পোষা প্রাণীর আওয়াজ থেকে অর্থ বের করবে এআই, নতুন প্রযুক্তি আনছে বাইদু

বাইদুর প্রতীকছবি: শাটারস্টক

প্রিয় কুকুরটি হঠাৎ ঘেউ ঘেউ করছে। কেন করছে, তা বোঝার চেষ্টা করেন অনেকেই। তবে শব্দ দিয়ে প্রাণীর মনের কথা বোঝার সেই বহু পুরোনো কৌতূহল এবার প্রযুক্তির হাত ধরে বাস্তবে রূপ পেতে পারে। প্রাণীর আওয়াজ ও আচরণ থেকে অর্থ খুঁজে বের করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে চীনা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান বাইদু।

বাইদু সম্প্রতি চীনের ন্যাশনাল ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে একটি পেটেন্ট আবেদন করেছে। সেখানে তারা এমন একটি উন্নত অনুবাদ পদ্ধতির ধারণা উপস্থাপন করে। এ পদ্ধতিতে প্রাণীর আওয়াজ, শরীরী ভাষা, আচরণগত পরিবর্তন ও অন্যান্য জৈবিক সংকেত বিশ্লেষণ করে তা মানুষের ভাষায় অনুবাদ করতে পারবে। বাইদুর দাবি, এআইভিত্তিক এই সিস্টেম প্রাণীর আবেগ বা মানসিক অবস্থা শনাক্ত করতে পারবে। বিশ্লেষণের পর সেই আবেগ অনুবাদ করে চীনা বা ইংরেজি ভাষায় মানুষের বোধগম্য করে উপস্থাপন করবে। এতে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে যোগাযোগ আরও সহজ ও অর্থবহ হবে। পেটেন্ট আবেদনপত্রে বাইদু লিখেছে, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাণী ও মানুষের মধ্যে আবেগঘন যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, পুরো প্রকল্পটি এখনো গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। একটি সম্ভাব্য পণ্যে রূপ নেওয়ার জন্য আরও গবেষণা, উন্নয়ন ও বাস্তব পরীক্ষা দরকার। বাইদুর একজন মুখপাত্র বলেন, ‘পেটেন্টটি জমা দেওয়ার পর থেকেই ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তবে এটি এখনো গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে, তাই পণ্য হিসেবে কবে নাগাদ বাজারে আসবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’ সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, বাইদুর পেটেন্ট আবেদনটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দাখিল করা হলেও তা প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি।

এখন পর্যন্ত প্রযুক্তিটি চূড়ান্তভাবে কী রূপ নেবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে প্রযুক্তিবিদদের ধারণা, এটি সম্ভবত একটি মোবাইল অ্যাপ হিসেবে বাজারে আসতে পারে। ব্যবহারকারী তাঁর পোষা প্রাণীর ভিডিও ধারণ করে অ্যাপে আপলোড করলে, সেটি বিশ্লেষণ করে প্রাণীর বক্তব্য বা অনুভূতির সম্ভাব্য অনুবাদ দেখাবে। তবে এ ধরনের পণ্য নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সত্যিকার অর্থে এআই কি প্রাণীর ভাব প্রকাশ সঠিকভাবে ধরতে পারবে? ব্রিটিশ প্রযুক্তি পরামর্শক সংস্থা বোর্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জেমস বোরে বলেন, ‘পশুপাখির অনুভূতি বা ভাষা বোঝা এখনো বিজ্ঞানের জন্য অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। অনেক অ্যাপ উন্মুক্ত করা হলেও বাস্তবে সেগুলোর কার্যকারিতা খুবই সীমিত।’

বিশ্বজুড়ে প্রাণীর সঙ্গে মানুষের ভাষাগত যোগাযোগ স্থাপনে এরই মধ্যে একাধিক গবেষণা উদ্যোগ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা আর্থ স্পিসিস প্রজেক্ট ২০১৭ সাল থেকে প্রাণীর আওয়াজ বিশ্লেষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে। এ ছাড়া ডেনমার্কের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি গবেষণায় শূকরের ডাক বিশ্লেষণ করে তাদের আবেগ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। বাইদুর পেটেন্ট নিয়ে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও চলছে আলোচনা।

২০২২ সালে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি প্রকাশের পর চীনের বৃহৎ প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাইদুই প্রথম ব্যাপকভাবে এআই খাতে বিনিয়োগ করে। গত মাসে প্রতিষ্ঠানটি তাদের সর্বশেষ এআই মডেল ‘আর্নি ৪.৫ টার্বো’ প্রকাশ করেছে। বাইদুর দাবি, এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এআই মডেলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম। তবে এত সব উদ্যোগের পরও বাইদুর চ্যাটবট এখনো স্থানীয় বাজারে উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। প্রতিযোগী হিসেবে সেখানে রয়েছে ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি ও চীনের নিজস্ব উন্নত চ্যাটবট ডিপসিক।

সূত্র: ডেইলি মেইল