মৃত্যুর পর আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টগুলোর কী হবে, ভেবে দেখেছেন কখনো
ডিজিটাল যুগে মানুষের অনলাইন উপস্থিতি তাঁর জীবনের অপরিহার্য অংশ। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ক্লাউডে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ ছবি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার মতো আর্থিক সম্পদ—এসবই এখন ব্যক্তিগত ও আর্থিক পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু মৃত্যুর পর এসব ডিজিটাল সম্পদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে অনেকেই ভেবে দেখেন না। ডিজিটাল সম্পদের সুরক্ষা এবং উত্তরাধিকার নিশ্চিত করার কোনো পরিকল্পনা না থাকলে প্রিয়জনদের আইনি জটিলতা ও আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। এ কারণে ডিজিটাল সম্পদের সুরক্ষা ও উত্তরাধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
ডিজিটাল সম্পদ কী
ডিজিটাল সম্পদ বলতে অনলাইনে সংরক্ষিত বা পরিচালিত যেকোনো তথ্য বা সম্পদকে বোঝায়। এর মধ্যে রয়েছে অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট, ক্রিপ্টোকারেন্সি, বিনিয়োগ পোর্টফোলিও, ই–মেইল, ক্লাউড স্টোরেজে সংরক্ষিত ডকুমেন্ট, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ও ব্লগ বা পেটেন্টের মতো মেধাস্বত্ব।
ডিজিটাল সম্পদের উত্তরাধিকার কেন গুরুত্বপূর্ণ
ডিজিটাল সম্পদের আর্থিক মূল্য ছাড়াও এগুলোর সঙ্গে আবেগঘন স্মৃতি জড়িত থাকে। ফলে এর আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। একটি পরিকল্পিত ডিজিটাল উত্তরাধিকারের ফলে আইনি ও আর্থিক জটিলতা দূর হওয়ার পাশাপাশি এসব সংরক্ষণেও সহায়ক হবে।
ডিজিটাল সম্পদ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ
ডিজিটাল সম্পদের ব্যতিক্রমী ও অনন্য বৈশিষ্ট্য এর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশেষ চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। মৃত্যুর পর অনেক মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা থাকে। পাসওয়ার্ড ও এনক্রিপশন ছাড়া এসব সম্পদে প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব। অনেকে জীবদ্দশায় সম্পদের তালিকা তৈরি না করায় প্রিয়জনেরা এগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কেও জানেন না।
ডিজিটাল সম্পদের পরিকল্পনা করার ধাপ
প্রথমে নিজের সব ডিজিটাল সম্পদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। এতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের নাম, ব্যবহারকারীর নাম, পাসওয়ার্ড এবং টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন কোড রাখতে হবে। অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যবহৃত ই–মেইল এবং ফোন নম্বরও তালিকায় যুক্ত করা উচিত।
ডিজিটাল সম্পদ সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী ও আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। প্রতিটি অ্যাকাউন্টে দ্বিস্তর বা টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সক্রিয় রাখতে হবে এবং সংবেদনশীল ডেটা এনক্রিপশন পদ্ধতিতে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
মৃত্যুর পর ডিজিটাল সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য একজন বিশ্বস্ত ও প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিকে ডিজিটাল নির্বাহক হিসেবে মনোনীত করতে হবে। এই ব্যক্তিকে প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হতে হবে এবং যিনি তাঁকে নির্বাচন করবেন, তাঁর ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। তাঁকে প্রয়োজনীয় সব তথ্য এবং অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকারের ক্ষমতা আগেই সরবরাহ করতে হবে।
উইলে ডিজিটাল সম্পদের ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। প্রতিটি সম্পদের জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি দিতে হবে। লগইন তথ্য বা পরিচিতিসংক্রান্ত তথ্য আলাদা নথিতে সংরক্ষণ করে উইলে তার উল্লেখ করতে হবে। ডিজিটাল নির্বাহককে আইনি ক্ষমতা প্রদান করাও জরুরি।
জটিল ও উচ্চ মূল্যের সম্পদের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। এতে সম্পদের আইনি মালিকানা নিশ্চিত করা যাবে এবং দক্ষ ট্রাস্টি এসব সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা করবে। এ ছাড়া ডিজিটাল সম্পদ সুরক্ষা ও উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে পেশাদার আইনজীবীর সহায়তা নিতে হবে। ফলে ডিজিটাল সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া