উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে এই ফিল্টারের উচ্চ শক্তি কাজে লাগিয়ে প্রকৃত মুখাবয়ব আড়াল করে নতুন মুখাবয়বে ব্যবহারকারীরা লাখ লাখ ভিডিও টিকটকে দিয়েছেন। এসব ভিডিও পোস্টে মোটা ঠোঁট, সুস্পষ্ট চিবুক ও তুলতুলে ভ্রুতে নতুন এক ফ্যাশনের দেখা মেলে। তবে সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ ও মনোবিদেরা এই এআই ফ্যাশন ধারণার সমালোচনা এবং এই সম্পর্কে সতর্কতার কথা বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মিডল জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির নার্সিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক কিম জনসন বলেছেন, সৌন্দর্য ধারণায় এটি নতুন আক্রমণ। এই ফিল্টারের প্রভাবগুলো অত্যধিক ডায়েট করা, অন্যের সঙ্গে তুলনা করা ও আত্মসম্মানবোধ কমে যাওয়ার মতো অস্বাস্থ্যকর আচরণের দিকে ধাবিত করে।
কয়েক বছর ধরে টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাট ফিল্টার ও বিশেষ আবহেই স্থির ছিল। কিন্তু বোল্ড গ্ল্যামারের মতো সর্বশেষ প্রজন্মের ফিচারগুলো আরও শক্তিশালী। অলব্রাইট কলেজের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক গয়েন্ডোলিন সিডম্যান বলেছেন, এটি সুনির্দিষ্ট নয়। এটি তাৎক্ষণিক। এটি শক্তিশালী। চাপে থাকা কিশোরদের মতো যাঁরা সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পেতে আগ্রহী, তাঁরা ফিল্টারটি বন্ধ করলে যা দেখবেন, তা পছন্দ করবেন না আর এটিই হলো সমস্যা।
‘খুবই ভালো’
বোল্ড গ্ল্যামারের যন্ত্রণা সৃজনশীলতার বাইরে গিয়ে পর্যবেক্ষকেরা ফিল্টারটির প্রযুক্তি সম্পর্কে মাথা ঘামাচ্ছেন এবং ভাবছেন অ্যাপটি কি তবে এআইয়ের ক্ষেত্রে অদৃশ্য কোনো অগ্রগতি এনেছে? আগের ফিল্টারগুলো চেহারার ওপর একটি আস্তরণ বা আবহ তৈরি করত—যেমনটা হতো স্ন্যাপচ্যাটে জোক লেন্সে। কিন্তু এই ফিল্টারে ব্যবহারকারী হাতটি মুখাবয়বের সামনে রাখলে তা অনেকটা বাস্তব মনে হবে।
ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির সামাজিক যোগাযোগ বিষয়ের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু সেলেপাক বলেছেন, ‘এটি জনসাধারণের ব্যবহারের এআই, যার মাধ্যমে মুখাবয়বের পরিবর্তন করা যায় এবং যা অনেক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।’ এই অ্যাপের পেছনে কোন প্রযুক্তি রয়েছে সে ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হয়নি টিকটক কর্তৃপক্ষ। তাই বোল্ড গ্ল্যামার কীভাবে কাজ করে তার কিছুটা রহস্য থেকেই গেল।
যদিও টিকটক এক বিবৃতিতে বলেছে, টিকটককে ইতিবাচক ও সমর্থনকারী হিসেবে ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠানটি বিশেষজ্ঞ অংশীজনদের নিয়ে কাজ করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চ্যাটজিপিটি বা ডেল-ই’র পেছনে যে প্রযুক্তি বোল্ড গ্ল্যামারেও তেমনি ‘জেনারেটিভ এআই’ ব্যবহার হচ্ছে। প্রযুক্তি নিরাপত্তা সংস্থা জেনের এআই গবেষণা পরিচালক পেত্র সোমল বলেন, এই ধরনের ফিল্টার কয়েক বছর ধরেই চালু ছিল। তবে টিকটকের সর্বশেষ সংস্করণটি অসাধারণ ও খুবই ভালো।
গভীর জালিয়াতির পথ
ফাঁদে ফেলে প্রতারণা, গভীর জালিয়াতি (ডিপ ফেইক)—সব মিলিয়ে কেউ কেউ ভাবছেন এই ফিল্টারগুলো এমন এক বিশ্বের কথা বলে, যেখানে প্রযুক্তির অপব্যবহার করার ক্ষমতা এখন স্মার্টফোন আছে এমন যে কারও নখদর্পণে। সোমল বলেন, সর্বশেষ এই ফিল্টার নিছকই গভীর জালিয়াতির প্রযুক্তি নয়। তবে সেই দিকে যাওয়ার একটি পথ বলা যায়।
বাফেলোর স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক সিওয়েই লিউ বলেন, টিকটক বা মেটার মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রামের মতো বড় প্ল্যাটফর্মগুলো জেনেশুনে বিপজ্জনক টুল সরবরাহ করবে তা ভাবা যায় না।
সূত্র: এনডিটিভি