বিদায় নকিয়া, বিদায় উইন্ডোজ ফোন!

মাইক্রোসফটের তৈরি উইন্ডোজ ফোন লুমিয়া ৮৩০
মাইক্রোসফটের তৈরি উইন্ডোজ ফোন লুমিয়া ৮৩০

এ বছরের এপ্রিলে নকিয়ার মোবাইল ফোন বিভাগকে কিনে নিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। এরপর গত কয়েক মাসে ফিনল্যান্ডের স্মার্টফোন নির্মাতা নকিয়া ব্র্যান্ডের অধীনেই স্মার্টফোন বাজারে ছেড়েছে মাইক্রোসফট। তবে শিগগিরই নকিয়া ব্র্যান্ডের অধীনে স্মার্টফোন তৈরির পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডারে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
সম্প্রতি মাইক্রোসফটের পরিকল্পনা বিষয়ে তথ্য ফাঁস হয়েছে গিক অন গ্যাজেটস নামের প্রযুক্তিবিষয়ক একটি ব্লগে। ফাঁস হওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, শিগগিরই নকিয়া ব্র্যান্ডিং ও উইন্ডোজ ফোন নামটি বাদ দেবে মাইক্রোসফট।
সম্প্রতি নকিয়া ব্র্যান্ডিংয়ে মাইক্রোসফট ঘোষিত ‘লুমিয়া ৮৩০’ ও ‘লুমিয়া ৭৩০’ হতে পারে সর্বশেষ উইন্ডোজ ফোন।
মাইক্রোসফট আরও কিছুদিন তাদের আসন্ন ফোনগুলোতে ‘লুমিয়া’ নামটি ব্যবহার করবে কিন্তু তা হবে শুধু মাইক্রোসফটের ব্র্যান্ডিংয়েই। এ ছাড়া ‘উইন্ডোজ ফোন’ শব্দ দুটি থেকে ‘ফোন’ শব্দটিও বর্জন করবে মাইক্রোসফট।
ভবিষ্যতে মাইক্রোসফটের তৈরি ফোনগুলোর বিজ্ঞাপন ও প্রচারের ক্ষেত্রে ‘উইন্ডোজ ফোন’ ব্যবহারের পরিবর্তে শুধু উইন্ডোজ লোগোটিকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, উইন্ডোজ ফোন অপারেটিং সিস্টেমকে (ওএস) বিদায় জানানোর পরিকল্পনা করছে মাইক্রোসফট। এর অংশ হিসেবে নকিয়া ব্র্যান্ডিংকে বাদ দেওয়া ও উইন্ডোজকে প্রাধান্য দেবে তারা। মাইক্রোসফট বর্তমানে স্মার্টফোনের ওএস ও ডেস্কটপের ওএসকে একসঙ্গে করে নতুন অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করছে। অর্থাৎ, ডেস্কটপ, ট্যাব বা ফোনে উইন্ডোজের একই সংস্করণ ব্যবহার করা যাবে।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জের বিশ্লেষক টম ওয়ারেন দাবি করেন, গিক অন গ্যাজেটস ব্লগে ফাঁস হওয়া মাইক্রোসফটের পরিকল্পনার তথ্য সঠিক এবং তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিত।

পিসি, ট্যাব আর স্মার্টফোনের জন্য উইন্ডোজ ৮, উইন্ডোজ আরটি, উইন্ডোজ ফোন সফটওয়্যার—এই তিনটি আলাদা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে মাইক্রোসফট। কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে মাইক্রোসফটের ডিভাইস বিভাগের প্রধান জুলি লারসন গ্রিন ইউবিএস গ্লোবাল টেকনোলজি সম্মেলনে বলেন, মাইক্রোসফট ভবিষ্যতে উইন্ডোজের জন্য শুধু একটি প্ল্যাটফর্মই রাখবে। অর্থাৎ উইন্ডোজের সব প্ল্যটফর্মকে একীভূত করে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে উপস্থাপন করবে মাইক্রোসফট।

মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ প্রধান টেরি মেয়ারসনও জুলি লারসন গ্রিনের মন্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। এ বছরের জুলাই মাসে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলাও উইন্ডোজ একীভূত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, মাইক্রোসফট তাদের সব অপারেটিং সিস্টেমকে একত্র করে একটি একক উইন্ডোজ প্ল্যাটফর্মের দিকেই যাচ্ছে। মাইক্রোসফট তৈরি করছে একটি অ্যাপ স্টোর, যেখানে একটি অ্যাপ স্টোরের মধ্যেই উইন্ডোজের সব অ্যাপ্লিকেশন পাবেন ব্যবহারকারীরা। মাইক্রোসফটের একীভূত অ্যাপ স্টোর থেকে উইন্ডোজনির্ভর সব পণ্যের জন্য অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করার সুবিধা থাকবে। এ ছাড়া মাইক্রোসফটের বিভিন্ন সার্ভিস ও সফটওয়্যারকে উইন্ডোজ ৯ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করতে কাজ করছে মাইক্রোসফট।

জুলি লারসন গ্রিনের তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের ভবিষ্যৎ, নিরাপত্তা, পণ্যের ব্যাটারি লাইফ ও খরচের কথা মাথায় রেখে উইন্ডোজের নতুন সংস্করণ তৈরির দিকে যাচ্ছে মাইক্রোসফট। উইন্ডোজ নিয়ে পরিকল্পনার পাশাপাশি উইন্ডোজনির্ভর স্মার্টওয়াচ, স্মার্টগ্লাসের মতো পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্য বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে মাইক্রোসফট।