গাড়ি যখন ব্র্যান্ড নিউ

বিএমডব্লিউ এক্স৩ এসইউভি

যেসব গাড়ি দেশের বাজারে শূন্য কিলোমিটার বা অব্যবহৃত অবস্থায় আসে, সেসব গাড়িকে ব্র্যান্ড নিউ বা আনকোরা গাড়ি বলে। বৈদ্যুতিক, হাইব্রিড, প্লাগ-ইন হাইব্রিড (পিএইচইভি), জ্বালানিচালিতসহ সব ধরনের আনকোরা গাড়ি দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। বিলাসবহুল থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে নানা মডেলের ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি। গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, রুচির পরিবর্তন, হালনাগাদ গাড়িগুলো সম্পর্কে ইন্টারনেট থেকে সহজ জ্ঞানার্জন, বিক্রয়োত্তর সেবা ও খুচরা যন্ত্রাংশের দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কথা চিন্তা করে ক্রেতারা এই শ্রেণির গাড়ির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গাড়িঋণের সহজলভ্যতা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সুবিধাজনক ভ্রমণের চাহিদায় হালনাগাদ মডেলের গাড়িতে চড়ার জন্য গাড়ির বাজারে আনকোরা গাড়ির এক নতুন জোয়ার দেখা যাচ্ছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির চাহিদার কারণে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির বাজারে আগ্রহ বাড়ছে। ব্র্যান্ড নিউ গাড়িতে যেহেতু ব্যাটারি ও মোটরগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে, সেহেতু এই গাড়িগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি সেবাও মেলে। এর সঙ্গে গাড়ি আমদানিতে কিছু কর রেয়াত করা হয়েছে, যা বাজার বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশের অটোমোবাইল বাজার দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে। গাড়ির বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সরকার যদি শুল্ককাঠামো কিছুটা হ্রাস করার পাশাপাশি অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটায়, তবে আগামী পাঁচ বছরে আনকোরা গাড়ি বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির বাজার সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে এই প্রতিবেদনে।

ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির সুবিধা

বাংলাদেশে ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির বাজার একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। ভবিষ্যতে প্রযুক্তিনির্ভর পরিবহনব্যবস্থার দিকে দেশ এগিয়ে গেলে এই বাজার আরও প্রসারিত হবে। নতুন গাড়ি কেনার সবচেয়ে বড় কারণ হলো কারিগরি–নির্ভরতা। নতুন গাড়িগুলো উৎপাদনকেন্দ্র থেকে সরাসরি আসে। এতে কোনো পূর্ববর্তী ব্যবহারের ক্ষতি বা ঝুঁকি থাকে না। ক্রেতারা নিশ্চিত থাকেন যে গাড়িটি শতভাগ নতুন এবং সঠিকভাবে কাজ করবে। নতুন গাড়িটিতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সাধারণত ৩–৮ বছরের বাম্পার টু বাম্পার বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করে থাকে। এই সেবার আওতায় বিনা মূল্যে বা স্বল্প মূল্যে সার্ভিসিং পাওয়া যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান সার্ভিসিং, যন্ত্রাংশ ও বিমাসুবিধাও প্যাকেজ আকারে দেয়, যা রিকন্ডিশন্ড গাড়িতে সহজে মেলে না।

একটি গাড়ি ব্র্যান্ড নিউ অবস্থায় কেনা অনেক নিরাপদ। গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে সরাসরি বিক্রয়োত্তর সেবা দেয়। গাড়ি কেনার পর পরবর্তী যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের ওপর নির্ভর করবে গাড়িটি কতটা বন্ধুসুলভ! তাই প্রথম অবস্থা থেকে নিজের হাতে নিজের গাড়ির পরিচালনা আনন্দময় অনুভূতি প্রদান করে। ব্র্যান্ড নিউ গাড়িতে টায়ার, চাকা, গিয়ার বক্স থেকে শুরু করে অন্য পার্টসগুলো নতুন থাকায় রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেকাংশে কমে যায়। রিকন্ডিশনড গাড়িগুলোর ফিচার বেশি থাকলেও ব্র্যান্ড নিউ গাড়িতে আলাদা প্রশান্তি পাওয়া যায়। ভেতরে নতুন গাড়ির সুঘ্রাণ মেলে। আনকোরা গাড়ির যন্ত্রাংশগুলোও নতুন হওয়ায় মোটামুটি ৫০ হাজার কিলোমিটারের আগে নিশ্চিন্তে চলাচল করা যায়। নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বা মিটার কারচুপি, ইঞ্জিনসমস্যা ইত্যাদি নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকে না। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য নতুন গাড়ি একটি নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করেন অনেকেই। এ ছাড়া গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভিস সেন্টার থাকায় যেকোনো সমস্যায় সহজে সমাধান ও স্পেয়ার পার্টস পাওয়া যায়। ব্র্যান্ড নিউ গাড়িতে পাঁচ বছর পর্যন্ত ফিটনেস শুল্ক দিতে হয় না বলে বার্ষিক শুল্কের পরিমাণও কমে যায়। এ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন খরচও রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চেয়ে কম।

বিলাসবহুল গাড়ির বাজারে

বিলাসবহুল গাড়ির ক্ষেত্রে আনকোরা গাড়ির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। উচ্চবিত্তরা এসব গাড়ি কিনতে পছন্দ করেন। ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির বাজারে জার্মান গাড়ির আলাদা চাহিদা রয়েছে। এসব গাড়ি দেখতে যেমন নান্দনিক, তেমনি প্রযুক্তিতেও হালনাগাদ সব প্রযুক্তি–সংবলিত। বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ–বেঞ্জ, অডি, লেক্সাস, ভলভো, জিপের গাড়িগুলো বিলাসবহুল সারিতে জনপ্রিয়। দেশে এই গাড়িগুলোর অনুমোদিত পরিবেশক রয়েছে। পাশাপাশি ল্যান্ড রোভার রেঞ্জ, জাগুয়ার, পোর্সে, টেসলা, মাজেরাতিসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো আমদানিকারকেরা ব্যক্তিগতভাবে আমদানি করে থাকেন।

বিএমডব্লিউ

বিলাসবহুল গাড়ির কথা মনে পড়লেই যে প্রতিষ্ঠানের নাম প্রথম সারিতেই মনে পড়ে, তার নাম বিএমডব্লিউ। জার্মানির বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিএমডব্লিউর হালনাগাদ মডেলগুলো আরও বেশি আকর্ষণীয়, জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব। দেশের বাজারে বিএমডব্লিউর পরিবেশক এক্সিকিউটিভ মোটরস লিমিটেড। প্রথম সারির ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সেলিব্রিটি ক্রিকেটাররাও বিএমডব্লিউপ্রেমী। তিনটি বিভাগে বিএমডব্লিউ গাড়িগুলো পাওয়া যায়। বিএমডব্লিউ থ্রি এবং ফাইভ সিরিজের সেডান গাড়িতে প্লাগ ইন হাইব্রিড, সেভেন সিরিজে পেট্রল এবং এক্স সিরিজে মিলবে এসইউভি পেট্রল (এক্স ১ এবং এক্স ৭) ও বৈদ্যুতিক (আইএক্স এবং আইএক্সথ্রি) গাড়ি। এম সিরিজে এসইউভিতে রয়েছে এক্সএম (পিএইচইভি) এবং সেডান গাড়িতে আই ফাইভ এম৬০ এক্স ড্রাইভ (বৈদ্যুতিক)। আই সিরিজের প্রতিটি গাড়ি বৈদ্যুতিক। এই সিরিজে সেডানের মধ্যে রয়েছে আইসেভেন, আইফাইভ ও আইফোর। এসইউভিতে মিলবে আইএক্স, আইএক্সথ্রি এবং আইএক্সওয়ান। সদ্য আসা গাড়িগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দামি ও অত্যাধুনিক সুযোগ–সুবিধাসম্পন্ন গাড়িটির মডেল বিএমডব্লিউ আইসেভেন ইড্রাইভ ৫০। এটি একটি বৈদ্যুতিক সেডান গাড়ি। শূন্য থেকে ১০০ কিলোমিটার গতি তুলতে গাড়িটির সময় প্রয়োজন হয় মাত্র ৫ দশমিক ৫ সেকেন্ড। একবার ফুল চার্জে গাড়িটি সর্বোচ্চ ৬১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম। গাড়ির পেছনের আসনের যাত্রীদের জন্য রয়েছে এক বিশাল ডিসপ্লে, যা গাড়ির ওপরের ছাদে বল্টানো অবস্থায় থাকে। বিএমডব্লিউ অপারেটিং সিস্টেম ৮, প্রশস্ত কেবিন, আরামদায়ক আসনসহ যাত্রাপথকে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করার সব উপকরণ রয়েছে গাড়িটিতে। তিন কোটি টাকা থেকে গাড়িটির  মূল্য শুরু হয়। বৈদ্যুতিক গাড়ির জগতে আইসেভেন ইড্রাইভ ৫০ নতুন যুগের সূচনা করেছে, যা একসঙ্গে পরিবেশবান্ধব, বিলাসবহুল ও বৈদ্যুতিক গাড়ি হিসেবে সর্বোচ্চ পথ পাড়ি দেওয়ার নিশ্চয়তা দেয়।
এ ছাড়া এসইউভি বিভাগে বিএমডব্লিউ আইএক্সত্রি এম স্পোর্টস একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি, যা তাৎক্ষণিক টর্ক উৎপাদনের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন গতি প্রদান করে। রয়েছে এম স্পোর্ট স্টাইলিং ও অ্যারোডায়নামিক ডিজাইন। ইতিমধ্যে এক্সিকিউটিভ মোটরস সারা দেশে ১৬টি স্থানে বিএমডব্লিউ স্ট্যান্ডার্ড চার্জিং স্টেশন স্থাপন করেছে, যা বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জ্বালানিচালিত গাড়ির মধ্যে রয়েছে বিএমডব্লিউ এক্সওয়ান। এই গাড়ির তৃতীয় প্রজন্মের মডেলটি বাংলাদেশের বাজারে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই কমপ্যাক্ট এসইউভি মডেলটি আধুনিক ডিজাইন ও উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়। ১ দশমিক ৫ লিটার টুইন পাওয়ার টার্বো ইঞ্জিনে গাড়িটির সর্বোচ্চ অশ্বশক্তি ১৩৬ হর্সপাওয়ার এবং টর্ক ২৩০ এনএম। ১৮ ইঞ্চি অ্যালয় হুইল, অ্যাডাপটিভ হেডলাইট, অ্যাম্বিয়েন্ট লাইট, ডিজিটাল কি প্লাস, ১২টি স্পিকারে অডিও সিস্টেম এবং বিএমডব্লিউ আইড্রাইভ ফিচারের মাধ্যমে গাড়িটি ক্রেতাদের মন জুগিয়েছে। কেনার আগে এই মডেলের গাড়ি পরীক্ষামূলক চালানোর সুযোগও দিচ্ছে এক্সিকিউটিভ মোটরস।  

মার্সিডিজ–বেঞ্জ সেডান ৪৫০

মার্সিডিজ–বেঞ্জ

রাজকীয় গাড়ির স্বাদ পেতে যে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নাম মানুষের মুখে মুখে, সেটি হলো মার্সিডিজ–বেঞ্জ। দেশের বাজারে মার্সিডিজ–বেঞ্জ গাড়ির অনুমোদিত পরিবেশক র‍্যাংকন মোটরস লিমিটেড। সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন নতুন মার্সিডিজ–বেঞ্জ মডেল, বিশেষ করে বৈদ্যুতিক যানবাহন ও বিলাসবহুল এসইউভি মডেলগুলো উন্মোচন করেছে। ২০২৪ সালে মার্সিডিজ–বেঞ্জ দেশের বাজারে ছয়টি বৈদ্যুতিক গাড়ির মডেল উন্মোচন করেছে। ইকিউএস সিরিজে ৪৫০ ফোরমেটিক এসইউভি, সেডানে ৪৫০, ইকিউিই মডেলে ৩৫০+ এসইউভি, ৫৩ এএমজি, ৩৫০+ সেডান এবং ইকিউবি। এই মডেলগুলো পূর্ণচার্জে ৪৫০ থেকে ৬৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারে। উন্নত প্রযুক্তি ও বিলাসবহুল অভ্যন্তরীণ ডিজাইনসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে র‍্যাংকন মোটরস ও জেনেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড যৌথভাবে সারা দেশে ২১টি ইকিউ চার্জিং স্টেশন স্থাপন করেছে। রাজধানীতে ৭টি এবং দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাকি ১৪টি স্থাপন করা হয়েছে। মার্সিডিজ এএমজি, মেবেইক, জি ক্লাস—এই তিনটি শ্রেণিতে হরেক রকমের গাড়ি র‍্যাংকন দেশের বাজারে নিয়ে আসে।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে র‍্যাংকন মোটরস বাংলাদেশের বাজারে প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক জি-ক্লাস এসইউভি, জি ৫৮০ এডিশন ওয়ান উন্মোচন করেছে। এই মডেল চারটি মোটর (প্রতিটি চাকার জন্য একটি) দ্বারা চালিত, যা মোট ৫৮৭ অশ্বশক্তি এবং ১১৬৪ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে। এটি জি-টার্ন, স্টিয়ারিং ও রোয়ারের মতো উন্নত ফিচারসমৃদ্ধ, যা অফ-রোডিং অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে। সেডান গাড়ি শ্রেণিতে মার্সিডিজের এ, সি, ই এবং এস ক্লাসের বিভিন্ন মডেল, এসইউভিতে জিএলসি, জিএলবি, জিএলই, জিএলএস, ইকিউ (ই, এস, জি এবং বি) এবং মেবেইকের ইকিউএস সিরিজ পাওয়া যায়। এ ছাড়া কুউপ, ক্যাবরিউলেট, এমপিভি, হ্যাচবেক, ইস্টেট ও বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোও অগ্রিম ফরমাশ ও স্টক থাকা সাপেক্ষে র‍্যাংকন মোটরস পরিবেশন করে। মডেল ও মডিফিকেশন ভেদে গাড়িগুলোর মূল্য এক কোটি থেকে শুরু করে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

অডি

অডি

জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অডি বিলাসবহুল গাড়ির সারিতে অন্যতম আরেকটি পরিচিত নাম। পাঁচটি রিংয়ে গাড়িটির লোগো আলাদা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে। বাংলাদেশে অডি ব্র্যান্ডের গাড়ি আমদানি ও বিপণনের দায়িত্বে রয়েছে প্রগ্রেস মোটরস ইমপোর্টস লিমিটেড, যা অডি এজির একমাত্র অনুমোদিত পরিবেশক। কিউ, এ এবং ই-ট্রন এই তিন সিরিজে অডি গাড়ি দেশে পাওয়া যায়। বৈদ্যুতিক গাড়ির পাশাপাশি বিলাসবহুল গাড়ি হিসেবে ই-ট্রন গাড়ি বাজারে বেশ জনপ্রিয়। অডি কিউ৬ ই-ট্রন এসইউভি গাড়িটি একবার পূর্ণচার্জে ৪০০ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারে। গাড়িটিতে রয়েছে ভার্চ্যুয়াল সাইড মিরর। সেডান গাড়িতেও রয়েছে অডির ই-ট্রন জিটি। এই গাড়ি শূন্য থেকে ১০০ কিলোমিটার গতি তুলতে সময় নেয় মাত্র ৩ দশমিক ৩ সেকেন্ড। এ ছাড়া অডি গাড়ির লাইনআপে রয়েছে কিউফাইভ, কিউসেভেন, কিউএইট এবং এসিক্স সেলুন। গাড়িগুলোর মূল্য দেড় কোটি টাকা থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

জিপ

জিপ এতটাই জনপ্রিয় যে এসইউভি গাড়িকে অনেকেই জিপ বলে থাকেন। অফ রোডিংয়ে রাজাখ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের এই গাড়ি দেশের বাজারে নিয়ে আসে আনোয়ার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এজি অটো। পাঁচটি মডেলে দেশের বাজারে জিপ পাওয়া যায়। জিপ রেঞ্জলার, কমপাস, গ্র্যান্ড চেরোকি, গ্র্যান্ড চেরোকি এল ও গ্ল্যাডিয়েটর। জিপ রুবিকন রেঞ্জলার শহরের রাস্তার পাশাপাশি পাহাড়–সমুদ্রসহ যেকোনো রাস্তায় দাপটের সঙ্গে চালানো যায়। ট্রেইল রেটেড ফোরএক্সফোর ক্ষমতা, উন্নত সাসপেনশন এবং হাই গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সের কারণে গাড়িগুলো ক্রেতাদের বিশ্বস্ততা অর্জন করেছে। আকারে বেশ বড়সড় হওয়ায় রাস্তায় আগ্রাসী দর্শনে রেঞ্জলারের দেখা মেলে। আধুনিক গঠনবৈচিত্র্য, উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি এবং আরামদায়ক আসনের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার। নৈপুণ্যেও সে সর্বসেরা। জিপের আসনসংখ্যা মডেলভেদে ৫ থেকে ৭ আসন পর্যন্ত হয়ে থাকে। গাড়িগুলোতে সুরক্ষার জন্যও হালনাগাদ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। মডেল ও অপশনভেদে ১ কোটি ২০ লাখ থেকে শুরু করে ৩ কোটি টাকার মধ্যে গাড়িগুলো পাওয়া যায়।

এ ছাড়া এজি অটো দেশের বাজারে ফ্রান্সের পুঁজো গাড়ির পরিবেশক। এসইউভি বিভাগে পুঁজো ৩০০৮ ও ৫০০৮ পাওয়া যাচ্ছে। শিগগিরই আসতে যাচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিউ ২০০৮। সেডান বিভাগে রয়েছে ৩০৮ ও নিউ ৪০৮। মডেল ও ফিচার অনুসারে গাড়িগুলো কিনতে ৬৫ লাখ থেকে শুরু হয়ে কোটি টাকার ওপরে গুনতে হয়। দেশের বাজারে সুইডেনের বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভলভোর ব্যক্তিগত গাড়িও নিয়ে আসে এজি অটো। বৈদ্যুতিক গাড়িতে ভলভো এক্সসি ৪০ রিচার্জ, ক্রসওভারে ভলভো এক্সসি৬০, এসইউভিতে এক্সসি৯০, সেডানে ভলভো এস৯০ এবং ওয়াগন সিরিজে ভলভো ভি৬০ ক্রস কান্ট্রি দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ১ কোটি ২০ লাখ থেকে গাড়িগুলোর মূল্য শুরু হয়ে থাকে।

টয়োটা ক্রস হাইব্রিড

জাপানি আনকোরা গাড়ি

বিলাসবহুল গাড়ির সারিতে জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটার রয়েছে বেশ কয়েকটি আনকোরা মডেলের গাড়ি। নাভানা লিমিটেড দেশের বাজারে টয়োটার অনুমোদিত পরিবেশক। বিলাসবহুল গাড়ির পাশাপাশি টয়োটা বাংলাদেশ মধ্যম বাজেটের গাড়িও বিক্রি করে থাকে। টয়োটা বাংলাদেশের লাইনআপে থাকা গাড়িগুলো হলো এসইউভিতে রাশ, করোল্লা ক্রস হাইব্রিড, র‍্যাভফোর হাইব্রিড, ফরচুনার ও রেইজ। এমপিভি বিভাগে পাওয়া যাচ্ছে টয়োটা অ্যাভাঞ্জা ও ভেলজ। কেমরি হাইব্রিড ও করোল্লা অলটিস হাইব্রিড পাওয়া যাচ্ছে সেডান ক্যাটাগরিতে। মাইক্রোবাস শ্রেণিতে রয়েছে ১২-১৬ আসনের হাইয়েচের দুটি মডেল। এ ছাড়া টয়োটা বাংলাদেশে মিলবে হাইলাক্স পিকআপ ও কোস্টার। গাড়িগুলোর মূল্য ৩৮ লাখ থেকে শুরু হয়ে দেড় কোটি টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। জাপানের পাশাপাশি গাড়িগুলো ইন্দোনেশিয়াতেও তৈরি হয়।
জাপানের অন্যতম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হোন্ডার ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির পরিবেশক ডিএইচএস মোটরস। হোন্ডা বাংলাদেশে গাড়ির বাজারে সেডানে অ্যাকর্ড টার্বো, সিটি, সিভিক টার্বো এবং এসইউভিতে সিআর-ভি টার্বো, এইচআর-ভি, বিআর-ভি এবং সিআর-ভি টার্বো ২০২৪ বিক্রি করছে।

প্যাসিফিক মোটরস দেশের বাজারে নিয়ে আসছে জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিশানের আনকোরা গাড়ি। মাইক্রোবাস শ্রেণিতে নিশান বাংলাদেশের লাইনআপে রয়েছে আরভান, পিকআপে নাভারা, এসইউভিতে পেট্রল, এক্সট্রেইল, কিকস ও মেগনাইট। সেডান বিভাগে আছে আলমেরা। নিশানের মডেলগুলোর মধ্যে বিলাসবহুল এসইউভিতে নিশান পেট্রল এবং সাধ্যের মধ্যে এসইউভি ক্যাটাগরিতে এক্সট্রেইল বেশ জনপ্রিয়।

উত্তরা মোটরস দেশের বাজারে পরিবেশন করছে জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সুজুকির গাড়ি। এই গাড়িগুলো জাপানের পাশাপাশি ভারতেও উৎপাদন হয়। সাধ্যের মধ্যে গাড়ির স্বাদ পূরণের জন্য সুজুকির বেশ কয়েকটি গাড়ি জনপ্রিয়। হ্যাচবেক শ্রেণিতে সুজুকি ওয়াগনআর ও সুইফট, সেডান শ্রেণিতে সিয়াজ ও মাল্টি ফাংশন ইউটিলিটি ভেহিক্যাল তথা এমইউভিতে সুজুকি আর্টিগা ও এসইউভিতে আছে ব্রেজা, এক্সএলসিক্স, গ্র্যান্ড ভিটারা ও জিমনি। ১ হাজার ২০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ৫০০ সিসির মধ্যে গাড়িগুলোর মূল্য ১৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা।

কারখানায় গাড়ি তৈরি হচ্ছে

নতুন গাড়ি সংযোজিত হচ্ছে দেশে

জাপানের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মিতশুবিশির গাড়ি সংযোজন এবং কিছু পার্টস উৎপাদন করছে র‍্যাংকন মোটরস। মিতশুবিশি এক্সপেন্ডার এই সারিতে অন্যতম। পাশাপাশি মিতশুবিশির এক্লিপস ক্রস, আউটল্যান্ডার স্পোর্টস এবং পিকআপ বিভাগে এল২০০ পরিবেশন করছে র‌্যাংকন মোটরস। মালয়েশিয়ার এক্স৭০ মডেলের গাড়িটি দেশীয়ভাবে উৎপাদন করায় ন্যূনতম ৭ লাখ টাকা কমে সাড়ে ৩৮ লাখ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রোটন এক্স৭০তে ভয়েস কমান্ড, অনলাইন নেভিগেশন, স্মার্টফোন কানেকটিভিটি, রিমোট কন্ট্রোল, অ্যামপ্লিফায়ার, সাবউফারসহ ৯টি স্পিকার, ৬টি ইউএসবি পোর্টসহ আধুনিক সব সুযোগ–সুবিধা মিলবে। কোরিয়ার বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুন্দাইয়ের ক্রেটা মডেলের গাড়িটি দেশে উৎপাদন করছে ফেয়ার টেকনোলজি। এ ছাড়া হুন্দাইয়ের বিলাসবহুল গাড়ি পেলিসেড পরিবেশন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এসইউভি বিভাগে তুসন ও এমপিভিতে রয়েছে স্টারগেজার। হুন্দাই গাড়িগুলোর দাম ৩০ লাখ থেকে শুরু করে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি মিলছে দেশে

দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিয়ার হালনাগাদ মডেলের গাড়িগুলো পরিবেশন করছে মেঘনা অটোমোবাইলস। বর্তমানে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে বিলাস ও কার্যকারিতা দুটোই মিলিয়ে জনপ্রিয় একটি নাম হয়ে উঠেছে। কম টাকায় কিয়ার জনপ্রিয় গাড়ি হলো কিয়া পিকান্টো। এ ছাড়া সেডান গাড়িতে রয়েছে সিরেটো ও অপ্টিমা। এসইউভিতে সেল্টোস, সনেট, স্পোর্টেজ, সোরেন্টো ও কেরেনস। এমপিভিতে রয়েছে কার্নিভ্যাল। কোরিয়ার গাড়ি আধুনিক গঠনশৈলীতে বেশ আকর্ষণীয়। বিশ্বস্ততার দিক থেকেও জাপানের পরে মানুষ কোরিয়ার গাড়ির প্রতি ভরসা রাখে। গাড়িগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং মেরামতে তুলনামূলকভাবে সহজ। ৩৫ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকার মধ্যে গাড়িগুলো দেশের বাজারে পাওয়া যায়।

রয়েছে মালয়েশিয়ার গাড়ি

ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির বাজারে মালয়েশিয়ার প্রোটন ব্র্যান্ডের গাড়ির পরিবেশক র‍্যাংকন মোটরস। দেশীয় উৎপাদনের পাশাপাশি প্রোটন গাড়ি আমদানিও করে প্রতিষ্ঠানটি। এসইউভি ক্যাটাগরিতে প্রোটনের রয়েছে এক্স৯০ ও এক্স৭০। সেডান বিভাগে মিলবে এস৭০। এক্স৭০তে প্রিমিয়াম ভ্যারিয়েন্টে গাড়িটির মূল্য ৪৫ লাখ থেকে শুরু হয়। ৬ ও ৭ আসন প্রোটন এক্স৯০ ও এক্স৭০ পাওয়া যায়। ছয় আসনবিশিষ্ট গাড়িগুলোতে দ্বিতীয় সারিতে ক্যাপ্টেন সিট ব্যবহার করা হয়েছে। আধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ গাড়িগুলো ৫০ লাখ টাকার মধ্যে কিনতে পাওয়া যায়।

হাভাল

বড় হচ্ছে চীনের তৈরি গাড়ির বাজার

সাশ্রয়ী মূল্য, আধুনিক সব ফিচারসমৃদ্ধ চীনের গাড়িগুলো দেশের বাজারে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে। ২০১৬ সালে চীনের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হাভালের গাড়ি নিয়ে আসে এইচ অটোস লিমিটেড। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে চীনের প্রায় ১০টি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের আনকোরা গাড়ি এখন দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

বিওয়াইডি

বৈদ্যুতিক গাড়ির কথা উঠলে সবার আগে যে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নাম আসবে, সেটি হলো টেসলা। টেসলার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কয়েকটি মডেলে টেসলাকে হারিয়ে দিয়ে আলোচনায় আসে চীনের ব্যাটারি ও গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিল্ড ইউর ড্রিম তথা বিওয়াইডি। ২০২৪ সালের শেষের দিকে দেশের বাজারে বিলাসবহুল গাড়ি সিল নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিওয়াইডি। বিওয়াইডির একমাত্র পরিবেশক সিজি রানার গ্রুপ ‘সিল’–এর জনপ্রিয়তার পর মধ্যম বাজেটে আরও একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি দেশের বাজারে নিয়ে আসে, যার মডেল আট্টো-থ্রি। এই গাড়ির সামনের নকশা ‘ড্রাগন ফেস ডিজাইন উইথ উইং ফেদার’ ধারণায় তৈরি। সঙ্গে আছে ‘কম্বিনেশন এলইডি হেডলাইট’।  আট্টো-থ্রি গাড়িতে ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা রয়েছে। পাশের কোনো গাড়ি যদি কাছাকাছি চলে আসে, তবে ক্যামেরাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে পর্দায় দেখা যায়। এ ছাড়া ডানে বা বাঁয়ে সড়কের সংকেতবাতি জ্বালালেও ক্যামেরায় গাড়ির চাকার অবস্থা ও আশপাশের দৃশ্য ধরা পড়ে। পর্দায় তা দেখা যায়। গাড়ি ডানে–বাঁয়ে অথবা সামনে–পেছনে চালানোর সময় বিশাল ডিসপ্লেতে গাড়ির চাকার সীমা দেখার সুবিধা রয়েছে। স্বয়ংক্রিয় সুইচের মাধ্যমে চালক ও বাঁ পাশের যাত্রীর আসনগুলোকে ৬ ও ৪ ধাপে সামনে পেছনে নেওয়া যায় বা উঁচু–নিচু করা যায়। আসনগুলোয় কৃত্রিম চামড়া ব্যবহার করা হয়েছে। ইন্টিগ্রেটেড স্পোর্টস ধারণায় তৈরি বলে আসনগুলো বেশ আরামদায়ক। সুইচের মাধ্যমেও সানরুফ খোলা বা বন্ধ করা যায়। ড্যাশবোর্ডে গাড়ির ইনফোটেইনমেন্ট ডিসপ্লেটিকে আকারে ছোট ও তথ্যবহুল করে বানানো হয়েছে। চালানোর সময় সময়, তাপমাত্রা, গাড়ির গতি, কতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করা যাবে, কত শতাংশ চার্জ রয়েছে, গাড়ির গিয়ার ও মোড—এসব দেখা যায় পরিষ্কারভাবে।
গাড়ির দরজার পকেট হোল্ডারে যে দড়ি ব্যবহার করা হয়েছে, তা দেখতে অনেকটা গিটারের তারের মতো। শুধু দেখতেই নয়, তারগুলোকে স্পর্শ করলে তা সুর সৃষ্টি করে। রয়েছে আটটি স্পিকার এবং বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য সিএন ৯৫ এয়ার ফিল্টার।

নিরাপত্তার জন্য গাড়িটিতে সাতটি এয়ারব্যাগ রয়েছে। এ ছাড়া ব্লাইন্ড স্পট ডিটেকশন, লেইন ডিপারচার প্রিভেনশন, রিয়ার ক্রস ট্রাফিক অ্যাসিস্ট, সিটবেল্ট ওয়ার্নিং, এন্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস), ইলেকট্রনিক ব্রেক-ফোর্স ডিস্ট্রিবিউশন, ব্রেক অ্যাসিস্ট, ইএসপি, হিল হোল্ড ও ট্র্যাকশন কন্ট্রোল, স্পিড সেন্সিং ডোর লক, ইলেকট্রনিক পার্কিং ব্রেক উইথ অটো হোল্ড ও পার্কিং সেন্সর রয়েছে। ঠান্ডায় উষ্ণতার জন্য গাড়িটিতে রয়েছে হিট পাম্প। আট্টো-থ্রিতে এসি এবং ডিসি দুই ধরনের চার্জ দেওয়া যাবে। বাসায় ব্যবহৃত চার্জার দিয়ে গাড়িটি পূর্ণ চার্জ করতে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা সময় লাগবে। এসি চার্জারে (ফাস্ট চার্জার) মাত্র ৩০ মিনিটে ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ চার্জ করা যাবে।
সিজি-রানার বাংলাদেশ আট্টো-থ্রির ব্যাটারিতে ৮ বছর বা ১ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত (যেটি আগে আসে) এবং মোটরের ক্ষেত্রে ১ লাখ ৫০ হাজার ও পুরো গাড়ির ক্ষেত্রে ৬ বছর বা ১ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিক্রয়োত্তর সেবা দেবে। এক্সটেন্ডেড সংস্করণের আট্টো-থ্রির দাম ৫৫ লাখ ৯০ হাজার এবং স্ট্যান্ডার্ড সংস্করণে ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা হতে পারে। সিজি-রানার বাংলাদেশের তথ্যমতে বিওয়াইডি সিজি-রানার বাংলাদেশ ২০২৪ গাড়ি চালাতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে মাত্র আড়াই টাকা। প্লাগ ইন হাইব্রিড মডেলে এই বছরে নতুন গাড়ি নিয়ে এসেছে বিওয়াইডি। গাড়িটির মডেল সিলায়ন-৬। পরিপূর্ণ জ্বালানি ও পূর্ণ চার্জ মিলিয়ে গাড়িটি ১০৯২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবে। জ্বালানি ও চার্জ—এই দুই মাধ্যমে গাড়িটি চালালে প্রতি কিলোমিটার ৪ টাকা ১২ পয়সা খরচ হবে। শুধু ব্যাটারিতে চালালে প্রতি কিলোমিটারে ৩ টাকার কম খরচ হবে। পূর্ণ এক চার্জে গাড়িটি চলবে ১০০ কিলোমিটার। অত্যাধুনিক সুযোগ–সুবিধাসহ প্রথম ২০০ ক্রেতার জন্য গাড়িটির মূল্য ৬৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। গাড়িটিতে ব্যাটারি ও ড্রাইভ ইউনিটের জন্য ৮ বছর এবং অন্যান্য প্রধান যন্ত্রাংশের জন্য ৬ বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা মিলবে।

চেরি

দেখতে আকর্ষণীয় এবং হালনাগাদ প্রযুক্তি–সংবলিত গাড়ি তৈরি করে চেরি। দেশের বাজারে চেরির একমাত্র পরিবেশক এশিয়া মোটরস্পেক্স লিমিটেড। ২০২২ সালের অক্টোবরে চেরি গাড়ি দেশের বাজারে আসে। শুধু এসইউভি ক্যাটাগরিতে চেরির তিনটি মডেলের গাড়ি দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। টিগো ফোর প্রো, সেভেন প্রো এবং এইট প্রো মডেলের গাড়িগুলো ৩৫ লাখ থেকে ৫৫ লাখের মধ্যে পাওয়া যায়। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়িতে চেরির সাব ব্র্যান্ড ওমোডা ফাইভ ও বিলাসবহুল এসইউভি বিভাগে জেইকো সেভেন দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

এমজি ই–মোশন

এমজি

দেশের বাজারে প্রথম আনকোরা বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে এসেছিল ব্রিটিশ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মরিস গ্যারেজেজ তথা এমজি। র‍্যাংকন মোটরস এমজির অনুমোদিত পরিবেশক। স্পোর্টস, বাজেট ও এসইউভি শ্রেণিতে এমজির বেশ কয়েকটি গাড়ি দেশের বাজারে পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হলেও এই প্রতিষ্ঠানের গাড়িগুলো চীনে তৈরি হয়। স্পোর্টস ক্যাটাগরিতে ব্র্যান্ড নিউ বিভাগে একমাত্র বৈদ্যুতিক গাড়ি এমজি সাইবারস্টার। এ ছাড়া এমজিফোর ইভি, এমজি ফাইভ, জেডএসটি ও এইচএস মডেলের গাড়িগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। সাইবারস্টারের মূল্য কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও অন্যান্য মডেলের গাড়িগুলো ৩৫–৪৫ লাখ টাকার মধ্যে কিনতে পাওয়া যায়।

হাভাল

প্রথম চীনের তৈরি গাড়ি দেশের বাজারে নিয়ে আসা হাভালের বেশ কয়েকটি মডেল দেশের বাজারে জনপ্রিয়। দেড় লিটারের হাভাল জলিয়ন হাইব্রিড ও নন–হাইব্রিড মডেল দেশের বাজারে পাওয়া যায়। হাভাল এসইউভি এবং পিকআপ ধরনের গাড়ি তৈরি করে। তৃতীয় প্রজন্মের মধ্যম ঘরানার এসইউভি এইচসিক্স এবং ৭ আসনে এইচনাইনে মিলবে উন্নত সব ফিচার। পিকআপ লাইনআপে রয়েছে হাভাল পোয়ের। এ ছাড়া হাভালের সাব ব্র্যান্ড ট্যাংকের ৩০০ ও ৫০০ মডেল এবং ওরার ইভি সিরিজের গাড়ি এইস অটোস পরিবেশন করে। ৩৫ লাখ থেকে কোটি টাকার ওপরে গাড়িগুলোর মূল্য হয়ে থাকে।

ডংফেং

এক চার্জে ৪৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারবে, এমন একটি মধ্যম ঘরানার বৈদ্যুতিক গাড়ি দিয়ে দেশের বাজারে ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রি শুরু করেছে ডংফেং। ডংফেংয়ের এই গাড়ির মডেল নাম্মি বক্স। দেশের বাজারে ডংফেংয়ের গাড়ির অনুমোদিত পরিবেশক বাংলামার্ক লিমিটেড। ৪৩ দশমিক ৮৯ কিলোওয়াট ব্যাটারি, ১২ দশমিক ৮ ইঞ্চি টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে, স্বয়ংক্রিয় পার্কিং, ৩৬০° ক্যামেরা, এআই-ভিত্তিক ড্রাইভিং অ্যাসিস্ট সিস্টেম, বৈদ্যুতিক উষ্ণ ও শীতল সুবিধাসহ আসন মিলবে হ্যাচবেক ধরনের এই গাড়িতে। গাড়িটির মূল্য ৩৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

জিএসি

দেশের বাজারে ডিএইচএস মোটরস পরিবেশন করছে চীনের গুয়াংজু অটোমোবাইল গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড, যার সংক্ষিপ্ত রূপ জিএসি। এমপিভি ক্যাটাগরিতে দেশের প্রথম প্লাগ ইন হাইব্রিড মডেলের বিলাসবহুল ইনাইন ট্রাম্পচি দেশের বাজারে নিয়ে এসেছে ডিএইচএস মোটরস। ২০২৫ সালের মে মাসে অটোমোবাইল ফেয়ারের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানের গাড়িগুলো প্রদর্শন করা হয়। জিএসির নির্মিত অন্য মডেলগুলো হলো জিএসথ্রি ইমজুম ও ইমকো। গাড়িগুলোর মূল্য ৩৫ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
ডিএফএসকে, বেইক, চ্যাংগানসহ আরও বেশ কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।  

দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি গাড়িও মিলছে

দেশে তৈরি হচ্ছে ছোট আকারের হ্যাচবেক ডিজাইনের বৈদ্যুতিক গাড়ি। ২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘পালকি মোটরস’–এর যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটি সাশ্রয়ী মূল্যে দেশের বাজারে দুটি গাড়ি বিক্রি করছে। পালকি সিটিবয় ও পালকি রিভোল্ট। চার ও দুই আসনবিশিষ্ট এই গাড়িগুলোর প্রতি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে খরচ হবে মাত্র ১ দশমিক ২০ টাকা। একবার পূর্ণচার্জে গাড়িগুলো ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে সক্ষম। গাড়িগুলোর সর্বোচ্চ গতি যথাক্রমে ৫০ ও ৬০ কিলোমিটার। লিথিয়াম আয়ন ফসফেট ব্যাটারি ব্যবহার করার পাশাপাশি গাড়িগুলোতে রয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রণী ও ব্যাটারি-সোয়াপ প্রযুক্তি। পালকি গাড়ি বিলাসবহুল না হলেও গাড়ির ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৯ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১৪ লাখ টাকার মধ্যে গাড়িগুলো কেনা যাবে।
বাংলাদেশের গাড়ির বাজার ক্রমেই বিকাশমান। বিশেষ করে ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির চাহিদা গত এক দশকে চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ অন্য মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত যানবাহনের চাহিদা বেড়েছে। এর পেছনে রয়েছে নগরায়ণ, আয় বৃদ্ধির হার এবং পরিবহনে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। নতুন গাড়ির পেছনে জনপ্রিয়তার মূল কারণ হলো মান, নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, সামাজিক মর্যাদা ও দীর্ঘমেয়াদি নির্ভরতা। এসব কারণ মিলিয়ে বাংলাদেশে ধীরে ধীরে ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির বাজার বড় হচ্ছে।

আনকোরা গাড়ি কেনার সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমন অসুবিধাও রয়েছে। ব্যবহৃত গাড়ির বাজারে নতুন গাড়ির দাম অনেকাংশেই পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় না। ফলে অনেকেই রিকন্ডিশন গাড়ির দিকে ঝোঁকেন। গাড়ি তৈরির যন্ত্রাংশের নৈপুণ্য নিয়েও অনেক ক্রেতা সংশয় প্রকাশ করে থাকেন। নির্দিষ্ট সার্ভিস সেন্টার ছাড়া স্পেয়ার পার্টস পাওয়া কঠিন। রাজধানী ছাড়া নতুন আসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভিস সেন্টারের সেবা সারা দেশে পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশে গাড়ির বাজার এখনো তুলনামূলকভাবে ছোট, তবে ধীরে ধীরে এটি সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রতিবছর দেশে ২০-২৫ হাজার নতুন গাড়ি আমদানি হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগই রিকন্ডিশনড, তবে ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির বাজারও ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে। নতুন গাড়ির মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উচ্চ শুল্ক ও করকাঠামো। একটি ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির ওপর আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও রেজিস্ট্রেশন ফি মিলিয়ে মোট খরচ দ্বিগুণের বেশি হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১ হাজার ৫০০ সিসির একটি নতুন গাড়ির দাম যদি আন্তর্জাতিক বাজারে হয় ২০ লাখ টাকা, বাংলাদেশে এসে তা ৪০-৪৫ লাখ টাকার বেশিতে বিক্রি করতে হয়। তবে সরকারের পরিবেশবান্ধব পরিবহনের প্রতি আগ্রহ এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর শুল্কছাড়ের নীতির কারণে ভবিষ্যতে এই বাজারে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।