মানুষের সঙ্গে মানুষের যত সংযোগ হবে, তত সম্ভবনা বাড়বে

১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গণফোন ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন ইকবাল জাহিদুল (জেড) কাদীর। এই গণফোন থেকেই বাংলাদেশের গ্রামীণফোনের সূচনা।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন ইকবাল কাদীর। ২০০৭ সালে এমআইটিতে লেগাটাম সেন্টার ফর ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি হার্ভার্ড অ্যাশ সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিক গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ইনোভেশনে সিনিয়র ফেলো হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। ১ মে ইকবাল কাদীরের মা শিরিন কাদীরের জন্মদিন। মূলত মায়ের জন্মদিন উদ্‌যাপন করতে ঢাকায় এসেছিলেন এবার। সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) সমাবর্তন বক্তা হিসেবেও বক্তৃতা করেন। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথম আলোর সঙ্গে বর্তমান সময়ের প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেন ইকবাল কাদীর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পল্লব মোহাইমেনজাহিদ হোসাইন খান

প্রশ্ন:

মুঠোফোনের ৫১ বছর পার হলো। বাংলাদেশেও ব্যাপক অর্থে ২৭ বছর পার করছে। মুঠোফোন বা মোবাইল ফোন, স্মার্টফোনের অগ্রগতি কীভাবে দেখছেন?

ইকবাল কাদীর: এখন মোবাইল ফোন দিয়ে অনেক পরিবর্তন আসছে। চিকিৎসা থেকে শুরু করে শিক্ষায় এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই পরিবর্তন হচ্ছে। মোবাইল ফোন আসলে অনেক শক্তিশালী একটা টুল (যন্ত্র)। এটা এখন সবার হাতে চলে এসেছে। এর শক্তি অনেক। এখানে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। লাখ লাখ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অনেক কাজ করা যাচ্ছে। আমরা এখনো মোবাইল ফোনের পুরো শক্তি ব্যবহার করতে পারিনি। সব প্রযুক্তি এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই আমাদের হাতে চলে এসেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা নতুন কোনো ক্রিপ্টোপ্রযুক্তি—সবই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

মোবাইল ফোন অনেকটা রেললাইনের মতো। পথ হয়ে গেছে, এখন এর ওপর দিয়ে অনেক কিছুই চলবে। আমাদের দেশ গরিব হলেও আমরা পিছিয়ে নেই। মোবাইল ফোনের ওপর ভর করে আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। পাকিস্তানের চেয়ে আমাদের দেশে ১ কোটির বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী। আমাদের ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ৩০ লাখের বেশি। পাকিস্তানে অনেক কম। এগুলোও কিন্তু দারুণ ঘটনা।

প্রথম আলো:

মোবাইল ফোনে আমাদের সফলতা কেন মনে হচ্ছে?

ইকবাল কাদীর: পৃথিবীতে তো বহু সেলফোন কোম্পানি আছে। ব্যবসা করছে অনেকেই। তাদের না ডেকে দ্য ইকোনমিস্ট আমাকে মোবাইল ফোনের ৫০ বছর উপলক্ষে একটি লেখার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। আমাদের দেশে মোবাইল ফোন শুরু করার বিষয়টি বেশ আলাদা ছিল। কিছুটা কঠিন ছিল বলা যায়। এখনকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ভিন্ন। এ বিষয়ের ব্যাপারে আমার অনেক চিন্তা করতে হয়েছে। আজ বাংলাদেশে গ্রামীণফোন সফল প্রতিষ্ঠান। আমি যে ফর্মুলায় চলতে শুরু করেছিলাম, সেই সূত্রে আমরা সফল। আমি অনেক চিন্তাভাবনা করে মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থায় পরিবর্তন আসবে, এমন কিছু একটা তৈরির চিন্তা করেছিলাম।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের স্টার্টআপ (উদ্ভাবনী উদ্যোগ) বা এন্ট্রাপ্রেনরশিপ সংস্কৃতি ও পশ্চিমা সংস্কৃতির মধ্যে কেমন পার্থক্য দেখেন?

ইকবাল কাদীর: একটা স্টার্টআপ কিন্তু একা একা হতে পারে না। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ভালো বিশ্ববিদ্যালয়; কিন্তু সেটা কিন্তু একা একা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র যদি উন্নত না হতো, তাহলে হার্ভার্ড এমন হতো না। আমাদের দেশের অনেক তরুণ দেশের বাইরে ভালো করছেন। আমরা দেশে অনেকেই ভালো করছি; কিন্তু অনেক কিছু সমভাবে উন্নত না হলে ভালো পরিবর্তন আসবে না। অনেক সময় আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা অনেক জায়গায় বিদেশে দারুণভাবে সফল হচ্ছে, আমাদের দেশেও তাঁদের সফল হওয়ার সুযোগ আছে। পুরো পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যত ভালো পরিবেশ বা কাঠামো তৈরি হবে তত উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়বে।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশে আপনার পেশাজীবন গড়ে উঠলে কেমন হতো?

ইকবাল কাদীর: আমরা প্রথম দিকে বিজ্ঞাপন দিতাম রিকশাশ্রমিক মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। আমাদের ধারণা ছিল, সবার কাছে মোবাইল ফোন পৌঁছে যাবে। সেই জন্যই আমরা কাজ করেছি। তখন আমাদের দেখে অনেকেই পাগল মনে করত; কিন্তু আসলে এখন তা বাস্তব। আমাদের ভাবনা ছিল মোবাইল ফোন সবার হাতে যাবে, গ্রামে গ্রামে যাবে। এটা সাধারণ জনগণের জন্য। এই ধারণাই ছিল আমার বড় ধারণা।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শাস্তি হচ্ছে আপনাকে যদি একা রাখা হয়। কাউকে যদি খাবারদাবারসহ সব কিছু দিয়ে ঘরে একা রাখা হয়, তবে সে পাগল হয়ে যাবে। আমি আসলে জানতাম কমিউনিকেশন বা যোগাযোগমাধ্যম ভালো বিষয়। আমাদের দেশের অতীতে যে সমৃদ্ধি ছিল, তার প্রধান মাধ্যম ছিল নৌ–যোগাযোগ। এটা আমি জানতাম। আমার নিজের একটা অভিজ্ঞতা আছে। ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি। যুক্তরাষ্ট্রে আমার কম্পিউটার নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে যায়। তখন আমি বসে ছিলাম মেরামতকারীর অপেক্ষায়। সে সময় আমার আবার ১৯৭১ সালের কথা মনে পড়ে যায়। আমার গ্রামের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মহিষখোলা। মহিষখোলা গ্রামে থাকতাম। ১৩ বছর বয়স তখন আমার। একটা ওষুধের জন্য কয়েক ঘণ্টা হেঁটে অন্য গ্রামে যাওয়ার পরে দেখি, দোকানদার নেই। তিনি আড়ত থেকে মালামাল আনতে গেছেন। সারাটা দিন আমার নষ্ট হয়। একটা টেলিফোন থাকলে সময় বেঁচে যেত। আমি টেলিফোন কল করে জেনে নিতাম সব। আপনি চিন্তা করেন আমাদের যদি ১৭ কোটি মানুষ বাস করে, তার মধ্যে হয়তো ৩ কোটি লোকের একটি দিন সপ্তাহে নষ্ট হয় যোগাযোগের কারণে। সেই সময় নষ্ট হওয়া কমে যাচ্ছে মোবাইল ফোনের কারণে। মানুষের সঙ্গে মানুষের যত সংযোগ হবে তত সম্ভাবনা বাড়বে। এই মোবাইল ফোনের কারণে এমনটা হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে বার্তা পাঠাচ্ছি। আগে আমরা এই কাজটা করতাম টেলিফোন দিয়ে। এখন করছি মোবাইল ফোন দিয়ে।

মানুষের ক্ষমতা অনেক। এই ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে যেতে হবে, মনে করেন ইকবাল কাদীর
ছবি: খালেদ সরকার
প্রথম আলো:

অনেকেই বলেন, মোবাইল ফোন বা প্রযুক্তির কারণে অপরাধের ঘটনা ঘটছে। আমরা বাংলাদেশিরা এখনো এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত না বলেও অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি  কীভাবে দেখেন?

ইকবাল কাদীর: আচ্ছা আমাকে কে উপযুক্ত বানায় দেবে? যেকোনো কিছুই ব্যবহার করে করে আমরা উপযুক্ত হব। মানুষের ব্যবহার করা প্রথম প্রযুক্তি হচ্ছে আগুন। এখনো তো মানুষ আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে। সব প্রযুক্তিকে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে। এখন তো মোবাইল ফোনের একটা অ্যাপ হচ্ছে ফোন বা টেলিফোন যা আমরা আগে ব্যবহার করতাম। এমন অনেক কিছু এখন এই মোবাইল ফোনে চলে এসেছে।

প্রথম আলো:

প্রযুক্তির শুরু কেন পশ্চিমা দুনিয়া থেকে। সিলিকন ভ্যালি বা পশ্চিমা উন্নত দেশগুলো থেকেই সব হয় কেন? আমাদের এখানে কেন হয় না?

ইকবাল কাদীর: আমাদের এখানেও কিন্তু অনেক কাজ হয়। আমাদের জগদীশ চন্দ্র বসুর আবিষ্কার সেই সময়ে অনেক আধুনিক ছিল। কিন্তু আমাদের এখানে পূর্ণ অবকাঠামোর অভাব আছে। ১৯৯৩ সালের আগে আমি ৪/৫ বছর ধরে সবাইকে রাজি করাতে সময় নেই। ১৯৯৫ সালে সবাই এক হয়, ১৯৯৬ সালে আমরা মোবাইল ফোনের লাইসেন্স পাই। পরবর্তী সময়ে আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিই। পল্লিফোনের ধারণা আমার ছিল। গ্রামীণব্যাংক সেটির ব্যবস্থাপনায় ছিল।

প্রথম আলো:

উদ্ভাবন বা ব্যবসায় সরকারের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?

ইকবাল কাদীর: সরকার আসলে রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকারকে উপদেশ দেওয়ার মতো আমি কেউ না। স্টিভ জবস বা যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় উদ্যোক্তার দিকে দেখুন। সবাই খুব ছোট অর্থে শুরু করেছিল। সবার শুরুটা অনেকটা গ্যারেজ থেকে। উদ্যোক্তারা পুঁজি তৈরি করেন। উদ্যোক্তারা না থাকলে আমরা আরও গরিব থাকব। তবে উদ্যোক্তারা কোনো কিছু সহজে শুরু করতে পারেন না। অনেক কাজ করতে হয়।

প্রথম আলো:

গ্রামীণফোনের পরে আর আপনি আর কোনো আইডিয়া নিয়ে কাজ করেছেন?

ইকবাল কাদীর: আমি জ্বালানি তৈরির মাধ্যমে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার কাজ করার চেষ্টা করছিলাম। যে যন্ত্রের ওপর ভর করে কাজ করছিলাম, সেটির জন্য প্রায় ১০ বছরের মতো অপেক্ষা করেছি। গ্রামে গ্রামে বায়োগ্যাসের মাধ্যমে একটা ইঞ্জিন চালানোর কাজ করছিলাম। গ্রামের কৃষকদের মাধ্যমে আমি কাজটি করার পরিকল্পনা করছিলাম। অনেক দিন অপেক্ষার পরে সেই কাজ আর শুরুই করা যায়নি। এরই মধ্যে আমি এমআইটিতে লেগাটাম সেন্টার তৈরির কাজ শুরু করি। নানা জায়গায় পড়াচ্ছি। আমার বেশ পড়াশোনা করতে হয়। এতে অনেকটা সময় চলে যায়।

প্রথম আলো:

২০০৮ সালে প্রথম আলোর সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’ আপনার সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। ব্যক্তি ইকবাল কাদীর ও তাঁর পরিবারের কথা জানতে চাই।

ইকবাল কাদীর: ২০০৮ সালের পরে আমি দুটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছি। ২০১১ সালে সোয়ার্থমোর কলেজ থেকে ডক্টর অব হিউম্যান লেটার্স ও কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করি। আমার দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ের নাম আনিশা কাদীর। সে এমআইটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে হার্ভার্ডে পড়েছে। এখন সে লিভি নামের একটি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। আর ছেলে আয়মান কাদির সেমি অ্যাকুয়াটিকস নামের স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করছে।

প্রথম আলো:

আপনার কোনো শিক্ষার্থীর কোনো আলোচিত উদ্যোগ আছে?

ইকবাল কাদীর: এমআইটিওর আমার এক ছাত্র হাভিয়ের লোজানো মেক্সিকোতে কম খরচে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিয়ে কাজ করে। সে মেক্সিকোয় সেরা উদ্যোক্তার পুরস্কার জিতেছিল। সে মেক্সিকোজুড়ে ক্লিনিকাস দেল আজুকার নামে ছোট ছোট ডায়াবেটিস কেন্দ্র চালু করে।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের কেমন সম্ভাবনা দেখেন?

ইকবাল কাদীর: এখন সবার হাতে ফোন দেখে আমার ভালো লাগে। আমার কাছে আশ্চর্য লাগে কীভাবে মোবাইল ফোন সবার মধ্যে ছড়িয়ে গেছে। এআই আসলে একধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম। মানুষের পক্ষে একা অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। আমরা এক হাতে একটা বই তুলতে পারি; কিন্তু আরও ভারী কিছু তুলতে আমরা ক্রেন ব্যবহার করে ১০০ মণ জিনিস তুলতে পারি। সেটা কিন্তু আমরাই ডিজাইন করেছি। আমাদের মস্তিষ্কের প্রক্রিয়া করার শক্তিকে যন্ত্রের মাধ্যমে আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে। ৩০-৩৫ বছর আগে আমি এআই নিয়ে পড়েছিলাম। এআই দিয়ে এমন ক্রেন এখন নকশা করা সম্ভব হচ্ছে, যার মাধ্যমে অনেক কাজ করা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জন্য অনেক সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

প্রথম আলো:

প্রযুক্তির কারণে মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্ব কমে যাবে না তো?

ইকবাল কাদীর: আগে টেলিফোন অপারেটররা আমাদের টেলিফোন সংযোগ দিয়ে দিতেন। অনেক নারী টেলিফোন অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। মোবাইল ফোন আসার পরে টেলিফোন অপারেটররা আন্দোলন করেছিলেন তাঁদের চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে।

প্রথম আলো:

এআই এলে চাকরি চলে যাবে বলেও কথা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

ইকবাল কাদীর: আমরা এমন সময় শুরু করেছিলাম, তখন বাংলাদেশে ই–মেইল করার সুযোগ ছিল না। আমরা তখন সারা দিনে ই–মেইল লিখতাম, পরে সন্ধ্যায় সেই ই–মেইলের সব কটি একসঙ্গে সিঙ্গাপুরে ফোন করে পাঠানো হতো। আমি আমার বাসার পাশের এক দোকান থেকে ফ্যাক্স করে সব কিছু নরওয়ে, সুইডেনে তখন পাঠাতাম। এখন কিন্তু কাজের মান বেড়েছে। আর নতুন উদ্ভাবন আনা কিন্তু অনেক কঠিন কাজ। আমরা যা দেখিনি তা তৈরি করা, আবিষ্কার করা খুব কঠিন। মানুষের এগোনোর ইচ্ছা আছে। প্রত্যেকটা মানুষের এগোনোর ইচ্ছা অনেক। এ কারণেই গ্রামীণফোনের শুরু হয়। আমি বারবার বলি মানুষকে বোঝা দরকার, প্রযুক্তিকে বোঝা দরকার।

আজকের গ্রামীণফোনের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল কাদীর
ছবি: খালেদ সরকার
প্রশ্ন:

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে এখন প্রযুক্তি প্রায় একই সময়ে আসছে। আমরা তা ব্যবহারও করতে পারছি। কিন্তু আমরা কেন বৈশ্বিক পর্যায়ের কোনো কিছু উদ্ভাবন করতে পারছি না?

ইকবাল কাদীর: স্টিভ জবস যখন আইফোন বের করে তার এক বছরের মধ্যে আইফোন বাংলাদেশে চলে আসে। বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে উদ্ভাবনের ফলাফল আমাদের দেশে দ্রুতই চলে আসছে। আমরা একটা বন্দর। আমরা বৈশ্বিক অর্থনীতির অংশ হিসেবে বৈশ্বিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি। আমরা আমদানি করছি। আমাদের রপ্তানি করার সুযোগও আছে। আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীদের আমরা সেই সুযোগ দিতে পারি। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে সহায়তার সুযোগ আছে। কার্ডিয়া মোবাইল ইকেজি মনিটর পাওয়া যায় ৭৯ ডলার দিয়ে। এটি দিয়ে ইলেকট্রোকার্ডিগ্রামের রিপোর্ট জানা যাচ্ছে। এটা কিন্তু ফোন ছাড়া চলবে না। গ্রামের কোনো এক নারী কিন্তু এই অ্যাপ দিয়ে ঘরে ঘরে রিপোর্ট আনতে পারে। সেই রিপোর্ট সরাসরি চিকিৎসকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। উন্নয়নের অনেক সুযোগ আছে। সামনে স্বাস্থ্য খাতে অনেক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা কম্পিউটারের বাড়ছে। এই শক্তির ওপর নির্ভর করে নতুন সম্ভাবনার সুযোগ রয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্ক। সবার ওপরে মানুষ সত্য। মানুষের মস্তিষ্ক সবচেয়ে শক্তিশালী সত্তা। আমাদের দায়িত্ববোধ অনেক। মানুষের ক্ষমতা অনেক। এই ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।