কাশ্মীরি গালিচা বুননে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

জটিল নকশায় বোনা হয় কাশ্মীরের গালিচারয়টার্স

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন নানা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই ধারায় ভারতে গালিচা বা কার্পেট বুননে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতের কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা কার্পেট ও পাটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। জটিল নকশানির্ভর এসব কার্পেট ও পাটি তৈরিতে প্রাচীন একটি সংকেত ব্যবহার করা হয়। তালিম নামে পরিচিত এই সংকেত শত শত বছর ধরে কার্পেটের নকশা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁতিরা যুগের পর যুগ এই সংকেত ব্যবহার করে আসছেন।

কার্পেট সঠিকভাবে বুনতে নতুন তাঁতিদের পাঁচ বছর লেগে যায়। আর একেকটি কার্পেট সম্পন্ন করতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগতে পারে। কার্পেট তৈরির প্রক্রিয়ার শুরুতে একজন ডিজাইনার নকশা আঁকেন। একজন তালিম সংকেত বিশেষজ্ঞ তখন সেই নকশার সংকেত পুনরুদ্ধার (এনকোড) করে বুননের জন্য পাঠান। এই সংকেত অনুসারে তাঁতিরা কোথায় গিঁট দেবেন আর কোন রং ব্যবহার করবেন, তা জানতে পারেন।

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের তাঁত ও হস্তশিল্পের পরিচালক মেহমুদ শাহ বলেন, হাতে বোনা কার্পেটে প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে সময় কম লাগছে। এখন বিভিন্ন নকশা দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে। পুরো কার্পেট তৈরি করতে শত শত সংকেতের প্রয়োজন হয়। ডিজাইনার ও তাঁতিদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এই সংকেত। কোনো কারণে ভুল হলে তা চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আর ভুল সংশোধন করতে অনেক সময় লেগে যায়। আজকাল কম্পিউটার সফটওয়্যার কার্পেট নকশার প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তুলেছে। যে কারণে এখন ছয় সপ্তাহের মধ্যে একটি কার্পেটের কাজ শেষ করা যাচ্ছে। কম্পিউটার সফটওয়্যার তালিম সংকেতের নকশা তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স নামের একটি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের প্রধান পরিচলন কর্মকর্তা অ্যাবি ম্যাথিউ বলেন, ‘আমরা একটি এআই ব্যবস্থাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি তালিম সংকেত বোঝার জন্য। কার্পেটের ছবি ও তালিম সংকেতের সারি দেখিয়ে এআইকে শেখানোর চেষ্টা করছি। এআই পুরোপুরি শিখে ফেললে তখন সংকেত লেখার জন্য লোকের প্রয়োজন হবে না। এআই ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁতিরা নতুন প্যাটার্ন ব্যবহার করে নকশা করতে পারবেন। এ ছাড়া সমসাময়িক ধারা বা রুচির সঙ্গে মানানসই নকশা করতে পারবেন। প্রচলিত কার্পেট তৈরির কৌশল প্রায়ই ধীরগতির হয়। এআই ব্যবহার করে কাজে গতিশীলতা আনা যাবে।’

র‍্যাগ রিপাবলিক নামের কার্পেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান আদিত্য গুপ্ত বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে ১৫ হাজার পণ্য তৈরি করি। ভারতীয় র‍্যাগ ও কার্পেটশিল্প তুরস্ক ও চীনের ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে। এআই বা কম্পিউটার প্রযুক্তির জন্য উত্পাদন কৌশল ব্যবহার করে আমাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে।’

সূত্র: বিবিসি