অনলাইনে ফুল বিক্রি করে সংসার চালান গদখালীর মো. আল আমিন

চাষীদের কাছ থেকে ভালো মানের ফুল সংগ্রহের চেষ্টা করেন মো. আল আমিনছবি: প্রথম আলো

বয়স সবে ২২ বছর। ফুলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীতে থাকেন মো. আল আমিন। বাবা আজিজুর রহমান পেশায় একজন কৃষক। ছোট বোন আয়েশা পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। অল্প বয়সেই বাবার সংসারের হাল ধরেছেন মো. আল আমিন। আর তা অনলাইনে নিজ গ্রামের ফুল বিক্রি করে। মো. আল আমিনের ফেসবুক পেজের নাম ফুলের বাজার ডট কম। এই পেজের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করেছেন একজন উদ্যোক্তা হিসেবে।

মো. আল আমিন
ছবি: প্রথম আলো

গদখালীতে বসে গত রোববার কথা হয় মো. আল আমিনের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি জানান, তাঁর পেজে বেশি চাহিদা আসে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধ, জারবারা, গ্লাডিওলাস, জিপসি ও চন্দ্রমল্লিকা ফুলের। আল আমিন বলেন, ‘নিজের বাড়িতেও ফুলে চাষ করি। তবে বেশির ভাগ ফুল চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করি। বিভিন্ন বাগান থেকে সবচেয়ে ভালো ফুল সংগ্রহের চেষ্টা করি। ক্রেতারা ভিডিও কলে সরাসরি ফুল দেখে পছন্দ করতে পারেন।’

ফুল বিক্রির পাশাপাশি বিয়ের অনুষ্ঠান, গায়েহলুদসহ বিভিন্ন আয়োজনে ফুল সরবরাহ করে থাকেন আল আমিন। এর বাইরে ছাদবাগান বা অফিসে ফুলের বীজ ও চারা বিক্রি করেন তিনি। ফুলের বাজার ডট কম থেকে মো. আল আমিনের মাসিক আয় ২০ হাজার টাকার বেশি। তবে বিয়ের মৌসুম বা বিশেষ দিবসের সময় এই আয় সাপ্তাহিক ২০ হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যায়।

যশোরের গদখালী থেকে সারা দেশে ফুল সরবরাহ করে ফুলের বাজার ডট কম
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে বসে ছিলেন মো. আল আমিন। তখন অনলাইনভিত্তিক ব্যবসার অবস্থা বেশ ভালো। করোনা মহামারির সেই সময়ে ধারণাটি মাথায় আসে আল আমিনের। তিনি বলেন, ‘তখন ফেসবুক পেজ খুললাম। নাম দিলাম ফুলের হাজার ডট কম। এখন এই পেজের অনুসারী (ফলোয়ার) প্রায় এক লাখ।

আরও পড়ুন

গদখালী থেকে সারা বাংলাদেশে আল আমিনের ফুল সরবরাহ করা হয়। দেশের বাইরে কুয়েতেও পাঠিয়েছেন ফুল। আল আমিন বলেন, ‘গদখালীর সব ফুলচাষি অনলাইনের ব্যবহার তেমন জানেন না। তাই আমি অনলাইনের মাধ্যমে বিপণন ও বিক্রির কাজ করি। দেশের বাইরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারে ফুলের বীজ পাঠিয়েছি।’

আল আমিন জানান, অনলাইনে ব্যবসা শুরু করার পর পরিবারের দেখাশোনা ভালোভাবে করতে পারছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইন্টারনেটে অর্ডার নিয়ে ফুল পাঠাই, ভিডিও বানাই—এসব দেখে আমার দাদা–দাদি বেশ আনন্দিত। গ্রামের মানুষও খুশি যে গদখালীতে থেকেও এমন অনলাইন ব্যবসা হচ্ছে।’

আরও পড়ুন

মো. আল আমিনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো তাঁর উদ্যোগে দেশের ৬৪ জেলার মানুষকে যুক্ত করা। যশোরের গদখালীর ফুল বিদেশে নিয়মিত রপ্তানি করতে চান তিনি। মো. আল আমিন বলেন, ‘বিদেশ থেকেও অনেকে যোগাযোগ করেন, কিন্তু এসব বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। সরকারের কৃষি বিপণন বা অন্য কোনো বিভাগের সংশ্লিষ্ট কেউ যদি এ বিষয়ে সহযোগিতা করে, তবে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব।’ এভাবে বিদেশেও গদখালীর ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে দিতে চান এই তরুণ উদ্যোক্তা।