গ্রাহকের সব জিজ্ঞাসার উত্তর দেয় দেশি সফটওয়্যার জিরোসিয়াম

বেসিসের মেলায় জিরোসিয়াম সফটওয়্যার দেখছেন এক দর্শনার্থীসংগৃহীত

আচ্ছা ভাবুন তো! ফেসবুকে তো অনেক ধরনের পেজ আছে। পণ্য বেচাকেনার পেজও তো কম নয়। যেখানে গ্রাহকদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক বার্তা আদান-প্রদান করতে হয়। এমন পেজগুলোর প্রতিটি পোস্টে যে হাজারো কমেন্ট, ইনবক্সে প্রতিদিন যে অজস্র প্রশ্ন, জিজ্ঞাসা, অভিযোগ আসে, সেগুলোর উত্তর দেওয়া হয় কীভাবে? গতকাল শনিবার এই উত্তর জানতে পারলাম রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে বেসিস সফটএক্সপো মেলায়। খোঁজ পাওয়া গেল ম্যাডলি নামের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের। এদের তৈরি সফটওয়্যারের নাম জিরোসিয়াম। জিরোসিয়াম ফেসবুক পেজে কমেন্ট, গ্রাহকের নানা জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়ে থাকে।

প্রতিদিন কোনো ব্র্যান্ডের ফেসবুক পেজে নিত্যনতুন প্রশ্ন আসে। গ্রাহকেরা বিভিন্ন পণ্য ও সেবা সম্পর্কে জানতে চান। এই প্রশ্নগুলো করা হয় ফেসবুক পেজের কমেন্ট বা হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারের ইনবক্স, ইনস্টাগ্রামের ইনবক্স, ওয়েবসাইটের লাইভ চ্যাট অপশন ইত্যাদির মাধ্যমে। যথাযথভাবে, সঠিকভাবে ও দ্রুততম সময়ে প্রশ্নগুলোর কীভাবে উত্তর দেওয়া যায়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য থাকেন গ্রাহকসেবা প্রতিনিধিরা। কিন্তু প্রতিদিন এমন হাজারো প্রশ্নের সঠিক জবাব দেওয়া, তা-ও আবার তৎক্ষণাৎ, সেটা তো মানুষের পক্ষে অসাধ্যই। প্রশিক্ষিত গ্রাহকসেবা প্রতিনিধি দিয়েও গ্রাহকের এত এত প্রশ্নের জবাব দেওয়া প্রায় অসম্ভব। সেই অসাধ্য সাধন করে দেয় জিরোসিয়াম সফটওয়্যার।

জিরোসিয়াম কী ও কেন?

জিরোসিয়াম হলো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা ব্যবস্থাপনার (কয়্যারি ম্যানেজমেন্ট) একটি সর্বজনীন চ্যানেল। এটি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ই-মেইল, প্লে স্টোর, টেলিগ্রাম, টিকিটিং সিস্টেম ও ওয়েব চ্যাটকে কোনো ব্র্যান্ডের গ্রাহক পরিষেবায় একীভূত করে; অর্থাৎ একজন গ্রাহক উল্লিখিত যে মাধ্যমেই প্রশ্ন করুন না কেন, সেটি গ্রাহকসেবা প্রতিনিধির কাছে একটি সাধারণ ইনবক্সে আসে। প্রতিনিধি তখন সঠিক উত্তরটি সেখানে লিখে দিলেই তা সরাসরি গ্রাহকের কাছে চলে যায়। গ্রাহক ও পেজ দুই পক্ষের জন্যই এটা খুবই সহজ।

যা আছে এই সফটওয়্যারে

প্রায় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রাহকের সব জিজ্ঞাসার উত্তর এই সফটওয়্যারের মধ্য দিয়ে দেওয়া সম্ভব। চাইলে সফটওয়্যার ব্যবহারকারী নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকায় নিয়ে এটি ব্যবহার করতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে সেবা প্রতিনিধি, দলনেতা, প্রশাসক বা অ্যডমিন, গ্রাহক ইত্যাদি। একেক ভূমিকায় একেক ধরনের সুবিধা থাকে।

যেমন সেবা প্রতিনিধিরা প্রতিটি মুহূর্তে সঠিকভাবে গ্রাহককে উত্তর দিচ্ছেন কি না, তা-ও খুব সহজেই অনুসরণ সম্ভব দলনেতার পক্ষ থেকে। আবার একজন গ্রাহক বিভিন্ন চ্যানেলে কোনো নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড নিয়ে কী ধরনের প্রশ্ন করেছেন, তা-ও একবারে দেখা সম্ভব। এভাবে অনেক গ্রাহকের কাছ থেকে আসা প্রশ্নগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিশ্লেষণ করলেই কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন বিষয় নিয়ে গ্রাহকেরা বেশি উৎসাহী, তা বোঝা যায়।

জিরোসিয়ামের আরও একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, এর সঙ্গে তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার জন্য চ্যাটবট যুক্ত করা যায়। চ্যাটবটটি ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রুডেন্ট, অর্থাৎ খুব সহজেই সহজাত ভাষা বুঝতে পারে। গ্রাহকদের কিছু সাধারণ প্রশ্নের জবাব এই চ্যাটবটই দিয়ে দিতে পারে। আর অধিকাংশ প্রশ্ন, যেগুলো জটিল অথবা বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তর দিতে হয়, সেগুলোতে জিরোসিয়ামের মাধ্যমে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই।

যেভাবে এল জিরোসিয়াম

উপাত্তবিশেষজ্ঞ ওবায়দুর রহমান তাঁর প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৯ সালে আইগ্রুট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। সেই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই আসে এই অমনিচ্যানেল কোয়েরি ম্যানেজমেন্ট টুল। ওবায়দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাহকসেবায় নতুন মাত্রা যোগ করা এই সফটওয়্যার এখন একদিকে যেমন অনেক গ্রাহকের প্রশ্ন করার ও অভিযোগ জানানোর নির্ভরযোগ্য স্থান হয়ে উঠেছে, তেমনি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও দ্রুত হয়ে উঠছে গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনের সহজ এক মাধ্যম। দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা, মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন গ্রাহক পরিষেবায় জিরোসিয়াম ব্যবহার করছে। এক্স সলিউশনস লিমিটেড জিরোসিয়ামের একমাত্র পুনর্বিপণনকারী হিসেবে রয়েছে।

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর মেশিন লার্নিংয়ের যুগে গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো চেষ্টার কোনো শেষ নেই। ডিজিটাল বিপণনের এই মহাযুদ্ধে এগিয়ে যেতে কোম্পানিগুলো ব্যবহার করছে প্রযুক্তি আর মানবিক দক্ষতার অসাধারণ মিশেল। জিরোসিয়াম এ যুগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য এক অনন্য সফটওয়্যার।