বাংলাদেশ যে দুটি ক্ষেত্রে ১ নম্বর হতে পারে

বিপিও সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। ছবি: সংগৃহীত
বিপিও সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অন্তত দুটো ক্ষেত্রে বিশ্বে এক নম্বর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। একটি হলো ক্রিকেট, আরেকটি তথ্যপ্রযুক্তি। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক আউটসোর্সিং নিয়ে দুই দিনের বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের (বাক্য) উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত বিপিও সামিট গতকাল শেষ হয়েছে। সমাপনী অনুষ্ঠান ও সিএক্সও নাইটে (চিফ এক্স অফিসার) প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, আমাদের তরুণদের স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্নহীন বা গন্তব্যহীন জাতি কোনো দিন ভালো করতে পারে না। বর্তমান সরকার আইসিটি খাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবে রূপ দেওয়াই সরকারের লক্ষ্য। সরকার আইসিটি খাতে তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলছে। আমি স্বপ্ন দেখি অল্প দিনের মধ্যেই আমরা বাংলাদেশ থেকে মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগলের মতো তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারব।
আইসিসির সাবেক সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, তিনি ক্রিকেট নিয়ে কখনো আপস করেননি। বাংলাদেশের ক্রিকেট একেবারে শূন্য থেকে আজ এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছে, যা নিয়ে আমরা গর্ব করি। আমার চোখে বাংলাদেশের সম্ভাবনার জায়গায় ক্রিকেটের পরই আছে তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে তরুণদের এগিয়ে নিতে তাদের সাহায্য করতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কখনো ব্যর্থ হয় না। এ দেশের মানুষ প্রাণশক্তিতে ভরপুর। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ একদিন সাফল্যের স্বর্ণশিখরে উঠে যাবে। আমাদের তরুণদের সাহায্য করতে পারলে তারা দেশকে সে জায়গায় পৌঁছে দেবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, তরুণদের প্রযুক্তিক্ষেত্রে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে হবে। কারণ তারাই ভবিষ্যৎ। তরুণেরা এগিয়ে না এলে দেশ এগিয়ে যাবে না। প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার ছেলে মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির বাজারে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। চাকরি প্রত্যাশিত ব্যক্তিদের আইটিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে গড়ে তুলতে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে সরকার এক কোটি মানুষের কাজের ব্যবস্থা করতে চায়।
বাক্যর সভাপতি আহমাদুল হক বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বিপিও খাত থেকে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার লক্ষ্যে এ আয়োজন। প্রথমবারের মতো এ আয়োজনে আমরা সফল। এখন থেকে নিয়মিতভাবে এ ধরনের আয়োজন হবে।
৯ ডিসেম্বর বিপিও সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সরকারের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সেবা এখন ডিজিটাল। ডিজিটাল সেবায় বাংলাদেশ যত দূর এগিয়েছে, এটা ছয় বছর আগে চিন্তাও করা যেত না। ২০০৮ সালেও দেশে বিপিও বলতে কিছু ছিল না। আমি আশা করি, আগামী কয়েক বছরে বিপিওসহ সফটওয়্যার খাত থেকে যে রপ্তানি আয় হবে, তা গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে। আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ৩০ হাজারের বেশি স্নাতক পর্যায়ের তরুণ-তরুণীকে আইসিটি খাতের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণেরা কেবল চাকরিই করবে না, তারা বিপিও, আইসিটি ইত্যাদি খাতের উদ্যোক্তা হিসেবেও আবির্ভূত হবে।’
বিপিও সম্মেলনে যোগ দিতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা খাতের সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যালায়েন্স-উইটসার সভাপতি সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ ঢাকায় আসেন। মেক্সিকান বংশোদ্ভূত গুতিয়ারেজ বলেন, ‘২০০০ সালেও বিপিও থেকে মেক্সিকোর রপ্তানি ছিল মাত্র ৫০ মিলিয়ন ডলার। এখন তা ছয় বিলিয়ন ডলার হয়েছে। মেক্সিকো যদি এটা পারে, বাংলাদেশও পারবে। এটা কোনো স্বপ্ন নয়