে পুলিশের হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড নিহত হওয়ার পর বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীদের হুমকি দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘লুটপাট চালালে গুলি শুরু হবে।’ টুইটটি সহিংসতায় উসকানিমূলক উল্লেখ করে টুইটার কর্তৃপক্ষ সেটি সতর্কবার্তা দিয়ে ঢেকে দিয়েছিল।

তবে ফেসবুক ট্রাম্পের ওই পোস্টের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে নানা মহল যখন তীব্র সমালোচনায় মুখর, তখন জাকারবার্গ বলেছিলেন, ফেসবুক ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পোস্ট অপসারণ বা ঢেকে দেবে না। এটা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার সঙ্গে যায় না।

বিবিসি বলছে, সার্বিক পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে যায় ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এখন থেকে সম্ভাব্য ক্ষতিকর পোস্টে তারা বিশেষ লেবেল বা বার্তা লাগিয়ে দেবে। তবে সংবাদ হিসেবে গুরুত্ব থাকায় তা ছেড়ে দিতে হবে তাদের।

ঘৃণ্য বক্তব্য নিয়ে ফেসবুক কোনো ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ফেসবুক নেতৃত্বের ওপর খেপে গিয়ে আন্দোলন শুরু করে সিভিল রাইটস ও অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপগুলো। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন বর্জনের জন্য #স্টপহেটফরপ্রফিট আন্দোলনের ডাক দেয়। ইতিমধ্যে ৫০০ বিজ্ঞাপনদাতা ফেসবুক থেকে সরে গেছে।