অভিমত
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে চাকরি হারাবেন অলস ব্যক্তিরা, সুবিধা পাবেন পরিশ্রমীরা
ধীরে ধীরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। এআই মানুষের কোন ধরনের কাজ কেড়ে নেবে, তা নিয়েও বিশ্বজুড়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলেছেন বাংলাদেশ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মূল বিষয় হলো দক্ষতা ও কর্মদক্ষতার উন্নয়ন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়, এমনকি কর্মক্ষেত্রেও, দক্ষ ও কার্যকর মানুষের সংখ্যা অনেক কম। অনেকেই শুধু চাকরি চান, কাজ করতে চান না। নিজের দক্ষতা প্রমাণ করে যোগ্যতা অনুযায়ী পারিশ্রমিক নির্ধারণের কথা খুব কম মানুষই বলেন। এই সমস্যার মূলে রয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের শুরু থেকেই শেখায় না কীভাবে একজন যোগ্য কর্মী, সমালোচনামূলক চিন্তাবিদ হতে হয়। ফলে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে। একটি ছেলে বা মেয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হয়, তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, তার দক্ষতা কী, তখন বলে ভালো ফল করেছে, ডিন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে, চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। কিন্তু এটা সঠিক উত্তর নয়। সঠিক উত্তর হবে, আমার দক্ষতা হলো এই, আমি এই কাজ করতে পারি, আমি এই বিষয়ে দক্ষ। আমাকে সুযোগ দিলে আমি আমার দক্ষতার মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করতে পারব। এটাই হলো মাইক্রো ক্রেডেনশিয়াল।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী করছে? এটি সব উপলব্ধ সম্পদকে একত্র করে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসছে এবং সব তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করছে, যা আগে মানুষ করত। উদাহরণস্বরূপ, আমি প্রায়ই কোনো কিছু লেখার জন্য প্রথমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে একটি খসড়া তৈরি করি। আমার প্রতিষ্ঠানের লোকজন যদি এই খসড়া তৈরি করত, তাহলে তাদের কমপক্ষে এক মাস সময় লাগত। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে আমি ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করতে পারছি।
অনেকেই বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে ভবিষ্যতে অনেক মানুষ চাকরি হারাবে। হ্যাঁ, অনেকেই চাকরি হারাবেন। যাঁরা অলস, কাজ করতে বা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে চান না, তাঁরা চাকরি হারাবেন এবং আমার মনে হয়, তাঁদের চাকরি হারানো উচিত। কিন্তু যাঁরা কাজ করেন, দক্ষতা আছে এবং উদ্ভাবনী চিন্তা করেন, তাঁরা চাকরি হারাবেন না; বরং তাঁদের চাকরি ১০ থেকে ৩০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
একইভাবে, শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং আমার সব প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি যে আপনাদের মাইক্রোক্রেডেনশিয়াল কোর্স করতে হবে। আমার ছেলেমেয়েরা যেন নির্দিষ্ট ১০টি দক্ষতা নিয়ে বের হয়। আমরা যদি এই বিষয়ে মনোযোগ না দিতে পারি, তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েরা চাকরির বাজারে টিকে থাকতে পারবে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও ঠিক একইভাবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি একজন সাংবাদিক। আপনি শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের নাম্বার ওয়ান সাংবাদিক হতে পারবেন। কারণ, আপনার অনেক জ্ঞান আছে। আপনি যদি এই জ্ঞান ব্যবহার করে একটি পদ্ধতিগতভাবে সংরক্ষণ করতে পারেন, তাহলে আপনি অনেক লোকের কর্মসংস্থান করতে পারবেন। ঠিক যেমন আপনি দেখছেন যে আপনার অধীনে কয়েক শ লোক কাজ করছেন, কারণ সব কাজ তো আপনি একা করতে পারবেন না। তখন আপনি সবাইকে বলবেন যে ‘ভাই, তুমি আমাকে খসড়া তৈরি করে দাও, আমি বিশ্লেষণ করব, আমি তথ্য দিচ্ছি, আমি এটাকে পদ্ধতিগতভাবে সাজিয়ে দিচ্ছি।’ তার মানে, আপনি একজন ব্যক্তি হয়েও শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান করতে পারবেন, যদি আপনি সঠিক কাঠামো অনুসরণ করেন। কারণ, আপনার কাঠামোর কারণেই ভুল তথ্য যাবে না এবং সঠিক টেমপ্লেট ও ফলাফল সবাই দেখতে পারবেন। এটাই হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সৌন্দর্য।
ভবিষ্যতে হয়তো আমাকে ফোন করে আমার সঙ্গে আপনার কথা বলার প্রয়োজন হবে না। আমি যদি ভবিষ্যতে ‘এআই সবুর’ তৈরি করতে পারি, তাহলে আপনি যে প্রশ্নটি করছেন, তার উত্তর এআই সবুর দিয়ে দেবে। আপনি যদি বাংলায় উত্তর চান, সে বাংলায় উত্তর দেবে। এর ফলে আপনাকে আর সরাসরি আমার সঙ্গে কথা বলতে হবে না। তার মানে কী? তার মানে, আমি তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি আমার নিজের জ্ঞান দিয়ে।
আপনি যদি এখন আমাকে ফোন করে গার্মেন্টস মেশিনারি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, আমি বলব যে ‘ভাই, আমি জানি না।’ ঠিক একইভাবে, ‘এআই সবুর’কে যখন আপনি একই প্রশ্ন করবেন, সে–ও একই উত্তর দেবে, ‘আমি জানি না।’
লেখক: বাংলাদেশ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান