অনলাইনে নিরাপদ থাকার ৭ পদ্ধতি

সাইবার হামলা থেকে রক্ষা পেতে করণীয় বিভিন্ন তথ্য সবার কাছে তুলে ধরতে বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও অক্টোবর মাসজুড়ে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (ক্যাম) পালন করা হচ্ছে। বেশ কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে অনলাইনে সহজেই নিরাপদ থাকা যায়। অনলাইনে নিরাপদ থাকার সাতটি কৌশল নিয়েই এবারের মূল প্রতিবেদন। লিখেছেন ইশতিয়াক মাহমুদ

অলংকরণ : আপন জোয়ার্দার

১. নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ

অনলাইনে নিরাপদ থাকতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ। কিন্তু এ বিষয় সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নন। আর তাই বেশির ভাগ মানুষই সাইবার ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, বিমানবন্দর বা রেলস্টেশনে থাকা গণ বা পাবলিক ওয়াই-ফাই সংযোগ ব্যবহার করেন। প্রয়োজনেও এটি করতে হয়। অনেক সময় পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা তেমন শক্তিশালী থাকে না। ফলে ব্যবহারকারীর ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট আইডি ও পাসওয়ার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ ব্যক্তিগত তথ্য চুরির আশঙ্কা থাকে। আর তাই পাবলিক ওয়াই-ফাই বা সাইবার ক্যাফেতে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় অবশ্যই ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার করতে হবে। ভিপিএনে ব্যবহারকারীদের তথ্যে কোড যুক্ত বা এনক্রিপ্ট করে বিনিময় হওয়ায় সহজে সেগুলো সংগ্রহ করতে পারে না সাইবার অপরাধীরা। 

২. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড

অনলাইনে নিরাপদ থাকতে ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোতে অবশ্যই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জোরদার করতে কমপক্ষে ছয় অক্ষরের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। পাসওয়ার্ড যত বড় হবে, ততই নিরাপদ। তবে নিজের প্রিয়জন বা পছন্দের জীবজন্তু বা বস্তুর নামের সমন্বয়ে পাসওয়ার্ড দেওয়া যাবে না। পাসওয়ার্ডে অবশ্যই ছোট-বড় অক্ষরের পাশাপাশি একাধিক সংখ্যা ও চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পাশাপাশি অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তায় অবশ্যই দুই স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা (টু ফ্যাক্টর অথেন্টিফিকেশন) ব্যবহার করা উচিত। 

৩. হালনাগাদ অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার এবং সফটওয়্যার ব্যবহার 

অনলাইনে নিরাপদ থাকতে কম্পিউটার এবং মুঠোফোনে হালনাগাদ অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। শুনতে অবাক লাগলেও ঘটনা কিন্তু সত্যি। কারণ, হালনাগাদ অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার এবং সফটওয়্যারের নিরাপত্তাব্যবস্থা বেশ শক্তিশালী থাকে। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় সাইবার হামলার আশঙ্কা থাকলে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করার পাশাপাশি হামলা প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। 

৪. তথ্য বিনিময়ে সতর্কতা ও সংরক্ষণ

আমরা অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইট বা মেসেজিং সেবায় ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের ছবি বা তথ্য দিয়ে থাকি। এতে পরিচিতদের পাশাপাশি অপরিচিতরাও বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য জেনে যান। ফলে সাইবার অপরাধীরা চাইলেই ছবি বা তথ্যগুলো কাজে লাগিয়ে সাইবার হামলা চালাতে পারে। আবার অ্যাকাউন্ট বেহাত হলে সব তথ্য এবং ছবিগুলো সাইবার অপরাধীদের দখলে চলে যেতে পারে। আর তাই নিরাপদ থাকতে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নষ্ট করতে পারে, এমন কোনো তথ্য ও ছবি অনলাইনে বিনিময় না করাই ভালো। এর পাশাপাশি কম্পিউটার এবং মুঠোফোনে থাকা তথ্য পেনড্রাইভ, আলাদা হার্ডডিস্ক, ক্লাউড বা অন্য কোনো মাধ্যমে সংরক্ষণ করা উচিত। এর ফলে সাইবার হামলার শিকার হলেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিরাপদে থাকবে।

৫. ফিশিং লিংকে ক্লিক না করা

ব্যবহারকারীদের বোকা বানাতে বিভিন্ন প্রলোভন ও সুবিধা দেওয়ার নাম করে ই-মেইল এবং সামাজিক যোগাযোগ সাইটে বার্তা পাঠিয়ে থাকে সাইবার অপরাধীরা, যা ফিশিং আক্রমণ নামে পরিচিত। ফিশিং আক্রমণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। আর তাই অপরিচিত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো ই-মেইলে থাকা লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, লিংকগুলোতে ক্লিক করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে 

ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার কম্পিউটার ও মুঠোফোনে প্রবেশ করে ব্যবহারকারীদের তথ্য ও অর্থ চুরি করতে পারে। আর তাই ই-মেইল বা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সাইটে বিনিময় করা কোনো লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 

৬. ডাউনলোডে সতর্কতা 

অনেকেই অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা স্টোর থেকে অপরিচিত প্রতিষ্ঠানের তৈরি অ্যাপ বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করে ব্যবহার করেন। কিন্তু এর মাধ্যমে মুঠোফোন বা কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে সাইবার হামলা চালাতে পারে সাইবার অপরাধীরা। আর তাই অ্যাপ বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। অপরিচিত ও অবৈধ উৎস থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে না। একই সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া মুঠোফোন বা কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহারের অনুমতি নেওয়া অ্যাপ বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 

৭. হালনাগাদ অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার

অনলাইনে নিরাপদ থাকার জন্য অ্যান্টিভাইরাস বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি বিনা মূল্যের অ্যাপ পাওয়া যায়। তবে টাকার বিনিময়ে অ্যান্টিভাইরাস কিনে ব্যবহার করলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। ফলে অনলাইনে নিরাপদ থাকার সম্ভাবনা বাড়বে।