প্রিয় বাইকের যত্ন নেবেন যেভাবে

বাইক
সংগৃহীত ছবি

দিন দিন মোটরবাইক জনপ্রিয় বাহন হয়ে উঠছে। যাঁরা নিয়মিত বাইক চালান, তাঁদের কাছে বাইকের যত্ন নেওয়াটাও জরুরি। ঢাকার জেনুইন স্পেয়ার পার্টস অ্যান্ড সার্ভিসেসের মেকানিক নাঈম ইসলাম জানান, মোটরবাইকের কিছু যন্ত্রাংশ খুবই সংবেদনশীল। বিশেষ যত্ন না পেলে সেগুলো দ্রুত অকেজো হয়ে যায়। এ ছাড়া মোটরবাইক নিয়মিত পরিষ্কার করলে অনেক দিন চালানো যায়। পাশাপাশি বাইক রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কমে যায়। নাঈম ইসলামের দেওয়া কিছু পরামর্শ দেখা যাক।

নিয়মিত সার্ভিসিং

মোটরবাইক ভালো রাখার জন্য নিয়মিত সার্ভিসিং করানো উচিত। কারণ, বাইক চালাতে চালাতে অনেক সময় বাইকের কিছু যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে যায়। দক্ষ মেকানিককে দেখালে বাইকের সমস্যাগুলো খুব সহজেই ধরা পড়বে। যন্ত্রাংশের ত্রুটি নিয়ে বাইক চালালে বেশি দিন ভালো থাকবে না। ধীরে ধীরে প্রিয় মোটরবাইকটিতে বেশি বেশি সমস্যা দেখা দেবে। তাই বাইক ভালো রাখার জন্য নিয়মিত সার্ভিসিং করানো উচিত। সম্ভব হলে প্রতিদিন সকালে যন্ত্রাংশগুলো পরীক্ষা করুন।

ইঞ্জিন অয়েল বদলানো

নিয়মিতভাবে বাইকের ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করলে ইঞ্জিনটি দীর্ঘদিন পর্যন্ত দুর্দান্ত চলবে। বাইকের ইঞ্জিন অয়েল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি সঠিক মানের বা সঠিক মাত্রার ইঞ্জিন অয়েল বাইকে না ঢালা হয়, সে ক্ষেত্রে ইঞ্জিনে বড়সড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাইকের ভালো সার্ভিস পেতে হলে বাইকের ইঞ্জিন অয়েলের মান ও লেভেল নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। ইঞ্জিন অয়েল নিজেই পরিবর্তন করে নেওয়া যায়। এ কাজের জন্য বাইকের সঙ্গে দেওয়া ব্যবহার নির্দেশিকা বা ইউজার ম্যানুয়ালটি ভালো করে পড়ে দেখুন। কোন গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল আপনার বাইকের জন্য উপযোগী, তা এই নির্দেশিকায় পাবেন।

এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন

বাইকের এয়ার ফিল্টার একটা নির্দিষ্ট সময় পর পরিবর্তন করা উচিত। কারণ, এয়ার ফিল্টার ইঞ্জিনে প্রবেশের পথে বাইরের বাতাসকে বিশুদ্ধ করে দেয়। এয়ার ফিল্টার ঠিক না থাকলে বাতাসের সঙ্গে ইঞ্জিনে ময়লা, ধূলিকণা ঢুকে যেতে পারে। ধূলিকণা পিস্টনের মাথা এবং পিস্টনের রিংগুলোয় দাগ ফেলবে। ফলে ইঞ্জিনে উৎপাদিত শক্তির অপচয় ঘটবে। একই সঙ্গে ইঞ্জিনে অতিরিক্ত কার্বন তৈরি হবে। তাই নির্দিষ্ট কিলোমিটার চালানোর পর এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন  করে ফেলা উচিত।

পরিষ্কার করা

অনেক সময় রাস্তায় ধুলাবালুর সঙ্গে কাদা-পানিও থাকে। এর ফলে বাইক চালাতে গেলে বাইকের বিভিন্ন জায়গায় ধুলাবালু আটকে যায়। কাদা শুকিয়ে লেগে থাকে। এসব কারণে বাইকের ইঞ্জিনের ক্ষতি হয় বেশি। ধুলাবালু আর ময়লা-আবর্জনা জমে গেলে মোটরবাইক সাধারণত পানি দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। পানির সঙ্গে শ্যাম্পু মিলিয়েও পরিষ্কার করা যায়। বাইক পরিষ্কার করার সময় এমন জায়গা বেছে নেবেন, যাতে বাইকে মাটি না লাগে। ডাবল স্ট্যান্ড করে পরিষ্কার করলে বাইকের সব অংশ সুন্দরভাবে ধোয়ামোছা করা যায়।

যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করা

একটি মোটরবাইকে অনেক ধরনের যন্ত্রাংশ থাকে। সেসব যন্ত্রাংশ প্রতিদিন সকালে বাইক নিয়ে বের হওয়ার আগে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। যদি হাতে সময় থাকে, তাহলে একটু সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হবেন। পরীক্ষা করার পর যদি কোনো যন্ত্রাংশে সমস্যা দেখা যায়, তাহলে সেটা মেরামত করুন। প্রথমেই বাইকের ফুয়েল লাইনের (তেলের নল) কোথাও ফাটা আছে কি না, তা দেখে নিন। সামনের ও পেছনের ব্রেক ঠিকমতো কাজ করছে কি না, সেটা দেখুন। ঠিকমতো কাজ না করলে দুটো ব্রেকের মধ্যে সমন্বয় করুন। সব নাটবল্টু পরীক্ষা করে দেখুন। নাটবল্টু ঢিলা থাকলে, শক্ত করে নিন। চাকার হাওয়া দেখে নিন। কম বা বেশি থাকলে হাওয়া সমন্বয় করে নিন।

ঢেকে রাখা ও ছায়ায় রাখা

কর্মস্থলে এসে দীর্ঘ সময় থাকলে বা কাজ শেষে বাসায় গেলে বাইকটি অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। দিনের বেলা ছায়ায় রাখা উচিত। বাইক ঢেকে রাখলে বাইকে ধুলাবালু পড়বে না। আর ছায়ায় থাকলে বাইক ঠান্ডা থাকে। অতিরিক্ত রোদে বাইক রাখলে বাইকের অনেক যন্ত্রাংশে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া শীতের কুয়াশা থেকে বাইককে রক্ষা করার জন্য বাইক ঢেকে রাখলে ভালো হয়।

চেইন ও ব্যাটারির যত্ন

বাইকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো চেইন। চেইন পরিষ্কার রাখলে বাইকের গতি ভালো পাওয়া যায়। শীতকালে চেইনে ব্যবহৃত তেল ও ময়লার মিশ্রণ জমে শক্ত হয়ে যেতে পারে, যা গরমের সময়ের চেয়ে দ্রুত হয়ে থাকে। তাই এ সময় চেইনের যত্ন একটু বেশি প্রয়োজন হতে পারে। মোটরসাইকেলের ব্যাটারি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটারিতে সব সময় পর্যাপ্ত চার্জ রাখতে হবে। কিকস্টার্ট থাকুক বা না থাকুক, ব্যাটারিতে সম্পূর্ণ চার্জ রয়েছে কি না, তা অবশ্যই দেখে নিন। যদি না থাকে, তাহলে কোনো মেকানিকের কাছ থেকে সেটি চার্জ করানোর ব্যবস্থা করুন।