ডিপসিক চ্যাটবটকে তথ্য দেওয়া কি নিরাপদ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ডিপসিক। স্বল্প খরচে উন্নত কর্মক্ষমতার দাবি নিয়ে বাজারে এলেও ডিপসিকের তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা নীতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং চীনে এর সার্ভার অবস্থিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিষ্ঠানটির মডেলগুলো ওপেনএআই ও গুগলের মতো বৃহৎ ভাষা মডেলের (এলএলএম) সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম। তবে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী তাদের সদস্যদের ডিপসিক ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের মতে, ডিপসিক ব্যবহারের ফলে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তবে অনেক প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন। এআই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান পারপ্লেক্সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অরবিন্দ শ্রীনিবাস জানিয়েছেন, ডিপসিকের মডেল অনলাইন ছাড়াও ব্যক্তিগত ল্যাপটপ বা যন্ত্রে ব্যবহার করা যায়, যা ব্যবহারকারীদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
ডিপসিক এখন পর্যন্ত কোডিং, লেখালেখি ও ছবি তৈরির মতো নানা কাজে ব্যবহারের উপযোগী কয়েকটি এআই মডেল উন্মুক্ত করেছে। এর মধ্যে কিছু মডেলের উৎস কোড হাগিং ফেস নামের ওপেনসোর্স প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যায়। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীরা মূলত ডিপসিকের মোবাইল অ্যাপ (আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড) বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করেই এর এআই মডেল ব্যবহার করছেন।
ডিপসিকের গোপনীয়তা নীতিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, ব্যবহারকারীদের তথ্য চীনে অবস্থিত নিরাপদ সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহের জন্য তিনটি ভাগ করেছে। প্রথমত, ব্যবহারকারীদের সরবরাহ করা তথ্যের মধ্যে বার্তা বা অডিও ইনপুট, আপলোড করা ফাইল, প্রতিক্রিয়া, চ্যাট ইতিহাস, ই–মেইল ঠিকানা, ফোন নম্বর, জন্মতারিখ ও ব্যবহারকারীর নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগৃহীত তথ্যের মধ্যে রয়েছে ডিভাইসের মডেল, অপারেটিং সিস্টেম, আইপি ঠিকানা, কুকি, ক্র্যাশ রিপোর্ট এবং কী-স্ট্রোকের ধরন। তৃতীয়ত, অন্যান্য উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্যের মধ্যে গুগল বা অ্যাপলের মাধ্যমে ডিপসিক অ্যাকাউন্ট তৈরি করলে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মের নির্দিষ্ট তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এ ছাড়া বিজ্ঞাপনদাতাদের মাধ্যমে মুঠোফোন শনাক্তকরণ নম্বর, ই-মেইল, ফোন নম্বর এবং কুকি আইডি সংগ্রহ করা হতে পারে।
ডিপসিকের গোপনীয়তা নীতিতে আরও উল্লেখ রয়েছে যে সেবার মান উন্নয়নে ব্যবহারকারীদের ইনপুট পর্যালোচনা করা হবে এবং এআই প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োগ করা হবে। এ ছাড়া ব্যবহারকারীদের তথ্য ডিপসিকের করপোরেট গ্রুপের অন্য সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং আইনি প্রয়োজনে সরকারি সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করা হতে পারে।
ডিপসিকের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি অন্যান্য জেনারেটিভ এআই প্ল্যাটফর্মের মতোই। ঠিক একই কারণে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি একসময় ব্যবহারকারীদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য সমালোচিত হয়েছিল। এমনকি গোপনীয়তা উদ্বেগের কারণে এটি ইতালিতে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধও হয়েছিল।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস