রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকদের চেয়ে চার গুণ বেশি নির্ভুল নতুন এআই টুল দাবি মাইক্রোসফটের

রোগ নির্ণয়ে নতুন এআই টুল এনেছে মাইক্রোসফটছবি: মাইক্রোসফট

জটিল রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকদের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভুল ফলাফল দেখিয়েছে মাইক্রোসফটের নতুন চিকিৎসা–সহায়ক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। ‘মাইক্রোসফট এআই ডায়াগনস্টিক অর্কেস্ট্রেটর’ বা এমএআই-ডিএক্সও নামের এ টুলটিকে প্রতিষ্ঠানটি বলছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জটিল সমস্যা সমাধানে সক্ষম এক নতুন ধাপ।

মাইক্রোসফট জানিয়েছে, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত বাস্তব ও জটিল কেসস্টাডি বিশ্লেষণে এমএআই-ডিএক্সও প্রায় ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পেরেছে। তুলনায় অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সাফল্যের হার ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। এতে বোঝা যায়, কার্যকারিতার দিক থেকে চিকিৎসকদের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি নির্ভুল ফল দিতে পারছে এই এআই টুল। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়নের দায়িত্বে আছে মাইক্রোসফটের স্বাস্থ্যবিষয়ক এআই ইউনিট। যেটি গঠন করা হয় ২০২৩ সালে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন মুস্তাফা সুলিমান।

এআই টুলটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন এটি একটি ভার্চ্যুয়াল চিকিৎসা বোর্ডের মতো কাজ করতে পারে। এতে পাঁচটি পৃথক এআই এজেন্ট রয়েছে। যাদের প্রতিটির নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। কেউ সম্ভাব্য রোগ চিহ্নিত করে, কেউ পরীক্ষার ধরন নির্ধারণ করে, আবার কেউ নানা যুক্তি বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। এই প্রক্রিয়ায় ‘চেইন অব ডিবেট’ নামে একটি নতুন কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে এআই যুক্তিনির্ভর পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে রোগ নির্ণয়ের পথ নির্ধারণ করা হয়।

এমএআই-ডিএক্সও টুলটি প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ৩০৪টি জটিল চিকিৎসা কেসস্টাডি। এসব কেসে এমন সব রোগের বিবরণ ছিল, যেগুলো নির্ণয়ে বাস্তবে একাধিক বিশেষজ্ঞ এবং নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। মাইক্রোসফট জানিয়েছে, এই টুল তৈরিতে ওপেনএআই, মেটা, গুগল, অ্যানথ্রোপিক, এক্সএআই ও ডিপসিকের তৈরি বিভিন্ন লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেল (এলএলএম) ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পরীক্ষার সময় চিকিৎসকদের পাঠ্যপুস্তক ব্যবহার বা সহকর্মীর পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। যা থাকলে তাঁদের নির্ণয়ের সাফল্যের হার কিছুটা বাড়তে পারত। তবে এমএআই-ডিএক্সও টুলটির কার্যপ্রণালি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে এআই এজেন্টরা একে অপরের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে যুক্তিমূলক বিতর্ক করে এবং সর্বোত্তম সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।

মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই টুল চিকিৎসকদের কাজের সহায়ক হিসেবেই বিবেচিত হবে। এটি চিকিৎসকদের জায়গায় সিদ্ধান্ত নেবে না, তবে সহকারী হিসেবে জটিল রোগ নির্ণয়ে কার্যকর সমর্থন দিতে পারবে। প্রতিষ্ঠানটির মতে, এটি রোগ নির্ণয়ের সময় ও খরচ উভয়ই কমাতে পারে এবং স্বাস্থ্যসেবার মান আরও উন্নত করতে পারে। তবে প্রতিষ্ঠানটি একে এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে বলেই উল্লেখ করেছে। বাস্তব চিকিৎসাব্যবস্থায় এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে আরও গবেষণা, বৃহৎ তথ্যভান্ডার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এ জন্য মাইক্রোসফট বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস