ধরন বুঝে কেন টিভি কেনা জরুরি

টিভি কিন্তু এখন আর একমুখী কোনো যন্ত্র নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি হয়ে উঠেছে একেবারে স্মার্ট, মাল্টি-ফাংশনাল ও ইন্টারঅ্যাকটিভছবি: স্যামসাংয়ের সৌজন্যে

ঘরে আর যা-ই থাকুক না কেন, একটি টেলিভিশন না থাকলে কি চলে? যতই আমরা আজকাল মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপে সিরিজ বা সিনেমা উপভোগ করি না কেন, টিভি দেখার ব্যাপারটিই যেন ভিন্ন। আয়োজন আর আয়েশ করে কিছু দেখতে গেলে টিভির কোনো জুড়ি নেই বললেই চলে।

তবে টিভি কিন্তু এখন আর একমুখী কোনো যন্ত্র নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি হয়ে উঠেছে একেবারে স্মার্ট, মাল্টি-ফাংশনাল ও ইন্টারঅ্যাকটিভ। তাই টিভি কেনার সময় শুধু ব্র্যান্ড বা দাম নয়, খেয়াল রাখতে হবে চাহিদা, ফিচার, প্রযুক্তি ও পারফরম্যান্সের সঠিক ভারসাম্য।

বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের টিভি—এলইডি, কিউএলইডি, মিনি-এলইডি ও ওএলইডি। এ ছাড়া আধুনিক স্মার্ট টিভিতে যুক্ত হয়েছে এআই প্রসেসিং, ভয়েস কন্ট্রোল, স্মার্ট হাব ও গেমিং ফিচারের মতো বৈশিষ্ট্য। তাই টিভি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা জরুরি।

স্ক্রিন প্রযুক্তি

স্ক্রিনের ওপর ভিত্তি করে এখন বিভিন্ন ধরনের টিভি পাওয়া যায়—এইচডি/এফএইচডি, ইউএইচডি, কিউএলইডি, ওএলইডি ও নিও কিউএলইডি এইটকে। এফএইচডি ও ইউএইচডি টিভি হলো সবচেয়ে প্রচলিত ও বাজেট-বান্ধব অপশন। এতে লাইট এমিটিং ডায়োড ব্যাকলাইট হিসেবে কাজ করে, ফলে বিদ্যুৎ খরচ কম হয় এবং স্ক্রিনের আয়ুষ্কাল তুলনামূলক বেশি থাকে। খবর, টক শো, সিনেমা বা দৈনন্দিন সিরিজ দেখার জন্য এটি যথেষ্ট ভালো। তবে কালার ও নিখুঁত কনট্রাস্টের দিক থেকে এলইডি কিছুটা পিছিয়ে।

আর কিউএলইডি টিভি কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তিভিত্তিক। এর ফলে এই টিভিগুলোতে ছবির উজ্জ্বলতা ও পারফরম্যান্স অনেক উন্নত। এতে যেকোনো আলোতেই টিভি দেখা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে। এ ছাড়া স্পোর্টস, গেমিং ও অ্যানিমেটেড সিনেমা উপভোগের জন্যও কিউএলইডি হতে পারে আদর্শ বিকল্প।

ওএলইডি টিভি এক ধাপ উন্নত। এখানে প্রতিটি পিক্সেল নিজেই আলো দেয়, তাই ব্ল্যাক লেভেল থাকে গভীর এবং কালার ও ভিউয়িং অ্যাঙ্গেল হয় অসাধারণ। সিনেমাটিক এক্সপেরিয়েন্স, গেমিং বা গ্রাফিক্সভিত্তিক কনটেন্ট দেখার জন্য ওএলইডি টিভি সেরা। তবে এর দাম তুলনামূলক বেশি।

স্ক্রিন সাইজ, সাউন্ড ও রেজল্যুশন

টিভির আকার বাছাই করার সময় ঘরের আয়তন ও দেখার দূরত্ব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ছোট রুমের জন্য ৩২ থেকে ৪৩ ইঞ্চির টিভি যথেষ্ট, যেখানে বড় ড্রয়িংরুমের জন্য ৫৫ থেকে ৮৫ ইঞ্চি বেশি উপযুক্ত। এখানে রেজল্যুশনের পাশাপাশি ব্যবহারকারীর পছন্দও বড় ভূমিকা রাখে।

এইচডি টিভিগুলো এখন অনেক পুরোনো ধরা হয়, তবে ফুল এইচডি এখনো ভালো মানের ভিউ দেয়। কিন্তু ফোরকে টিভিই এখন মূলধারায় রয়েছে। এতে ছবির ডিটেইল ও শার্পনেস অনেক বেশি। তবে ভালো ছবি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ভালো সাউন্ডও।

টিভির বিল্ট-ইন স্পিকারে যদি ডলবি অ্যাটমস বা ডিটিএস এক্স সাপোর্ট থাকে, তাহলে সাউন্ড হয় আরও ইমার্সিভ। তবে বড় ঘরে সিনেমা হলের মতো এক্সপেরিয়েন্স পেতে সাউন্ডবার বা হোম থিয়েটার সিস্টেম যুক্ত করা যেতে পারে।

প্রযুক্তির জন্য স্যামসাংয়ের টিভিগুলোতে ভিউইং এক্সপেরিয়েন্স অনেক বেশি আরামদায়ক ও স্বস্তিকর
ছবি: স্যামসাংয়ের সৌজন্যে

স্মার্ট ফিচার ও সংযোগ

আধুনিক স্মার্ট টিভিগুলো এখন সম্পূর্ণ আলাদা। এতে বিল্ট-ইন ওয়াই-ফাই ও ব্লুটুথের মাধ্যমে ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম কিংবা স্পটিফাই চালানো যায়। স্মার্ট হাব বা অপারেটিং সিস্টেম যেমন টাইজেন, টিভির ব্যবহার সহজ করে তোলে। ভয়েস কন্ট্রোল ফিচারের মাধ্যমে আপনি রিমোট না ধরেই টিভি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

এ ছাড়া কিছু উন্নত মডেলে এআই আপস্কেলিং প্রযুক্তি থাকে, যা নিম্নমানের ভিডিওকেও ফোরকে মানের কাছাকাছি করে তোলে। আর মাল্টি-ভিউ মোড বা পিকচার-ইন-পিকচার ফিচার দিয়ে একসঙ্গে একাধিক কনটেন্ট দেখা যায়।

আর যাঁরা গেম খেলেন, তাঁদের জন্য রিফ্রেশিং রেট, ইনপুট ল্যাগ ও রেসপন্স টাইম গুরুত্বপূর্ণ। ১২০ হার্জ বা তার বেশি রিফ্রেশিং রেট থাকলে স্ক্রিনের মুভমেন্ট হয় স্মুথ, যা হাই-স্পিড গেমে বিশাল পার্থক্য আনে। আর এইচডিএমআই ২.১ পোর্ট, ভিআরআর ও এলএলএম ফিচার থাকলে গেমিং এক্সপেরিয়েন্স আরও উন্নত হয়।

বাজারে এমন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অনেক ব্র্যান্ডের টিভি পাওয়া যায়। সেগুলোর মধ্যে স্যামসাং-২০২৫ সিরিজ যেন এসব প্রযুক্তি ও বৈচিত্র্যের অসাধারণ সমন্বয়। এই সিরিজেই একসঙ্গে পেয়ে যাবেন নিজের প্রয়োজন অনুসারে অনেকগুলো অপশন, যেমন নিও কিউএলইডি এইটকে, ওএলইডি, কিউএলইডি, ক্রিস্টাল ইউএইচডি, এফএইচডি মডেল এবং এইচডি মডেল।

স্যামসাং বিশ্বের একমাত্র টিভি ব্র্যান্ড যারা তাদের কিউএলইডি টিভিতে ব্যবহৃত কোয়ান্টাম ডট ডিসপ্লে প্রযুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন সংস্থা টিইউভি রাইনল্যান্ড থেকে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এ প্রযুক্তির জন্য স্যামসাংয়ের টিভিগুলোতে ভিউইং এক্সপেরিয়েন্স অনেক বেশি আরামদায়ক ও স্বস্তিকর। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের বাজারে আসা মডেলগুলোও এই সার্টিফিকেশনপ্রাপ্ত।

সাশ্রয়ী মূল্যে স্মার্ট টিভির ক্ষেত্রে স্যামসাংয়ের ইউএইচডি টিভিগুলো বেশি জনপ্রিয়, যেটি ব্যবহারকারীর পছন্দের কনটেন্টকে আপস্কেল করে ‘ফোরকে কোয়ালিটি’তে দেখাবে। আরও রয়েছে নক্স সিকিউরিটি, বিক্সবি ভয়েস কন্ট্রোলসহ বেশ কিছু স্মার্ট ফিচারের সুবিধা। এ ছাড়া যাঁরা একটু প্রিমিয়াম সেগমেন্টের টিভি চান, তাঁদের জন্য রয়েছে নিও কিউএলইডি এইটকে বা ওএলইডি মডেলগুলো। এতে রয়েছে শক্তিশালী এনকিউএআই জেন-৩ প্রসেসর এবং গ্লেয়ার ফ্রি টেকনোলজি। সঙ্গে সঙ্গে ডলবি অ্যাটমোস ও ১৬৫ হার্জের মোশন এক্সেলেরেটরের সুবিধা।