বাংলাদেশে জাপানের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটার তৈরি গাড়ি বেশি জনপ্রিয়। সাম্প্রতিককালে টয়োটার অ্যাকুয়া ও এক্সিও হাইব্রিড গাড়ি অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। এসব গাড়ির সঙ্গে আসা জাপানি ভাষায় লেখা গাড়ির নির্দেশিকা বা ম্যানুয়াল আমরা পড়তে পারি না। তাই চালক, গ্যারেজের মেকানিক, মোটর যন্ত্রাংশের দোকানদারদের কথার ওপর ভরসা করতে হয়। তাঁদের বেশির ভাগই হাইব্রিড গাড়ি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন না। ফলে উল্টাপাল্টা পরামর্শ দিয়ে হাইব্রিড গাড়ির বারোটা বাজিয়ে দেন।
হাইব্রিড গাড়ি জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। প্রচলিত জ্বালানি তেলে চলা গাড়ির চেয়ে হাইব্রিড গাড়িগুলো দ্বিগুণ সময় ভালো থাকে। শুধু তেলের গাড়ির ইঞ্জিন সাধারণত ৭-৮ বছরের মধ্যেই সমস্যায় পড়তে শুরু করে। সে তুলনায় হাইব্রিড গাড়ি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে ইঞ্জিন ১২-১৫ বছর ঝামেলা ছাড়াই চলে।
হাইব্রিড গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ
ইঞ্জিন অয়েল: অ্যাকুয়া ও এক্সিও হাইব্রিড গাড়ির জন্য ২টি গ্রেড বা মানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করার পরামর্শ দেয় টয়োটা। এ দুটি হলো ০ডব্লিউ-২০ এবং ৫ডব্লিউ-৩০।
একদম শূন্য মাইলেজের (গাড়ি যে দূরত্ব চলেছে) নতুন গাড়ির জন্য ০ডব্লিউ-২০ ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের পরামর্শও কোনো কোনো ক্ষেত্রে টয়োটা দিয়েছে। সাধারণত আমাদের দেশে পাঁচ বছরের পুরোনো গাড়ি বেশি আসে, তাই এই ইঞ্জিন অয়েল নিয়ে নিয়ে আলোচনা করছি না।
আপনার গাড়ির মাইলেজ যদি ১ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার বা তার কম হয়, তবে আপনি ফুল সিনথেটিক ০ডব্লিউ-২০ গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করবেন। ১ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটারের বেশি কিন্তু ৩ লাখ কিলোমিটারের কম চলা গাড়ির জন্য ০ডব্লিউ-৩০ অথবা ০ডব্লিউ-৪০ ব্যবহার করতে পারেন। ৩ লাখ কিলোমিটার পার হলে ৫ডব্লিউ-৩০ গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা উচিত। অবশ্যই ফুল সিনথেটিক অয়েল কিনবেন, যে ব্র্যান্ডেরই হোক না কেন তা আসল (অরিজিনাল) হতে হবে।
ইঞ্জিন অয়েল পাল্টাবেন কখন
অনেকেই তিন হাজার কিলোমিটার গাড়ি চললেই ইঞ্জিন অয়েল ফেলে দেন, যা মোটেই ঠিক নয়। আপনি ন্যূনতম ছয় হাজার কিলোমিটার পর ইঞ্জিন অয়েল পাল্টাবেন। আসল ইঞ্জিন অয়েলের সর্বোচ্চ মেয়াদ বা সীমা ১০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত।
অয়েল ফিল্টার
গাড়ির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ অয়েল ফিল্টার, যেটিকে আমরা ‘গাড়ির কিডনি’ বলে থাকি। বেশির ভাগ সময়ই কম দামি ফিল্টার লাগিয়ে গাড়ির সর্বনাশ করা হয়। ৬০ টাকা দামের ফিল্টার ৩০০ টাকা দিয়ে কিনে লাগিয়ে নেন অনেকেই। আর গাড়ি ভুগতে থাকে। অয়েল ফিল্টারের বেলায় কোনো অবস্থাতেই আপস করা যাবে না।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টয়োটার আসল অয়েল ফিল্টার ওয়াইজেডজেড-২ ব্যবহার করা ভালো। প্রতি ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার পরপর ফিলটার পরিবর্তন করতে হয়।
এয়ার ফিল্টার
আপনি চাইলে আসল এয়ার ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন। পার্ট নম্বর: ১৭৮০১-২১০৬০। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাজারে প্রচলিত ভালো মানের ফিল্টার প্রতি মাসে একটি ব্যবহার করা ভালো। অনেক দামি ফিল্টারও ঢাকার ধুলাবালুতে ছয় মাস চালানো যায় না।
এসি বা কেবিন ফিল্টার
এয়ার ফিল্টারের মতো কেবিন ফিল্টার আপনি আসলটা কিনতে পারেন। তবে প্রতি মাসে বাজারে প্রচলিত একটি ভালো মানের ফিল্টারও ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যাকুয়া ও এক্সিওর ব্রেক
প্রথমেই প্রশ্ন চলে আসে, ব্রেক প্যাড, ব্রেক সু কত দিন পরপর পাল্টাতে হবে? কিন্তু এ প্রশ্নের চেয়ে জরুরি হলো, কত দিন পর ব্রেক অয়েল পাল্টাব? কেন?
আমাদের দেশে অ্যাকুয়া ও এক্সিও হাইব্রিড গাড়ির ব্রেক বুস্টারের সমস্যা মহামারির আকার ধারণ করছে। এর কিছু কারণ নিচে দেওয়া হলো।
* ব্রেক বুস্টারের বয়স ১০ বছরের বেশি
* ব্রেক অয়েল চেঞ্জ না করা
* ভুল গ্রেডের ব্রেক প্যাড ব্যবহার করা
* চাকা জ্যাম
ব্রেক বুস্টার ভালো রাখতে করণীয় কী
ব্রেক বুস্টার খারাপ হয়ে গেলে নতুন (ব্র্যান্ড নিউ) কেনা উচিত।
* যাঁরা ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম শহরে গাড়ি চালান, তাঁদের প্রতি ৯ মাসে (বা ৩০,০০০ কিলোমিটার) একবার সঠিক পদ্ধতিতে ব্রেক অয়েল পাল্টে ফেলা উচিত। সঠিক পদ্ধতিতে ব্রেক অয়েল না পাল্টালে ভালো হওয়ার চেয়ে খারাপ হবে বেশি। টয়োটা ডট-৩ গ্রেডের ব্রেক অয়েল ব্যবহার করতে বলে। বাংলাদেশের জন্য ডট৫.১ না পেলে ডট-৪ ব্যবহার করা যায়। ব্রেক অয়েল অবশ্যই আসল বা অরিজিনাল হতে হবে। অন্যান্য এলাকায় যাঁরা গাড়ি চালান, তাঁরা বছরে একবার বা ৫০ হাজার কিলোমিটার (যেটি আগে আসে) হলে ব্রেক অয়েল পাল্টাবেন।
* প্রতিবছর বৃষ্টির সময় বা বর্ষাকাল শেষ হওয়ার পর চাকায় জ্যাম কি না, তা গ্যারেজে নিয়ে পরীক্ষা করানো ভালো।
* হাইব্রিড গাড়ির ব্রেক প্যাডের ফ্রিকশন গ্রেড হলো এফজি। আর ব্রেক প্যাডের পার্ট নম্বর ০৪৪৬৫-৫২৩২০। কোনো কারণে এটি খুঁজে না পাওয়া গেলে বিকল্প হিসেবে ০৪৪৬৫-৪৭০৭০ ব্যবহার করা যাবে।
আবুল হাসনাত সোহেল: উদ্যোক্তা, ইউনিসলভ