স্নাতক শ্রেণির ছাত্র রাজু ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে আয় করেন ৩ লাখ টাকার বেশি

রাজু আহমেদসংগৃহীত

উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় রাজু আহমেদ ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং সম্পর্কে জানতে পারেন। তখন থেকেই তিনি ভাবতেন, চাকরির পাশাপাশি একদিন মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির আউটসোর্সিংয়ের কাজ করবেন। তবে কখনো একে প্রধান পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবেননি। কিন্তু এখন সিলেট থেকে ফ্রিল্যান্সিং করে রাজুর আয় প্রতি মাসে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা। নিজের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানে ৩০ জন কর্মী কাজ করেন। সেই প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে ১০ হাজার মার্কিন ডলারের মতো বিদেশি কাজের অর্ডার আসে।

ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য রাজু ইউটিউবের ভিডিও দেখে ধারণা নেন। তিনি ইউডেমিতে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) ও অনলাইন মার্কেটপ্লেস নিয়ে প্রশিক্ষণ কোর্সও করেন। ২০১৭ সালের শেষের দিকে তিনি অনলাইনে আউটসোর্সিংয়ের কাজ আদান-প্রদানের ওয়েবসাইট ফাইভআরে অ্যাকাউন্ট খুলে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন সফল ফ্রিল্যান্সারের অনলাইন কোর্স করেন।

সরকারিভাবে ডিজিটাল বিপণনের ওপর বিনা মূল্যে একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে (এলইডিপি) অংশ নিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন রাজু আহমেদ। সেখানে তাঁর জড়তা দেখে একজন সাক্ষাৎকারগ্রহীতা রাজু কী কী কোর্স করেছেন, সেটা জানতে চান। রাজু বিভিন্ন কোর্সের পাশাপাশি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) থেকে যে কোর্সগুলো করেছিলেন, সেগুলোর কথাও বলেন। তিনি রাজুকে বলেন, ‘আপনার সঙ্গে কথা বলে যা বুঝলাম, আপনি ডিজিটাল বিপণনে ভালো করতে পারবেন না, আপনি বরং ওয়েব নিয়ে কাজ করুন।’

কথাটা রাজুর খুব একটা পছন্দ হয় না। রাজু প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দিন বাড়িতে এসে আমি শপথ করি, আমাকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হবে এবং সেটা ডিজিটাল বিপণন খাতেই।’

তখন থেকে কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন রাজু। ফাইভআরে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর নাম প্রথম পৃষ্ঠায় চলে আসে এবং কিছুদিনের ভেতর লেভেল-১ এবং আরও দুই মাস পর লেভেল-২ ব্যাজ পেয়ে যান ফাইভআর থেকে।

এলইডিপির যে কোর্সে প্রশিক্ষণার্থী হওয়ার পরীক্ষায় টেকেননি রাজু, সেই কোর্সেই পরে তিনি মেন্টর হিসেবে ডাক পান। মেন্টর হওয়ার সাক্ষাৎকারে রাজুকে ১০টি প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি ১০টিরই সঠিক উত্তর দিয়েছিলেন। এটাই ছিল তাঁর কঠোর পরিশ্রমের ফলাফল।

আরও পড়ুন

রাজু আহমেদের প্রতিষ্ঠানের নাম ড্রিমস আইটি পার্ক। ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য নানা বিষয়ের ওপর দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাই এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য। তিন বছরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দেশের সব জেলার ছেলেমেয়েই এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন।

রাজু আহমেদ মালিক নাহার মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৫ সালে এসএসসি এবং ২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে ডিপ্লোমা এবং অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা কোর্স করেন। বর্তমানে সিলেট সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন তিনি।

আরও পড়ুন
ন্যাশনাল টেক অ্যাওয়ার্ড হাতে রাজু আহমেদ
সংগৃহীত

রাজু আহমেদের বাবা মঈন উদ্দিন ব্যবসা করতেন। এখন বাড়ির জমিজমা দেখাশোনা করেন। রাজুর বয়স যখন চার বছর তখন তাঁর মা রায়হানা আক্তার মারা যান।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল রাজু বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছেন। ২০২২ সালে মেন্টর শ্রেণিতে রাইজিং ইয়ুথ পুরস্কার ও ২০২৩ সালে ন্যাশনাল টেক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। রাজুর প্রতিষ্ঠান ২০২২ সালে ন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সিং কার্নিভ্যালে পেয়েছে বিশেষ সম্মাননা।

সিলেট শহরের শিবগঞ্জে এলাকায় থাকেন রাজু আহমেদ। ফ্রিল্যান্সিং করে রাজুর আয় প্রতি মাসে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা। এর বেশির ভাগ তাঁর নিজের আয়, বাকিটা প্রতিষ্ঠানের। রাজুর স্বপ্ন তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে দেশে ১ লাখের বেশি ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা এবং নিজের প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন স্নাতক শ্রেণির এই শিক্ষার্থী ও ফ্রিল্যান্সার।

আরও পড়ুন