যে কারণে ক্ষমা পেলেন স্যামসাং গ্রুপের উত্তরাধিকারী লি জে ইয়ং

লি জে ইয়ং। সাম্প্রতিক ছবিএএফপি

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাং গ্রুপের উত্তরাধিকারী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি লি জে ইয়ংকে ক্ষমা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইয়োল। লি জে ইয়ংকে বলা হয় দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক খাতে সবচেয়ে প্রভাবশালী অপরাধী। তবে গত শুক্রবার তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষমা ঘোষণার বিষয়ে দক্ষিণ কোরীয় সরকারের ব্যাখ্যা হলো মহামারি–পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট পাক গান-হে দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে স্যামসাং গ্রুপের উত্তরাধিকারীর সম্পৃক্ততা ছিল। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাক গান-হে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মূলত দুর্নীতির দায়ে পাক গান-হে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন এবং তাঁকে কারাগারেও যেতে হয়েছিল। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পাককে ঘুষ দিয়েছিলেন লি। এ জন্য দুবার কারাগারে যেতে হয়েছে তাঁকে।

লির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

২০১৪ সাল থেকে লি জে ইয়ং স্যামসাং পরিচালনার দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপর লি স্যামসাং গ্রুপের দুটি কোম্পানি একীভূত করার উদ্যোগ নেন। এ সময় কোম্পানির অংশীদারেরা তীব্র আপত্তি তোলেন। মূলত এই সময়ই প্রতিষ্ঠানের ওপর তাঁদের পরিবারের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পাক হে-গান এবং প্রেসিডেন্টের সহকারীকে লি জে ইয়ং ৮০ লাখ ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।
এর এক বছর পর স্যামসাংয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ অন্যান্য অভিযোগে লি জে ইয়ংকেও কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। তবে পাক গানের পর ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনও দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর কিছু করতে পারেননি। উল্টো তাঁর ক্ষমতার শেষ ভাগে দণ্ডিত সাবেক প্রেসিডেন্ট পাক গান হেকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এর আট মাস পর স্যামসাংয়ের লি জেও মুক্তি পান। তবে আদালতে লির মামলা কয়েক বছর ধরে ঝুলে ছিল।

লির কারাদণ্ড হলেও আপিল আদালতে তিনি মুক্তি পান। পরে আবার উচ্চ আদালত পুনরায় বিচারের আদেশ দিলে লি দোষী সাব্যস্ত হন। পুনরায় তাঁকে কারাদণ্ড দেন। তবে কোরিয়ান সিরিজের মতো লির মামলা নানা রকমভাবে বাঁক বদল করেছে। লিকে দ্বিতীয় দফা কারাদণ্ড দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে সরকার তাঁকে ‘জাতীয় স্বার্থে’ প্যারোলে মুক্তি দেয়। এরপর থেকেই জনসমক্ষে আসতে শুরু করেন লি। গত মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গেলে লি জে তখন বাইডেনের সঙ্গে দেখা করেন। লির দণ্ড মওকুফ করে দেওয়ার অর্থ, স্যামসাংয়ের নির্বাহী দায়িত্ব পালন করতে তাঁর আর কোনো বাধা নেই।

স্যামসাং লোগো
স্যামসাং

অক্টোপাস-তত্ত্ব

দক্ষিণ কোরিয়ার বড় বড় কোম্পানির মালিকেরাই মূলত দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ওই দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৮০ শতাংশ আসে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি থেকে। এর মধ্যে স্যামসাং, এলজি, হুন্দাই, লোট্টি ও এসকে-এর মতো কোম্পানি রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে স্যামসাং সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী বলে বিবেচিত হয়।
কানাডার টরন্টো ইউনিভার্সিটির রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ইউনকাং লি বলেন, স্যামসাং ও অন্য বড় কোম্পানিগুলো দক্ষিণ কোরিয়ায় অনেকটা অক্টোপাসের মতো। এই অক্টোপাস রাজনীতির সর্বোচ্চ পর্যায়কেও স্পর্শ করেছে বলে তিনি মনে করেন। অধ্যাপক ইউনকাং লির মতে, কোরিয়া যুদ্ধের পরে ওই দেশের সরকার কোম্পানিগুলোকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। তাদের অল্প দামে বিদ্যুৎ ও ব্যাপক কর রেয়াতের সুবিধা দেওয়া হয়। ফলে একধরনের একচেটিয়া ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এর পরিণতি হিসেবে ঘুষ ও দুর্নীতিও ছড়িয়ে পড়ে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা