প্রযুক্তিবিদ থেকে মিনহার যেভাবে চামড়াজাত পণ্যের সফল উদ্যোক্তা

হাজারীবাগে নিজের কারখানায় কাজি মিনহার মহসিন উদ্দিনছবি: সংগৃহীত

তিনি একই সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ, ডিজিটাল মার্কেটার ও একজন সফল উদ্যোক্তা। ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হিসেবে জীবনের প্রতিমুহূর্তেই  চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফল হওয়া যায়, তার উদাহরণ কাজি মিনহার মহসিন উদ্দিন। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে থাকতে থাকতেই তিনি হয়ে উঠেছেন চামড়াজাত পণ্যের উদ্যোক্তা। সম্প্রতি রাজধানীর জিগাতলায় মিনহারের কারখানায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

কাজি মিনহার মহসিন উদ্দিনের উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য দেশের চামড়াজাত পণ্যকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। এরই মধ্যে তাঁর প্রতিষ্ঠান বি লেদার্স স্কুল ব্যাগ, টোটি ব্যাগ, স্যাচে, চামড়ার ফ্যাশন পণ্য, পার্স, বেল্ট, জ্যাকেট, ওয়ালেট, জুতা, কার্ড হোল্ডার উৎপাদন করছে। চামড়াজাত যেকোনো পণ্য নিয়েই কাজ করেন কাজি মিনহার মহসিন উদ্দিন।

মিনহার জানালেন দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও ফ্যাশন ব্র্যান্ডে তাঁর প্রতিষ্ঠান চামড়াজাত পণ্য সরবরাহ করে। বি লেদার্সের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে। হঠাৎ চামড়াশিল্পে কেন মনোযোগী হলেন? এ প্রসঙ্গে মিনহার বলেন, ‘২০২৩–২৪ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে দেশের আয় হয়েছে প্রায় ৯৬ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার। যদিও এটি আগের তুলনায় কম। কিন্তু এখানে কাজ করার আরও অনেক জায়গা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। চামড়াশিল্প নিয়ে চীন, ভিয়েতনাম ও ভারতের মতো দেশগুলোর সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতায় নেমেছে বাংলাদেশ। এখানে গড়ে উঠেছে প্রযুক্তিবান্ধব পরিবেশ। একই সঙ্গে শ্রমখরচও রয়েছে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। এখন প্রয়োজন শুধু দেশীয়ভাবে কাঁচামালের সহজলভ্যতা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহায়তা। বর্তমানে যদিও বাংলাদেশে এলডব্লিউজি সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত ট্যানারির সংখ্যা মাত্র সাত। আমরা চাইছি, এই সংখ্যা বাড়াতে। তাই এই লক্ষ্য ধরে কাজ করে চলেছি।’

কারখানায় পণ্য উৎপাদন তদারক করছেন মিনহার
ছবি: সংগৃহীত

১০১, হাজারীবাগে অবস্থিত মিনহারের বি লেদার্সের কারখানা উৎপাদন শুরু করে ২০১৭ সালে। এখন চার হাজার বর্গফুটের কারখানাটি প্রতি মাসে ১০ হাজার ব্যাগ ও ১৫ হাজার ওয়ালেট উৎপাদন করছে। কারখানায় কাজ করছেন ৩৫ জন। ভবিষ্যতে ব্যবসার পাশাপাশি কারখানার পরিসরও আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশে যাঁরা ফেসবুক বিপণন নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের কাছে পরিচিত মুখ কাজি মিনহার মহসিন উদ্দিন। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামে। নিজের ডিজিটাল বিপণন প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। মিনহারের বাবা কাজী নাসিম উদ্দিন বিটিসিএলের প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেছেন। মা আয়েশা রোকসানা গৃহিণী।

শুরুর গল্প

২০১৩ সালে চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক (বিবিএ) ডিগ্রি নেন মিনহার মহসিন, বিষয় ছিল বিপণন। ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করতে গিয়েই তাঁর দিনবদল শুরু হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার কম্পিউটার চালানোর আগ্রহ ছিল। পরবর্তী সময়ে নিজের মার্কেটিং দক্ষতা ও ডিজিটাল জগতের অভিজ্ঞতাকে একত্র করে ডিজিটাল বিপণন প্রতিষ্ঠান চালুর সিদ্ধান্ত নিই। চ্যালেঞ্জের একটি কাজ করেছিলাম তখন। ফেসবুকে মেয়েদের অনুষঙ্গ বিক্রির একটি অনলাইন দোকানের স্টোরের প্রায় ১০ হাজার টাকা দামের দুটি পোশাকের বিপণনে আমার ব্যয় হয়েছিল মাত্র ৮০০ টাকা। সেই থেকে দোকানের সব কাজ আমার হাতেই। তখন মনে হলো, যেহেতু আমি ডিজিটাল বিপণন করতে পারি, এটাই যদি নিজের ব্যবসায় কাজে লাগাই, তাহলে কিছু একটা হবে। তখন আমি বি লেদার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। এখনো সেটার বিপণন আমি নিজে করি। আর সাড়াও পাচ্ছি ভালো।’

মিনহার দেশের বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে প্রথম বি লেদারের দোকান চালু হচ্ছে। মিনহার বলেন, ‘আমাদের দেশি পণ্য ছড়িয়ে দিতেই বিদেশে দোকান করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের স্বপ্ন অনেক বড়, দেশের সব বিভাগে একটি করে দোকান দেওয়া। পাশাপাশি ১২টি দেশে আমাদের পণ্য ছড়িয়ে দেওয়ার একটা উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি ২০২৫ সালের মধ্যে এই পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করতে পারব।’