এখন দেশের বাজারে যে ৫টি বাইক দামি

মোটরবাইক শুধু একটি বাহন নয়, শখ এবং নিজের স্বকীয়তার বহিঃপ্রকাশও ঘটায় এই বাহন। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর পাশাপাশি যানজটের শহরে স্বল্প জায়গায় যেকোনো দূরত্ব পাড়ি দিতে যে বাহন পছন্দে সবার শীর্ষে, সেটিই হলো মোটরসাইকেল বা মোটরবাইক। দেশে মোটরবাইকের বাজারও সমৃদ্ধ হয়েছে। অনুমোদিত বিক্রয়কেন্দ্রে ছয় লাখ টাকার বেশি মূল্যের মোটরবাইকও মিলছে। গতি, স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম এবং নিরাপত্তা বিবেচনায় মোটরসাইকেল কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত। এর মধ্যে স্পোর্টস, রেট্রো, কমিউটার, ফুয়েল সেভার, স্কুটার/স্কুটি অন্যতম। দেশের বাজারে চলতি বছরে দামের দিক থেকে এগিয়ে এমন পাঁচটি বাইকের বিবরণ নিয়েই এ প্রতিবেদন।

ইয়ামাহা আর–১৫ এম

জাপানি অটোমোবাইলস প্রতিষ্ঠান ইয়ামাহা দেশের মোটরবাইক বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করে আসছে। ইয়ামাহার মূল প্রতিষ্ঠান জাপানের হলেও দেশের বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা ইয়ামাহা মোটরবাইকের অনুমোদিত পরিবেশক এসিআই মোটরস। ২০২২ সালের মে মাসে এসিআই মোটরস দেশের বাজারে নিয়ে আসে ইয়ামাহা আর–১৫ এম। বাইকটির দাম ৬ লাখ ৫ হাজার টাকা। স্পোর্টস লুকের পাশাপাশি গতি এবং নিয়ন্ত্রণে বাইকপ্রেমীদের মন কেড়েছে এটি। ১৫৫ দশমিক ১ সিসির একক (সিঙ্গেল) সিলিন্ডার লিকুইড কুলড ভিভিএ ইঞ্জিনে বাইকটির সর্বোচ্চ অশ্বশক্তি (এইচপি) ১০ হাজার আরপিএমে ১৮.৪ বিএইচপি। ৭ হাজার ৫০০ আরপিএমে আর–১৫ এম ১৪.২ নিউটন মিটার (এনএম) টর্ক উৎপাদন করতে সক্ষম। ৬ গিয়ারের এই মোটরসাইকেলটি প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম। আর–১৫ এম ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার গতিতে ছুটে চলতে পারে। চার ভাল্‌ভসমৃদ্ধ বাইকটিতে সামনের চাকায় টেলিস্কোপিক ইউএসডি এবং পেছনের চাকায় মনোশক সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। ডুয়েল চ্যানেল অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস), টিউবলেস টায়ার, এলইডি প্রজেকশন হেডলাইট, ডিজিটাল স্পিডোমিটার, কুইক শিফটার, সাইড স্ট্যান্ড কিল সুইচ, স্মার্টফোন ব্লুটুথ সংযোগ–সুবিধা ও ট্র্যাকশন কন্ট্রোল সিস্টেমে সমৃদ্ধ আর–১৫এম বাইক।

কেটিএম ডিউক ১২৫ ইউরোপিয়ান

স্পোর্টস বাইকপ্রেমীদের মধ্যে কেটিএম মোটরবাইকের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। অস্ট্রিয়ার বাইক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেটিএম রেসিং জগতে বেশ আলোচিত। দেশের বাজারে কেটিএমের অনুমোদিত পরিবেশক রানার অটোমোবাইল লিমিটেড। ১২৫ সিসি শ্রেণিতে কেটিএমের রয়েছে এমন একটি বাইক, যার মূল্য ছয় লাখ টাকার বেশি। কেটিএম ডিউক ১২৫ ইইউ সংস্করণের মোটরবাইকের মূল্য ৬ লাখ ৫ হাজার টাকা। ডার্ক গালভানো ম্যাট এবং সিলভার মেটালিক ম্যাট—এই দুই রঙে দেশের বাজারে বাইকটি মিলবে। ১২৪.৭ সিসি ইঞ্জিনের সর্বোচ্চ অশ্বশক্তি ৮ হাজার আরপিএমে ১৪.৫পিএস এবং সর্বোচ্চ টর্ক ১২ এনএম। কেটিএম ডিউকে ওয়েট মাল্টি-ডিস্ক ক্লাচ ব্যবহার করা হয়েছে। এই মোটরবাইকটি প্রতি লিটার জ্বালানিতে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। বাইকটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। ঈদ অফারে মোটরবাইকটিতে এখনো ২৫ হাজার টাকা ছাড় পাওয়া যাচ্ছে।

ইয়ামাহা আর১৫ভি৪ রেসিং ব্লু

দেশের বাজারে দামের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে ইয়ামাহার আরেকটি বাইক। আর–১৫ ভি–৪ রেসিং ব্লু মডেলের বাইকের দাম ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। চকচকে নীল রঙের এই বাইক দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি গতিতেও দুরন্ত। হর্স পাওয়ার বা এইচপিতে আর–১৫ এম থেকে একটু পিছিয়ে থাকলেও অন্য সব দিক থেকে আর–১৫ ভি–৪ও বাইকারদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। ১০ হাজার আরপিএমে বাইকটির সর্বোচ্চ অশ্বশক্তি ১৮.৩৫ এবং সর্বোচ্চ টর্ক ১৪.১ এনএম। আর–১৫ ভি–৪ বাইকে আর–১৫ এমের প্রায় সব সুযোগ–সুবিধা মিলবে। ইয়ামাহা আর–১৫ মডেলের বাইকগুলোকে পকেট রকেট হিসেবেও ডাকা হয়। ভি–৪ মডেলের এই বাইকটির হেডলাইটের সঙ্গে রেসিং সংস্করণে বেশি সিসির বাইক আর–৭–এর সামজ্ঞস্য রয়েছে। মোটরবাইকটির মাটি থেকে উচ্চতা ১৭০ মিলিমিটার। আর–১৫ ভি–৪ বাইকের ওজন ১৪২ কেজি। অন্য দুটি রঙেও এই বাইক পাওয়া যাচ্ছে। মেটালিক রেড এবং ডার্ক নাইট রঙের বাইকটির মূল্য ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

হোন্ডা সিবিআর ১৫০ আর

জাপানি অটোমোবাইলস প্রতিষ্ঠান ‘হোন্ডা’ দেশের বাজারে এতই জনপ্রিয় যে মোটরবাইকের প্রতিশব্দ হিসেবে দেশে অনেকেই হোন্ডা বলেন। হোন্ডা মোটরবাইকের অনুমোদিত পরিবেশক বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড। স্পোর্টস বাইক শ্রেণিতে বাইকগুলোর মডেল সিবিআর দিয়ে শুরু হয়। দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হোন্ডা সিবিআর ১৫০ এবিএস সংস্করণ। মোটরবাইকটির দাম ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। হরিণীর চোখের মতো হেডলাইট, উঁচু জ্বালানি ট্যাংক, স্প্লিট সিটসমৃদ্ধ এই বাইকে ডিওএইচসি–৬ গতি বিশিষ্ট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। অ্যাসিস্ট বা স্লিপার ক্লাচ এবং ককপিটে বড় বড় অক্ষরের রঙিন ডিজিটাল মিটার সিবিআর ১৫০ আরকে আকর্ষণীয় করেছে। এই বাইকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো জরুরি ব্রেক করা হলে এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হ্যাজার্ড বা জরুরি সংকেত জ্বলে উঠবে। ১৪৯.১৬ সিসি, প্রোগ্রামড ফুয়েল ইনজেকশন, লিকুইড কুলড উইথ অটো ফ্যান, ভিজকস পেপার ফিল্টার, টিউবলেস টায়ার এবং ডুয়েল চ্যানেল এবিএস সিবিআর ১৫০ আরকে পূর্ণতা দিয়েছে।

ইয়ামাহা এমটি-১৫ ভি ২

কিট ছাড়া যে মোটরবাইকটি দাম, গতি এবং নিরাপত্তার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে, সেটি ইয়ামাহা এমটি-১৫ ভি–২। ইয়ামাহা এমটি-১৫ ভি-২ বাইকে রয়েছে স্মার্টফোন ব্লুটুথ সংযোগ, শিফট টাইমিং লাইট, সাইড স্ট্যান্ড ইঞ্জিন কাট অফ সুইচ, ইউনি লেভেল সিট উইথ গ্র্যাব বার এবং মাল্টি মিক্স কালার গ্রাফিকস। এটি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলতে পারে। ১৫০ সিসির এই মোটরবাইকটির সর্বোচ্চ অশ্বশক্তি ১৮.১ বিএইচপি এবং সর্বোচ্চ টর্ক ১৪.১ এনএম। প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে এমটি-১৫ ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম। মোটরবাইকটিতে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস রয়েছে। এর দাম ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা।