চলছে ডিজিটাল মহাযজ্ঞ

তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থার একটা চিত্র পাওয়া যাবে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে৷ ছবি: খালেদ সরকার
তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থার একটা চিত্র পাওয়া যাবে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে৷ ছবি: খালেদ সরকার

আয়োজনের নাম ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড৷ তাই প্রযুক্তির চমক সর্বত্রই৷ আছে বিশালত্বও৷ বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটাও এখন সত্যি৷ তারই কিছু নমুনা দেখা যাচ্ছে এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৪ মেলায়৷ ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে এই আয়োজন শুরু হয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে, ৪ মে থেকে৷ শেষ হবে আগামীকাল ৭ মে৷
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর আয়োজক৷ সহায়তা করছে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বিসিসি৷ আয়োজকদের নাম দেখলেই বোঝা যায় যে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত উদ্যোগ। মেলার প্রধান প্রকল্প কর্মকর্তা রাসেল টি আহমেদ বললেন, ‘আগের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ছিল সম্পূর্ণ সরকাির প্রয়াস। অপর দিকে সফটএক্সপো ছিল বেসরকারি উদ্যোগ। এবার ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে আয়োজন করায় অনেক বড় আকারের হয়েছে৷ এ মেলায় দুই ধরনের দর্শক আসছেন। এক, যঁারা প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ও সেবা কিনতে আগ্রহী। আর দুই, যারা নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।’

সৌরবিদ্যুতে চলবে এই নৌ​কা ও রিকশা
সৌরবিদ্যুতে চলবে এই নৌ​কা ও রিকশা

মেলায় যা আছে
প্রযুক্তিবিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা এবং দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিপণ্যের প্রদর্শনী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের মূল লক্ষ্য। সেই সাথে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চিন্তা–ভাবনা ভাগাভাগি করে নতুন কিছু জানা ও উন্নয়নের ক্ষেত্র খুঁজে বের করাও এই আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য। এ সবকিছু মাথায় রেখে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৪-এর কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল আয়োজনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে—প্রদর্শনী এবং সেমিনার ও বিভিন্ন কর্মশালা। এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড কনফারেন্সে প্রযুক্তিপণ্যের চারটি প্রদর্শনী আছে—বেসিস সফটএক্সপো, ই-গভর্ন্যান্স এক্সপো, মোবাইল ইনোভেশন এক্সপো এবং আইটি জব ফেয়ার।
দেশীয় সফটওয়্যার নির্মাতা ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতাদের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী সফটএক্সপো এবার হচ্ছে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের সঙ্গেই। ১৫০টি প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা ও পন্য প্রদর্শন করবছ৷ ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষপের প্রদর্শনী এবং দেশের প্রযুক্তি খাতে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার প্রতিফলন ই-গভর্ন্যান্স এক্সপো। দেশের ৯৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ই-গভর্ন্যান্স এক্সপোতে তাদের ই-সেবা প্রদর্শন করছে। স্মার্টফোনে আমরা সচরাচর বিদেশি অ্যাপ চালিয়ে অভ্যস্ত। আমাদের দেশি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নির্মাতা এবং তাদের অ্যাপস মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য আয়োজন করা হয়েছে মোবাইল ইনোভেশন এক্সপো৷ এতে আছে ২৫টি প্রতিষ্ঠান।
বুধবার উদ্বোধনের পর মেলা খুলে দেওয়া হয় সবার জন্য৷ গিয়ে দেখা গেল সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মেলায় আসছেন তথ্যপ্রযুক্তিতে তরুণ পেশাজীবীরাও। তাঁদের মধ্য থেকে যোগ্যতম কর্মীকে নিজের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়ার জন্য মেলায় আছে নয়টি প্রতিষ্ঠান। আইটি জব ফেয়ারে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার সুযোগ থাকছে, আর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে মেলার শেষ দিনে, এমনটাই জানা গেল।
প্রদর্শনী ছাড়াও মেলার চার দিনই থাকছে দিনভর নানা সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন। দেশি-বিদেশি প্রায় ১৩০ জন বিশেষজ্ঞ বক্তা বক্তৃতা করবেন এই সেমিনারগুলোতে।

.
.

প্রযুক্তির চমক
‘ওয়েলকাম টু ফিউচার বাংলাদেশ’—ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবেশের পর বড় করে এই লেখাটায় প্রথম চোখ পড়ে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশের প্রদর্শনীই যেন এটি। সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবেশের আগেই চোখে পড়ে মাঝারি আকারের এক নৌকা। জলের নৌকা ডাঙায় দেখে অবাক হয়ে এগিয়ে গেলাম, সঙ্গে একটা রিকশাও দেখা গেল। জানা গেল, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগ এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের একদল শিক্ষার্থী তৈরি করেছেন এই নৌকা ও রিকশা। কথা হলো ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দুই শিক্ষার্থী খোশনূর বিনতে জাহাঙ্গীর ও ফারহান আনানের সঙ্গে। নৌকা ও রিকশা যেমন চলে, চলবে তেমনই। তবে শক্তি জোগাবে সৌরবিদ্যুৎ। সৌরবিদ্যুৎ বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়, নতুনত্ব হলো নৌকায় এর ব্যবহার। হলিউডের অ্যানিমেটেড ছবি ওয়াল-ইতে দেখানো রোবটের আদলে তারা তৈরি করেছে খুদে এক রোবট, যা বিভিন্ন কাজ করতে পারে, নাম দিয়েছে বাংলা ওয়াল-ই।
মেলা প্রাঙ্গণে বসানো হয়েছে একটা হলোগ্রাফিক মনিটর৷ এর কাচের ভেতরে যেকোনো ছবি চুতর্দিক থেকেই দেখা যায়৷ নিবন্ধন কার্ডেও আছে প্রযুক্তির ব্যবহার৷ প্রতিটি কার্ডে কিউআর (কুইক রেসপন্স) সংকেত যোগ করে দেওয়া হচ্ছে৷ এই সংকেতে থাকছে দর্শকের নানা তথ্য৷ 
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় আছে গ্রে মার্কেটিং সার্ভিসেস৷ গ্রে সূত্রে জানা গেল এ আয়োজন উপলক্ষে নতুন কিছু প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটানো হয়েছে৷ যা দর্শকদের আকর্ষণ করবে৷

হলোগ্রাফিক মনিটর নজর কাড়ছে
হলোগ্রাফিক মনিটর নজর কাড়ছে

আছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও
মেলায় বাংলাদেশ পুলিশের স্টল রয়েছে। দায়িত্বে থাকা একজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা এসেছেন প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে মানুষকে পুলিশি সেবা দেওয়া যায় এবং নিরাপত্তার স্বার্থে অনলাইনে বাংলাদেশ পুলিশ কীভাবে সাহায্য করতে পারে তা প্রদর্শন করতে৷ 
এ ছাড়া আইসিটি বিভাগের স্টলে যৌথভাবে প্রদর্শিত সিভিল ড্রোন ও রোবটে আগ্রহ দেখাচ্ছেন দর্শকেরা৷ ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের’ স্টলটিও আগ্রহ নিয়ে দেখছেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা।
দর্শনার্থীদের মধ্যে তরুণদের প্রাধান্য দেখা গেলেও এটা সব বয়সের মানুষের মিলনমেলা। নতুন প্রযুক্তির স্বাদ পেতেই এসেছেন তাঁরা। বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সিস্টেম অ্যানালিস্ট গোলাম মোস্তফা জানালেন, ‘সরকার এবং মানুষের মধ্যে প্রযুক্তিগত মেলবন্ধন ঘটানোর জন্যই এই আয়োজন।’ 
আগামীকাল শেষ দিনে মেলা সকাল ১০টা থেকে

রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে৷

পাশে দাঁড়িয়ে ছবি
পাশে দাঁড়িয়ে ছবি

ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৪ আয়োজনে অংশীদার হিসেবে আছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, অ্যামটব, বাক্য, সিটিও ফোরাম, বিডব্লিউআইটি ও বিআইজেএফ।
তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিব তুলতে পারবেন৷ অবাক হচ্ছেন? কিংবা বিল গেটস, স্টিভ জবস বা মার্ক জাকারবার্গের মতো বিখ্যাত মানুষদের সঙ্গে? মাদাম তুসোর জাদুঘরে মোমের তৈরি বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা অনেকের ছবি আমরা দেখি৷ কিন্তু এখানে ফাঁকা বোর্ডের একটা পটভূমিতে ছবি তুললেই চলবে৷ আমরা খালি চোখে যা দেখতে পাই, তার সঙ্গে কম্পিউটারে তৈরি কৃত্রিম ছবি দেখানোর প্রযুক্তির নাম অগমেন্টেড রিয়ালিটি, মানে বাস্তবতার সঙ্গে বাড়তি কিছুর যোগ৷ ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে এই প্রযুক্তির প্রদর্শনী মেলায় এনেছে নতুন মাত্রা। মোবাইল অ্যাপে কিউআর কোড স্ক্যান করে আপনি দাঁড়িয়ে গেলে পাশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বসিয়ে দিতে পারবেন এই বিখ্যাত মানুষদের ছবি। মোবাইল অ্যাপ সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত থাকায় সাথে সাথে ছবিগুলো পেয়ে যাবেন পাশে থাকা কম্পিউটারে। গ্রামীণফোনের সৌজন্যে দেখানো হচ্ছে এ প্রযুক্তি৷