হোন্ডা দিয়ে সবার মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে চাই

বাংলাদেশ মোটরসাইকেল বলতে অনেকে ‘হোন্ডা’ বোঝেন। হোন্ডার ঐতিহ্য ও বর্তমান নিয়ে কথা বলেছেন হোন্ডা বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুসুমু মরিসাওয়া।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের সমার্থক শব্দ ‘হোন্ডা’। এটা কীভাবে হয়ে উঠল?

সুসুমু মরিসাওয়া: আমরা মনে করি, গ্রাহকদের এই স্বীকৃতি এসেছে নতুন কিছু তৈরির প্রতি আমাদের নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টার ফল—যেখানে সব সময় পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন এবং প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার প্রতিই ছিল মূল কারণ।

প্রথম আলো:

হোন্ডা বাংলাদেশের যাত্রা কবে শুরু? এখন কী কী তৈরি হয়?

সুসুমু মরিসাওয়া: বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড (বিএইচএল) একটি যৌথ উদ্যোগ। এটা গঠিত হয়েছে জাপানের হোন্ডা মোটর কোম্পানি লিমিটেড ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইস্পাত প্রকৌশল সংস্থার (বিএসইসি) অংশীদারত্বে। ২০১২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর যৌথ চুক্তি হয় এবং ৪ ডিসেম্বর বিএইচএল নিবন্ধিত হয়। এরপর ২০১৩ সালের ১ নভেম্বর  ‘উইংস’ প্রতীকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। বিএইচএলের প্রধান কার্যক্রম হলো হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল, স্কুটার ও যন্ত্রাংশের উৎপাদন, বিক্রয় ও বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান। বর্তমানে আমরা বাংলাদেশে শাইন ১০০, ড্রিম ১১০, লিভো এসপি ১২৫, এসপি ১৬০, এক্সব্লেড ও হর্নেট ২.০ মডেলগুলো স্থানীয়ভাবে সংযোজন করছি। এ ছাড়া ডিও ও সিবিআর ১৫০ আর আমাদের লাইনআপে রয়েছে।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের মোটরসাইকেল খাতে হোন্ডার অবস্থান ও প্রভাব সম্পর্কে বলুন।

সুসুমু মরিসাওয়া: বাংলাদেশে মোটরসাইকেলশিল্প ধীরে ধীরে স্বাভাবিক গতিতে ফিরছে। সাম্প্রতিক ঈদ মৌসুমে আমরা দেখেছি, মানুষের মধ্যে বাইক কেনার আগ্রহ চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। এখন গ্রাহকেরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তাঁরা জ্বালানিসাশ্রয়ী, আধুনিক প্রযুক্তির এবং কম রক্ষণাবেক্ষণ লাগে, এমন বাইককে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। এই পরিবর্তিত চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের এসপি ১২৫ ও হর্নেট ২.০ মডেল দুটি গ্রাহকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজার পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের বিক্রি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, যা আমাদের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত।

প্রথম আলো:

হোন্ডার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন।

সুসুমু মরিসাওয়া: হোন্ডার ২০৩০ সালের ভিশন, ‘আমরা সবার জীবনে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করব এবং চলাফেরা ও জীবনযাত্রার উন্নয়নে বিশ্বজুড়ে নেতৃত্ব দেব।’ এই ভিশন বাস্তবায়নে আমরা তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি: ১. আনন্দ তৈরি করা; অর্থাৎ চলাচল ও জীবনযাত্রায় নতুন সুবিধা এনে দেওয়া, ২.আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া—সমাজ ও ব্যক্তির বৈচিত্র্যময় চাহিদা অনুযায়ী সঠিক পণ্য ও সেবা প্রদান ও ৩. এই আনন্দ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া মানে পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলা।

প্রথম আলো:

নিয়মিত প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে হোন্ডার অবদান কী?

সুসুমু মরিসাওয়া: হোন্ডা দুই চাকার যানের জগতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে অনেক উদ্ভাবন করেছে, যা গ্রাহকদের জন্য চালনা আরও সহজ, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী করে তুলেছে। ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের বিস্তৃত ব্যবহার শুরু করে হোন্ডা জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলে। ছোট ইঞ্জিনের জন্য পিজিএম-এফ১ ফুয়েল ইনজেকশন প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে জ্বালানিদক্ষতা ও পরিবেশ সংরক্ষণ নিশ্চিত করে। নিরাপদ চালনার জন্য আমরা এবিএস প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছি, যাতে হঠাৎ ব্রেক করলেও বাইক নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। বিশ্বের প্রথম মোটরসাইকেলে এয়ারব্যাগ সিস্টেম যুক্ত করার মধ্য দিয়ে নিরাপত্তায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছি। আরামদায়ক ও ঝামেলাহীন গিয়ার বদলের জন্য ডুয়াল ক্লাচ ট্রান্সমিশন (ডিসিটি) এবং ই-ক্লাচ প্রযুক্তি যুক্ত করে চালনার অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করেছি। এসব উদ্ভাবনের পেছনে মূল উদ্দেশ্য একটাই, চালকদের অভিজ্ঞতাকে নিরাপদ ও আরও আনন্দদায়ক করে তোলা।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের বাজারে হোন্ডার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সুসুমু মরিসাওয়া: আমরা চাই, মোটরসাইকেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নপূরণে পাশে থাকতে এবং তাঁদের জীবনকে আরও সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও আনন্দঘন করে তুলতে। একই সঙ্গে আমরা এমন একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে চাই, যা সমাজে বাস্তব অবদান রাখে এবং যাকে মানুষ বিশ্বাস ও সম্মানের চোখে দেখেন। আমাদের পরিকল্পনা হলো সরকারের শিল্পায়ন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থানীয় উপকরণ সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানো, যাতে উৎপাদন খরচ কমে আসে এবং আমরা আরও সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের পণ্য দেশের মানুষের হাতে তুলে দিতে পারি।