এআই–নির্ভর ভবিষ্যতের জন্য বর্তমান কম্পিউটার যথেষ্ট নয়: স্যাম অল্টম্যান

স্যাম অল্টম্যানছবি: সংগৃহীত

প্রযুক্তির অগ্রগতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যত এগোচ্ছে, বর্তমান কম্পিউটার যন্ত্রপাতি যে এই যুগের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না, এ ধারণা ততই স্পষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি এমনই মন্তব্য করেছেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান।

ভাই জ্যাক অল্টম্যানের পডকাস্টে অংশ নিয়ে স্যাম অল্টম্যান বলেন, ‘বর্তমানে ব্যবহৃত কম্পিউটার তৈরি হয়েছিল এমন এক সময়ে, যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্বই ছিল না।’ অবশ্য কিছুদিন আগেও তিনি মনে করতেন, এআই বিপ্লবের জন্য নতুন ধরনের কোনো যন্ত্রের দরকার হবে না। সে সময় তিনি বলেন, ‘মানুষ বিদ্যমান যন্ত্র দিয়েই খুশি থাকবে।’ তবে এবার তার অবস্থান পাল্টেছে। অল্টম্যান এখন মনে করছেন, ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ব্যবস্থায় সফল হতে হলে আমাদের প্রয়োজন এমন যন্ত্র, যা হবে আরও কনটেক্সট সচেতন, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এবং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত জীবনধারার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত।

অল্টম্যানের ভাষায়, ‘আমরা এমন যন্ত্রের দিকে এগোচ্ছি, যেগুলো ব্যবহারকারীর জীবন ও পরিবেশ সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন থাকবে।’ এই উপলব্ধি অবশ্য অল্টম্যানের একার নয়। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাইও জানিয়েছেন, কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা এজিআইয়ের মতো উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মডেল পরিচালনার জন্য বর্তমানে ব্যবহৃত কম্পিউটার হার্ডওয়্যার যথেষ্ট নয়। বিশ্লেষকদের মতে, এআই এখন যে গতিতে উন্নত হচ্ছে, তাতে কেবল সফটওয়্যার উদ্ভাবন দিয়ে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। জটিল মডেল চালানোর জন্য যন্ত্রকে হতে হবে আরও দক্ষ, প্রাসঙ্গিক ও বুদ্ধিদীপ্ত। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই স্যাম অল্টম্যান কাজ শুরু করেছেন নতুন ধরনের একটি যন্ত্র তৈরির পরিকল্পনায়। এতে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন অ্যাপলের সাবেক প্রধান ডিজাইন কর্মকর্তা স্যার জনি আইভ।

ওপেনএআই সম্প্রতি আইভের নেতৃত্বাধীন একটি এআই ডিভাইস স্টার্টআপ অধিগ্রহণ করেছে ৬৫০ কোটি ডলারে। এই দুই প্রযুক্তিবিদের নেতৃত্বে তৈরি হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র, যা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ব্যবহার অভিজ্ঞতা দিতে পারে। জানা গেছে, এই যন্ত্র হবে পকেট আকারের, পর্দাবিহীন এবং এটি কোনো চশমা বা পরিধানযোগ্য গ্যাজেট হবে না। স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের পরিপূরক হয়ে ‘তৃতীয় প্রধান যন্ত্র’ হিসেবে কাজ করবে।

স্যাম অল্টম্যান আশাবাদী, এই যন্ত্র বাজারে এলে প্রযুক্তির ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ১০ কোটি ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে যাবে। যদিও এটির কারিগরি বিবরণ এখনো গোপন রাখা হয়েছে, তবে অল্টম্যান জানিয়েছেন, ওপেনএআই ইতিমধ্যে নতুন ধরনের ব্যবহার পদ্ধতির (ইন্টারঅ্যাকশন) ওপর পরীক্ষা চালাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এতে ভয়েস কমান্ড, সেন্সর ও পরিবেশ সচেতন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন এক অভিজ্ঞতা তৈরি করা হবে, যেখানে যন্ত্রটি ব্যবহারকারীর জীবনধারার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনে সহায়তা করবে।

তবে এমন একটি যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারকারীদের এআইয়ের প্রতি অনেক বেশি আস্থা রাখতে হবে, এমনটি স্বীকার করেছেন অল্টম্যান নিজেও। তাঁর মতে, এমন প্রযুক্তিকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতেও সময় লাগবে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে