কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি সৃজনকর্মের মালিকানা কে পাবেন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
ছবি: রয়টার্স

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) পরিচালিত যন্ত্রে তৈরি লেখা, ছবি ও গান—শিল্পের জন্য নতুন ক্ষেত্র যা সৃজনশীল ব্যবসার ক্ষেত্রে কৌশলী প্রশ্ন তুলেছে। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এআইয়ের সহায়তায় তৈরি করা নিবন্ধ পরীক্ষা করে। এতে দেখা যায়, এআই বেশ দক্ষভাবেই আধেয় তৈরি করতে পারে। কিন্তু অনেক শিল্পী ও সৃজনশীল কাজভিত্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য এই এআই হুমকি তৈরি করেছে। কারণ, এই প্রযুক্তি কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই প্রশিক্ষণে (মেশিন লার্নিং) পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মানুষের তৈরি শিল্পের অনুলিপি তৈরি করতে পারে। এতে শিল্পীদের বাজার হুমকিতে পড়েছে। কেউ কেউ এই বিষয়টিকে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরির শামিল হিসেবে দেখছেন।

সম্প্রতি স্পটিফাই ও অ্যাপলসহ মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোকে ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ তাদের গান স্ক্র্যাপিং করা থেকে এআই ব্যবস্থাকে ব্লক করতে বলেছে। বিনিয়োগকারীরা এআইয়ের পেছনে কোটি কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছেন। এই বিনিয়োগ এআইয়ের সৃজনশীলতার ওপরই বেশি নির্ভরশীল। সব মিলিয়ে এআইয়ের তৈরি শিল্প বা সৃজনশীল কর্ম নিয়ে তিন ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

অনুকরণ করে তৈরি শিল্পের মূল উপাদানের স্রষ্টারা কী পাবেন

গত জানুয়ারিতে একদল শিল্পী ছবি তৈরির সফটওয়্যার নির্মাতা লন্ডনভিত্তিক স্ট্যাবিলিটি এআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ডেটা প্রশিক্ষণে শিল্পীদের কাজ ব্যবহার করেছে এবং সেসব কাজের অনুকরণে তাদের মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করেছে। মামলাকারীদের একজন কার্টুনিস্ট সারাহ এন্ডারসন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, শিল্পীদের ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের মতামতের সুযোগ থাকা উচিত এবং এর জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।

গেটি ইমেজও যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্যাবিলিটি এআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি তাদের লাখ লাখ ছবিতে মেধাস্বত্বের ‘নির্লজ্জ লঙ্ঘন’ করেছে। গেটির যুক্তি, এ ধরনের চুরি খুবই আপত্তিকর; কারণ, মেশিন লার্নিংয়ের জন্য তাদের ডেটা লাইসেন্স করার চুক্তি রয়েছে। স্ট্যাবিলিটি এআই এখন পর্যন্ত এসব অভিযোগের ব্যাপারে কোনো জবাব দেয়নি।

শিল্পীর সৃজনকর্মের ন্যায্য ব্যবহার

স্ট্যানফোর্ড ল স্কুল কার্যক্রমের পরিচালক মার্ক লেমলি বলেছেন, মেধাস্বত্বযুক্ত কাজগুলো নিবন্ধ, সমালোচনা বা অন্যান্য ‘রূপান্তরমূলক’ কাজের ক্ষেত্রে অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে রোবটগুলো প্রথাগতভাবেই দায় মুক্তি পেয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এআই যন্ত্রের এমন অনুকরণে আদালত খুব একটা সমব্যথী হবে না।

লেমলি মেশিন লার্নিংয়ে মেধাস্বত্বযুক্ত উপাদান ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন একটি গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড ঠিক করার আহ্বান জানান। যেখানে মেধাস্বত্বের উদ্দেশ্য প্রাধান্য পাবে। কেবল শিক্ষার জন্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে হয়তো অনুমতি পাবে। তবে পুনরুৎপাদনের উদ্দেশ্য হলে অনুমতি মিলবে না। আর নতুন প্রযুক্তিগুলোর মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনের পেছনে কাকে দায়ী করবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। প্রযুক্তিটিকে নির্দেশদাতা ব্যবহারকারী, না যে প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিটি তৈরি করেছে সেটি দায়ী। নাকি উভয়ই?

এআইয়ের তৈরি শিল্পের মালিকানা কে পাবে

এখন কেবল মানুষের তৈরি শিল্পকর্মে মেধাস্বত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু আংশিকভাবে এআইয়ের ওপর নির্ভর করে তৈরি শিল্পকর্মের মেধাস্বত্ব কে পাবে? কিছু প্রকৌশলী বলছেন, তাঁরা তাঁদের যন্ত্র দিয়ে তৈরি আধেয়র মেধাস্বত্ব দাবি করবেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের মেধাস্বত্ব অফিস ছবিভিত্তিক একটি উপন্যাসের জন্য এআইয়ের তৈরি ছবির মেধাস্বত্ব দেয়নি। যদিও সরকার এআই টুলকে শিল্পী ভাড়া করার সঙ্গে তুলনা করেছে। তবে এ ধরনের তুলনা হয়তো প্রযুক্তিটির ব্যবহার সাধারণ স্তরে পৌঁছালে থাকবে না। সব মিলিয়ে এ ধরনের প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি সৃজনকর্মের ক্ষেত্রে মেধাস্বত্বের বিষয়টি জটিলই হবে।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস