সাক্ষাৎকার

মোটরসাইকেল এখন জীবনযাত্রার অংশ

এসিআই মোটরস বাংলাদেশে ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের একমাত্র পরিবেশক। এসিআই লিমিটেডের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করে। এসিআই মোটরস ইয়ামাহা মোটরসাইকেল ও স্কুটার আমদানি, সংযোজন ও বিতরণে কাজ করছে বাংলাদেশে। এসিআই মোটরসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুব্রত রঞ্জন দাস জানাচ্ছেন বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজার ও ইয়ামাহার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহিদ হোসাইন খান।

প্রথম আলো:

একটা সময় দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে ইয়ামাহা বাইক বেশি জনপ্রিয় ছিল। এখন দেখা যায়, তরুণ প্রজন্মের কাছেও ইয়ামাহা প্রিয়। কেন?

সুব্রত রঞ্জন দাস: ইয়ামাহা ৭০ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও ইয়ামাহার ইতিহাস বেশ পুরোনো। কয়েক প্রজন্মের মানুষের কাছে ইয়ামাহা বেশ পরিচিত। এখনকার জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের কাছেও এই ব্র্যান্ড বেশ জনপ্রিয়। এখন তো মোটরসাইকেল একটা লাইফস্টাইল পণ্য, যে কারণে তারুণ্যের কাছে ইয়ামাহার আবেদন অন্য রকম। আমাদের সব ধরনের বাইকে আধুনিক প্রযুক্তি, ব্রেকিং সিস্টেমের পাশাপাশি আধুনিক ডিজাইনের চমক থাকে। এসব কারণে তরুণেরা ইয়ামাহা বাইক কিনতে আগ্রহী। আমাদের ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব রয়েছে সারা দেশে। প্রায় ১১৬টি ক্লাবের মধ্যে ১৬ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের বাজারে ইয়ামাহার নতুন মডেল আসতে কত দিন লাগে?

সুব্রত রঞ্জন দাস: বাজারে বছরে আমরা ইয়ামাহার প্রায় বিভিন্ন মডেলের আধুনিক সব মোটরসাইকেল বিক্রি করছি। মোটরসাইকেলের ভ্যালুর বিষয়ে আমরা আসলে বাজারে এখন প্রথম স্থানে রয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তি, নিরাপদ মোটরসাইকেল, বিক্রয়োত্তর সেবাসহ বিভিন্ন বিষয়ের কারণে আমরা বিক্রয়ের হিসাবেও বাজারে শীর্ষ স্থানে রয়েছি। আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো মডেলের মোটরসাইকেল আসার পর বাংলাদেশের বাজারে ৮-৯ মাসের মধ্যে আমরা বিভিন্ন মডেলের বাইক হাজির করছি।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের বাজার কত বড়? ইয়ামাহার মার্কেট শেয়ার কত?

সুব্রত রঞ্জন দাস: বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজার বর্তমানে বেশ বড় ও গতিশীল। যদিও কোভিড-১৯ মহামারির সময় এবং কিছু নীতিগত কারণে এর প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীরগতির হয়েছিল। বর্তমানে এটি আবার বছরে ১৬-১৭ শতাংশ হারে বিকশিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আমাদের বাজার মূল্যায়ন তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে বিক্রি বেড়েছে। বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজার ৭–৮ হাজার কোটি টাকা, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেল কেনার জন্য বিশেষ ঋণ প্রদান করতে পারে। যা মোটরসাইকেলের বাজার বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে । বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারে ইয়ামাহা একটি সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। বিশেষ করে প্রিমিয়াম এবং স্পোর্টস সেগমেন্টে ইয়ামাহার বাইকগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই ভি–২ ও এফজেডএস এফআই ভি-৩ মডেলগুলো বাইকারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

প্রথম আলো:

অন্য সব বাইকের তুলনায় ইয়ামাহা বাইকের দাম বেশি কেন?

সুব্রত রঞ্জন দাস: ইয়ামাহার বাইকে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সর্বশেষ নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। অন্যান্য ব্র্যান্ডের বাইকের তুলনায় ইয়ামাহার বাইকের দাম আসলে বেশি নয়। ইয়ামাহা গবেষণায় ও উন্নয়নে প্রচুর বিনিয়োগ করে, যার ফলে তাদের বাইকগুলোতে অত্যাধুনিক ইঞ্জিন প্রযুক্তি, উন্নত ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম, উচ্চ মানের সাসপেনশন এবং ব্রেকিং সিস্টেম (যেমন এবিএস—অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম) যুক্ত থাকে। কিছুটা বেশি মনে হতে পারে, দীর্ঘ মেয়াদে এর কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এবং দীর্ঘস্থায়ী কর্মক্ষমতা বিবেচনা করলে এটি একটি লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে প্রমাণিত।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের বাজার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সুব্রত রঞ্জন দাস: আমরা বাংলাদেশে মোটরসাইকেল বাজারের প্রবৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ে বেশ আশাবাদী। আমরা মোটরসাইকেল চালানো নিয়ে অনেকেরই যে নেতিবাচক ভাবনা রয়েছে, তা কাটাতে কাজ করছি। বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলারস অ্যান্ড ম্যনুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএএমএ) সদস্যদের আরও কার্যকর করার বিষয়টি আমার মনে হয় আমাদের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আরও বিক্রয়োত্তর সেবার পরিধি বাড়াতে চাই।এ ছাড়া ভবিষ্যতে যেন বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক সেবা সংস্থা থেকে মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য আর্থিক ঋণের পরিধি বাড়ানো হয়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করতে চাই। বাংলাদেশে ইয়ামাহার ‘মেড ফর বাংলাদেশ’ মোটরসাইকেলের বিক্রি আমরা আরও বাড়াতে চাই। আমরা ২৫০ সিসি মডেলের হালনাগাদ সংস্করণের মোটরসাইকেল আনছি। প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের ভবিষ্যতের লক্ষ্য আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মোটরসাইকেল রপ্তানির জন্য আমরা কাজ করতে চাই। বাংলাদেশ থেকে অনেক দেশের বাজারে মোটরসাইকেল বিক্রির সুযোগ আছে।