যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, তবে সেন্সরশিপ নিয়ে উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরও ব্যবহারকারীদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির সেন্সরশিপ নীতি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকে দাবি করছেন, টিকটকে এখন আগের মতো মুক্ত মত প্রকাশের জায়গা নেই। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন এই অ্যাপটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে পুনরায় চালু হয়। তবে এর নীতিমালা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
টিকটক সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় একটি নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর। বাইডেন প্রশাসনের উদ্যোগে এবং দ্বিদলীয় সমর্থনে পাস হওয়া এই আইনটি জাতীয় নিরাপত্তার শঙ্কার কারণে টিকটককে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করার শর্ত দেয়।
টিকটক তাদের প্ল্যাটফর্মে সেন্সরশিপের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘আমাদের নীতিমালা বা অ্যালগরিদমে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে এ প্রক্রিয়ায় সাময়িক কিছু সমস্যার কারণে ব্যবহারকারীদের অ্যাক্সেস বা ফিচার ব্যবহারে প্রভাব পড়তে পারে।’
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, টিকটকে কনটেন্ট মডারেশনের মাত্রা বেড়েছে। লাইভস্ট্রিমের সংখ্যা কমে যাওয়া, পোস্ট দ্রুত সরিয়ে ফেলা এবং ‘কমিউনিটি গাইডলাইন’ লঙ্ঘনের অজুহাতে কনটেন্ট চিহ্নিত করার ঘটনা বেড়েছে।
কিছু ব্যবহারকারী বলছেন, সীমিত সার্চ রেজাল্ট, ভুয়া তথ্য নিয়ে সতর্কবার্তা এবং কনটেন্ট প্রকাশের আগে উৎস যাচাইয়ের নির্দেশ তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
টিকটক ব্যবহারকারী লিসা ক্লাইন অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনামূলক একটি ভিডিও আপলোড করতে তিনি ছয়বার ব্যর্থ হন। তিনি বলেন, ‘টিকটকের সেন্সরশিপের কারণে ভিডিওটি পোস্ট করা যাচ্ছিল না। আশা করি, অন্য প্ল্যাটফর্মে এটি কাজ করবে।’ কনটেন্ট ক্রিয়েটর প্যাট লোলার জানান, টেসলা সিইও ইলন মাস্কের একটি অঙ্গভঙ্গি নিয়ে তার তৈরি একটি বিদ্রূপাত্মক ভিডিও প্রথমে ‘ভুয়া তথ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরে ভিডিওটির শেয়ারিং সীমিত করে দেওয়া হয়। ২৭ বছর বয়সী রাজনৈতিক বিশ্লেষক দানিশা কার্টার জানান, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর টিকটক তার অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেছে। প্ল্যাটফর্মটি জানায়, একাধিক নীতিমালা লঙ্ঘনের জন্য তার অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে কার্টার দাবি করেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
অনেক ব্যবহারকারী বলছেন, তাঁরা রাজনৈতিক কনটেন্ট না তৈরি করলেও টিকটকের নীতিমালার শিকার হচ্ছেন। ডেটা বিশ্লেষক আডা “মিলা” অর্টিজ জানান, সাধারণ কিছু মন্তব্যের পরও তিনি সতর্কবার্তা পেয়েছেন। তাঁকে জানানো হয়, আর একটি নীতিমালা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে তিনি কিছু ফিচার ব্যবহারে অক্ষম হবেন। অর্টিজ বলেন, ‘ঘটনাগুলো এত দ্রুত এবং আকস্মিকভাবে ঘটছে যে মনে হচ্ছে আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে।’ পরে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের পক্ষে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পবিরোধী ১৫টি ভিডিও মুছে ফেলেছেন।
সূত্র: ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেস