অনলাইনে মিলছে গাড়ি চুরির যন্ত্র, উদ্বেগ বাড়ছে যুক্তরাজ্যে

যুক্তরাজ্যে চাবিবিহীন গাড়ির চুরি বাড়ছেছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যে চাবিবিহীন বা কিলেস প্রযুক্তির গাড়ি চুরি বাড়ছে। এই গাড়ি চুরি করতে ইলেকট্রনিক যন্ত্র অনলাইনে ২০ হাজার পাউন্ড বা ৩২ লাখ ১৮ হাজার বাংলাদেশি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাড়ির দরজায় কোনো ভাঙচুর না করেই এসব যন্ত্র ব্যবহার করে কয়েক মিনিটের মধ্যে গাড়ি চুরি করা যাচ্ছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির একটি অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাজ্যে এ ধরনের যন্ত্রের মালিকানা নিষিদ্ধ করার জন্য নতুন আইন করার প্রস্তুতি চলছে। এসব যন্ত্র বাড়ির ভেতরে থাকা চাবির সিগন্যাল ধরে তা গাড়ির কাছে পৌঁছে দেয়। এতে গাড়ির দরজা খুলে যায়। খুব সহজে ইঞ্জিন চালু করা সম্ভব হয়। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আইনের কড়াকড়ি বাড়ানো হলেও সংগঠিত অপরাধী চক্রকে রুখে দেওয়া সহজ হবে না। এসব যন্ত্র এখন অপরাধী চক্রের নেটওয়ার্কের সদস্যরা রীতিমতো ভাড়া দিয়ে ব্যবহার করছে। এই যন্ত্র ব্যবহার করে ল্যাম্বরগিনি ও মেসেরাতিসহ দামি গাড়ি সহজে চুরি করা যাচ্ছে। কিছু যন্ত্রের দাম ২৫ হাজার ইউরো বা ৩৫ লাখ ৪৫ হাজার বাংলাদেশি টাকা পর্যন্ত হয়। কিছু যন্ত্র সাধারণ ব্লুটুথ স্পিকারের মতো দেখায়। সহজে ব্যবহারযোগ্য হয় বলে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কোনোভাবেই আলাদা করে বাইরে থেকে চেনা না যায়।

যুক্তরাজ্যের ওলভারহ্যাম্পটনের বাসিন্দা অ্যাবি ব্রুকস–মরিস বলেন, ‘আমার গাড়িটি এমন একটি যন্ত্র ব্যবহার করে চুরি করা হয়। ঘটনার সময় বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। চোরেরা ঘরে ঢোকেনি। মনে হচ্ছে নিজের ঘরে ঢুকে চুরি করেছে। এমন যন্ত্র আছে তা আগে জানতাম না। দরজায় থাকা ক্যামেরায় দেখা যায়, কয়েকজন লোক গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দরজার ভেতরের চাবির সিগন্যাল ধরার চেষ্টা করছে। পরে অবশ্য পুলিশ গাড়িটি অনেক দূরের এলাকা থেকে উদ্ধার করে। এভাবে চুরির কারণে গাড়ি স্থায়ীভাবে অচল হয়ে গেছে বলে আর ব্যবহার করা যাবে না। যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) জানিয়েছে, গত ১২ মাসে যুক্তরাজ্যে এক লাখের বেশি গাড়ি চুরি হয়েছে। বিমা প্রতিষ্ঠান অ্যাডমিরালের তথ্য অনুযায়ী, চুরি হওয়া গাড়ির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই কিলেস মডেলের। যদিও এসব চুরির মধ্যে কতবার বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

এ ছাড়া দেখা যায়, উন্নত মানের কিছু যন্ত্র গাড়ির জিপিএস ট্র্যাকারের সংযোগ পর্যন্ত অকার্যকর করে দিতে পারে। এতে গাড়ি চুরি হওয়ার পর কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা শনাক্ত করা যায় না। থ্যাচাম রিসার্চের প্রযুক্তিবিভাগীয় পরিচালক রিচার্ড বিলিয়েল্ড বলেন, এসব ডিভাইসের কোনো বৈধ ব্যবহার নেই। এখন অপরাধী চক্র পরিকল্পিতভাবে অর্ডার অনুযায়ী গাড়ি চুরি করছে। চোরেরা বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে। গাড়ি উদ্ধার বিশেষজ্ঞ নিল থমাস বলেন, একটি ডিভাইস এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে ব্যবহার করা হয়। অপরাধীরা ডিভাইসের জন্য অনেক টাকা দেয়। সপ্তাহে ১০টি গাড়ি চুরি করে ডিভাইস কেনার টাকার সমান চুরি করা যায়।

সূত্র: বিবিসি