ওয়াকম্যান, সিডি, ডস–উইন্ডোজ, মেকিন্টোশে উদ্ভাসিত এক দশক

আশির দশকে আলোচিত প্রযুক্তি ছিল সিডি বা কমপ্যাক্ট ডিস্কপেক্সেলস

এ সময়ে প্রতিনিয়তই প্রযুক্তির নতুন নতুন চমক দেখা যায়। অবশ্য প্রযুক্তির চমক সব সময়েই দেখার মতো। এখন যাঁদের বয়স ৬০ বছর, তাঁরা ১৯৮০–এর দশককে মনে করেন নিজেদের স্বর্ণ সময়। তখন যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছর ছিল, তাঁরা সেই সময়কার অনেক প্রযুক্তি নিয়ে এখনো গল্প করেন। নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ সিরিজ দেখে অনেকেই আশির দশক কেমন ছিল তা জানতে চান। সে সময়ের আলোচিত এমনই কয়েকটি প্রযুক্তির গল্প শোনা যাক।

গত শতাব্দীর আশির দশক সারা পৃথিবী অনেক চমক দেখে। সেই দশকের ফ্যাশন, স্টাইল আর সামগ্রিক সংস্কৃতিকে আধুনিক পপ–সংস্কৃতি বিকাশের কেন্দ্র বলা হয়। আশির দশকে প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির আকর্ষণীয় সংমিশ্রণ দেখা যায়। ১৯৮৪ সালে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (জিআইইউ) তৈরি না হলে আজ আপনার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার থাকত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম মাইক্রোসফট উইন্ডোজ প্রথম ১৯৮৫ সালে বাজারে আসে। ১৯৮৩ সালে ভিডিও রেকর্ডিংয়ের জন্য প্রথম ক্যামকর্ডার দেখা যায় মানুষের হাতে। নভোযান কলম্বিয়া থেকে শুরু করে সিডি বা কমপ্যাক্ট ডিস্ক ১৯৮০ সময়কে আলোচনায় রাখে ইতিহাসে।

ডিজপোজেবল ক্যামেরা
পেক্সেলস

আশির দশকে আলোচনায় ছিল ডিজপোজেবল ক্যামেরা। ডিজিটাল ক্যামেরার আগে ডিসপোজেবল ক্যামেরা আলোচনায় আসে। ১৯৮৬ সালে ফুজি ফিল্ম বাজারে এই ক্যামেরা আনে। কোডাক, ক্যানন আর নাইকনের মতো ক্যামেরা নির্মাতারা ডিজপোজেবল ক্যামেরা বাজারে আনতে শুরু করে। সস্তা ও সহজলভ্য ক্যামেরার ধারণাকে জনপ্রিয় করে এই ক্যামেরা।  সেই সময় প্রথম স্টিলথ বিমান আকাশে দেখা যায়। স্টিলথ প্রযুক্তি যুদ্ধের ধরন পরিবর্তন করে দেয়। লকহিড অ্যারোনটিক্যাল সিস্টেম ১৯৮১ সালে বিশ্বের প্রথম রাডার-প্রতিরোধী বিমান এফ-১১৭ নাইটহকের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন চালু করে। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী উড়োজাহাজটি নিয়ে কাজ শুরু করে। যদিও সেই খবর ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত গোপন রাখা হয়েছিল৷

সনির ওয়াকম্যান
রয়টার্স

আশির দশকের আলোচিত আরেকটি প্রযুক্তির নাম সিডি বা কমপ্যাক্ট ডিস্ক। সিডি প্লেয়ারে গান শোনা ছিল তখন খুব আলোড়িত বিষয়। ১৯৭৯ সালে তৈরি হওয়া সনির গান শোনার যন্ত্র ওয়াকম্যান আশির দশকেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। গানের ক্যাসেট শব্দটি অনেকের জন্য স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দেয়। আশির দশকে সনি ও ফিলিপস সিডি বা কমপ্যাক্ট ডিস্ক বাজারে আনে। বলা হয়, সিডির কারণেই পরে ক্যাসেট হারিয়ে যায়।
আশির দশকে কৃত্রিম হৃৎপিণ্ডর ব্যবহার বেড়ে যায়। ১৯৬৯ সালে প্রথম কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড মানুষের মধ্যে স্থাপন করা হলেও আশির দশকে কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড সবার জন্য ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৮২ সালে জার্ভিক-৭ নামের কৃত্রিম হৃৎপিণ্ডের ব্যবহার শুরু হয়। হৃৎপিণ্ডের সংযোজনের মাধ্যমে হৃদ্‌রোগীদের নতুন সুযোগ তৈরি হয়। আশির দশকে আমরা অনেক মহাকাশযানের গল্প শুনি। মহাকাশে ভ্রমণ শেষ করে পৃথিবীকে নিরাপদে ফিরে আসার জন্য প্রথম স্পেস শাটল উৎক্ষেপণ করা হয় ১৯৮১ সালে।

আইবিএম ৫১৫০ পারসোনাল কম্পিউটার
উইকিমিডিয়া

এখন তো সারা দুনিয়ায় নানা ধরনের পারসোনাল কম্পিউটার দেখা যায়। গেল শতাব্দীর সত্তরের দশকে কম্পিউটার বিপ্লব শুরু হয়। ১৯৮১ সালে আইবিএম ব্যক্তিগত কম্পিউটার বাজারে আনে। আইবিএম ৫১৫০ পারসোনাল কম্পিউটারে ইন্টেল ৮০৮৮ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়। ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেম বা ডস ১.০ সংস্করণে চলত সেই কম্পিউটার।

অ্যাপলের ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার
উইকিমিডিয়া

১৯৮৪ সালে অ্যাপলের ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার দুনিয়া বদলে দেয়। ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারকে পপ আইকনের প্রতীক ধরা হয়। এটি প্রথম কম্পিউটার, যেখানে গ্রাফিকসভিত্তিক ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়। ১৯৮৩ সালে নিন্টেন্ডো এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম বা এনইএস চালু হয়। ১৯৮৯ সালে নিন্টেন্ডো গেম বয় তৈরি হয় যা ভিডিও গেমের দুনিয়াতে আলোড়ন তৈরি করে।

সূত্র: ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং