হাড়ের খবর নিতে চান জাকারবার্গ

এমআরআই স্ক্যান নিয়ে গবেষণা করছে ফেসবুক।
ফেসবুকের সৌজন্যে

অনেকেই ফেসবুককে কেবল সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট হিসেবেই ধরে নেন। ব্যক্তিগত নানা তথ্য শেয়ার ও যোগাযোগের জন্য এ সাইটে দীর্ঘ সময় কাটান। ফেসবুক কিন্তু ফোনের একটি মাত্র অ্যাপ হিসেবে বসে নেই; প্রতিনিয়ত নানা শাখা বিস্তার করে চলেছে। সম্প্রতি তেমনই একটি শাখার কথা জানা গেল, যা মানুষের হাড়ের খবর পর্যন্ত নিতে পারবে।
ফেসবুকের প্রকাশ করা এক ব্লগ পোস্টে বলা হয়, তারা নতুন একটি উদ্যোগ নিয়েছে, যা চিকিৎসা খাতে ব্যবহার করা যাবে। এমআরআই স্ক্যানে থাকবে তাদের প্রশিক্ষিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই)।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জ জানিয়েছে, ফেসবুকের ফেয়ার নামের এআই গবেষণা শাখা দুই বছর ধরে অনেকটাই নীরবে যুক্তরাষ্ট্রের এনওয়াইইউ ল্যাংগোন হেলথ সেন্টারের চিকিৎসকদের সঙ্গে নতুন অ্যালগরিদম তৈরিতে কাজ করছে। একে তারা নাম দিয়েছে ‘ফাস্টএমআরআই’। এটি মূলত এমআরআই করার সময় কমাতে বিশেষভাবে তৈরি করা অ্যালগরিদম। প্রচলিত এমআরই করতে গেলে যন্ত্রের মধ্যে রোগীকে দীর্ঘক্ষণ থাকতে হয়। কিন্তু ‘ফাস্টএমআরআই’ এ সময় কমপক্ষে চার গুণ কমিয়ে দেবে। এ পদ্ধতিতে কেবল হাড়ের কয়েকটি ছবি তোলার প্রয়োজন পড়বে।
ফেসবুক ও ল্যাংগোন হেলথের গবেষকেরা একটি মেশিন লার্নিং মডেলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যাতে কম ও বেশি রেজল্যুশনের এমআইস্ক্যানকে যুক্ত করা যায়।

গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতির ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় বিশ্বাসযোগ্যতা পাওয়া গেছে। তাঁরা রেডিওলজিস্টদের দিয়ে প্রচলিত এমআরআই ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত এমআরই ব্যবহার করে রোগীর হাঁটুর স্ক্যান করান।

এ পদ্ধতিতে চূড়ান্ত এমআরআই স্ক্যানের একটি পূর্বাভাস দিতে পারে। এতে তথ্যের কম ইনপুট দিয়েও দ্রুতগতিতে স্ক্যান সেরে ফেলা যাবে। এতে রোগীর কষ্ট কমবে এবং দ্রুত রোগ শনাক্ত করা যাবে।
প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ফেয়ারের এআই গবেষক নাফিসা ইয়াকুবোভা বলেন, মেডিকেল ইমেজিংয়ের সঙ্গে এআই যুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এটি। কম তথ্য ব্যবহার করেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে স্ক্যান করার পদ্ধতিতে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে।
রেডিওলজির অধ্যাপক ড্যান সডিকসন বলেন, ‘এতে যে নিউরাল নেট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, তা মেডিকেল ইমেজের পুরো কাঠামো সম্পর্কে ধারণা রাখে। কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট রোগীর তথ্য অনন্য উপায়ে আমরা পূর্ণ করতে পারি।’
ফাস্টএমআরআই টিম দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি তাদের গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘আমেরিকান জার্নাল অব রোয়েন্টজেনোলজি’ সাময়িকীতে।

গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতির ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় বিশ্বাসযোগ্যতা পাওয়া গেছে। তাঁরা রেডিওলজিস্টদের দিয়ে প্রচলিত এমআরআই ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত এমআরই ব্যবহার করে রোগীর হাঁটুর স্ক্যান করান। প্রতিবেদন বলে, দুটি পদ্ধতিতেই চিকিৎসকেরা রোগ সম্পর্কে হুবহু ধারণা পান। চিকিৎসকেরা যা চান, সবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত এমআরআই পদ্ধতিতে দেখতে পেয়েছেন।
গবেষকেরা বলছেন, তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য হচ্ছে প্রযুক্তিটি হাসপাতালে যুক্ত করা, যাতে এটি রোগীদের সাহায্য করতে পারে। তাঁরা দ্রুত এটি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তাঁরা যে প্রশিক্ষণ তথ্য ও মডেল তৈরি করেছেন, তা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ও প্রচলিত এমআরআই স্ক্যানে প্রয়োগ করা যাবে। এতে নতুন কোনো হার্ডওয়্যার লাগবে না। যারা এ ধরনের স্ক্যানার তৈরি করে, তাদের সঙ্গে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে আলোচনা চলছে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এমআরআই গবেষণা দলের প্রধান কারিন সুমেলি বলেন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এটি সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি। ভবিষ্যতে এআইয়ের ব্যবহার আরও বাড়বে।