সিএফএ পরীক্ষায় সফল জনপ্রিয় এআই মডেলগুলো, ঝুঁকিতে আর্থিক খাতের পেশা

উন্নত এআই মডেলগুলো চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (সিএফএ) পরীক্ষার সব ধাপ সম্পন্ন করেছেছবি: রয়টার্স

কিছুদিন আগেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের সক্ষমতার নির্দিষ্ট কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কয়েক বছর আগেও যেখানে চ্যাটজিপিটি বা জেমিনাই এআইয়ের মতো এআই মডেলগুলো শুধু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত, এখন সেগুলো জটিল আর্থিক ও পেশাগত কাজেও দক্ষ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, জনপ্রিয় পাঁচটি এআই মডেল বিশ্বের অন্যতম কঠিন পেশাগত পরীক্ষা চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্টের (সিএফএ) সব ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এমনকি অত্যধিক কঠিন হিসেবে পরিচিত পরীক্ষার তৃতীয় ধাপও অনায়াসেই পাস করেছে মডেলগুলো। ফলে আর্থিক খাতের বিভিন্ন পেশা ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

গবেষকেরা জেমিনাই ৩.০ প্রোর পাশাপাশি জিপিটি ৫, ক্লদ ওপাস ৪.১, গ্রোক ৪ এবং ডিপসিক ভি৩.১ এই মডেলগুলোকে তিনটি ধাপে মোট ৯৮০টি প্রশ্ন করেন। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, গুগলের উন্নত মডেল জেমিনাই ৩.০ প্রো সিএফএ প্রথম ধাপের পরীক্ষায় ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছে জিপিটি ৫। তবে সবচেয়ে কঠিন হিসেবে বিবেচিত তৃতীয় ধাপে জেমিনাই ৩.০ প্রো পেয়েছে ৯২ শতাংশ নম্বর। গবেষকেরা বলছেন, সিএফএ পরীক্ষার মতো উচ্চ মানের ও জটিল আর্থিক সমস্যা সমাধানে এআই এখন তার আগের সীমাবদ্ধতা অনেকটাই অতিক্রম করেছে।

চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট কর্মসূচির প্রতিটি ধাপই ভিন্ন ধরনের দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে। প্রথম ধাপে অর্থনীতি, আর্থিক প্রতিবেদন, নৈতিকতা ও পরিমাণগত বিশ্লেষণের মতো বিষয়ে প্রার্থীদের মৌলিক ধারণা যাচাই করা হয়। এই ধাপের প্রশ্নগুলো মূলত বহুনির্বাচনী। দ্বিতীয় ধাপে জোর দেওয়া হয় সেই জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগে। কেস স্টাডিভিত্তিক প্রশ্নের মাধ্যমে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয়। এখানে মুখস্থ নির্ভরতার সুযোগ তুলনামূলক কম। তৃতীয় ও শেষ ধাপটি সবচেয়ে কঠিন। এই ধাপে প্রার্থীদের বিচারবোধ ও সমন্বয় ক্ষমতা যাচাই করা হয়। বিনিয়োগ পোর্টফোলিও তৈরি, কৌশল মূল্যায়ন ও নিজের সিদ্ধান্তের পেছনের যুক্তি লিখিতভাবে ব্যাখ্যা করতে হয়। আগের এআই মডেলগুলো তথ্যভিত্তিক প্রশ্নে ভালো করলেও এই বহুমাত্রিক বিশ্লেষণে প্রায়ই ব্যর্থ হতো।

গবেষণায় ব্যবহৃত প্রশ্নগুলো নেওয়া হয়েছিল সিএফএ ইনস্টিটিউটের বর্তমান অনুশীলন সামগ্রী ও হালনাগাদ পাঠ্যক্রম অনুযায়ী। মাত্র কয়েক বছর আগেও যেখানে জিপিটি ৪ সিএফএ পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন করতে পারেনি, সেখানে এখন অধিকাংশ আধুনিক মডেল তিনটি ধাপই উত্তীর্ণ হচ্ছে। গবেষকদের মতে, এআই মডেলগুলো এখন বহু ধাপে যুক্তি বিশ্লেষণ করতে পারে। পরিমাণগত বিশ্লেষণেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে মডেলগুলোর। আগে গাণিতিক ক্ষেত্রে এআইয়ের দুর্বলতা থাকলেও এখন শীর্ষ এআই মডেলগুলোর ভুলের হার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস