আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা
টেলিভিশনকে বাংলায় বলা হয় ‘দূরদর্শন’। মাত্র কয়েক বছর আগেও এটি সত্যিই ছিল দূরদর্শনের মাধ্যম—দূরের কোনো ঘটনা চোখের সামনে এনে দেওয়ার একটি যন্ত্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে টিভির সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে আজকাল টিভি হয়ে উঠেছে একটি ‘স্মার্ট হাব’, যেখানে সিনেমা দেখা, গেম খেলা, ভিডিও কল করা, এমনকি বাড়ির অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক টিভিগুলোর সুবিধা কেবল ছবি বা সাউন্ডে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এখন ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স।
স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেম
বর্তমান প্রজন্মের টিভিগুলো শুধু নাটক কিংবা সিনেমা দেখার একটি স্ক্রিন নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট ডিভাইস। স্মার্ট টিভিতে অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) হিসেবে টাইজেন, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, রোকু টিভি এবং ওয়েবওএস ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই সিস্টেমগুলোর মাধ্যমেই বর্তমান যুগের টিভিগুলো হয়ে উঠছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর। ব্যবহারকারীরা এখন চাইলেই স্মার্ট টিভিগুলোতে নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্পটিফাই, অ্যামাজন প্রাইম কিংবা যেকোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মও সরাসরি উপভোগ করতে পারেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘অ্যাপ স্টোর ইন্টিগ্রেশন’। টিভিতেই এখন মোবাইলের মতো অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। ওয়েদার অ্যাপ, গেমস, নিউজ—এমনকি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপও ব্যবহার করা যায় টিভির বড় স্ক্রিনে।
ভয়েস কন্ট্রোল: কথা বলেই নিয়ন্ত্রণ
রিমোট খোঁজার ঝামেলা এখন যেন অতীত। আগে টিভির সবকিছু রিমোট দ্বারা পরিচালিত হলেও এখনকার আধুনিক টিভিগুলোতে আছে ভয়েস কন্ট্রোল—যেখানে ব্যবহারকারীর ভয়েস দ্বারাই টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই প্রযুক্তি বিক্সবি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে কাজ করে। এর পাশাপাশি কিছু হাই-এন্ড মডেলে রয়েছে জেসচার কন্ট্রোল—যেখানে হাত নাড়লেই টিভি রেসপন্স করে। টিভি চালু-বন্ধ করা, চ্যানেল পরিবর্তন—এমনকি ভলিউম বাড়ানো-কমানোর মতো কাজও করা যায় হাতের ইশারায়। এ ক্ষেত্রে গ্যালাক্সি ওয়াচের কথা বলা যায়। এটি হাতের নড়াচড়াকে শনাক্ত করে এসব কমান্ড কার্যকর করে।
মাল্টি-ডিভাইস কানেকটিভিটি: এক স্ক্রিনে সব সংযোগ
বর্তমানে টিভি শুধু সম্প্রচার মাধ্যম নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট। মোবাইল ফোন, স্পিকার, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল—সব ডিভাইস এখন টিভির সঙ্গে সহজেই সংযুক্ত করা যায়।
বেশির ভাগ স্মার্ট টিভিতে রয়েছে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, এইচডিএমআই এআরসি, এয়ার প্লে, মিরাকাস্টসহ বিভিন্ন সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ফোনের ছবি, ভিডিও বা প্রেজেন্টেশন মুহূর্তেই বড় স্ক্রিনে শেয়ার করতে পারেন। সেই সঙ্গে আধুনিক টিভিগুলোতে রয়েছে গেমারদের জন্য এইচডিএমআই ২.১ পোর্ট এবং কম ইনপুট ল্যাগযুক্ত ডিসপ্লে, যা গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে করে তোলে আরও স্মুথ।
ভিজ্যুয়াল আপগ্রেড: ফোর-কে, এইট-কে ও এইচডিআর
ছবির মান কিন্তু টিভির প্রধান আকর্ষণ। তাই প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত উন্নত করছে টিভির ডিসপ্লে কোয়ালিটি। বর্তমানে ফোর-কে আলট্রা এইচডি এবং এইট-কে রেজল্যুশনের টিভি বাজারে বেশ জনপ্রিয়। এই প্রযুক্তিতে প্রতিটি ফ্রেমে চার থেকে আট গুণ বেশি পিক্সেল থাকে, যা ছবিকে করে তোলে অবিশ্বাস্যভাবে স্পষ্ট, প্রাণবন্ত ও বাস্তবের মতো।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হাই ডায়নামিক রেঞ্জ বা এইচডিআর প্রযুক্তি, যা ছবির কালার, লাইটিং এবং শ্যাডোর ভারসাম্য ঠিক রাখে। ফলে ডার্ক সিনেও ডিটেইল স্পষ্ট দেখা যায়, আর লাইট সিনেও কালার থাকে ডিপ আর ন্যাচারাল। কিছু প্রিমিয়াম টিভিতে এইচডিআর১০+ বা ডলবি ভিশন সাপোর্টও থাকে, যা সিনেম্যাটিক এক্সপেরিয়েন্স এনে দেয় ঘরে বসেই।
বর্তমান সময়ে টিভি মানেই কেবল নাটক কিংবা সিনেমা দেখা নয়; বরং এটি এখন হয়ে উঠেছে একটি স্মার্ট এন্টারটেইনমেন্ট ইকোসিস্টেম। ভয়েস কমান্ডে নিয়ন্ত্রণ, ফোর-কে ভিজ্যুয়াল, মাল্টিডিভাইস সংযোগ এবং দ্রুতগতির অপারেটিং সিস্টেম। আর এই সব কটি আধুনিক সুবিধাই পেয়ে যাবেন স্যামসাংয়ের স্মার্ট টিভিগুলোতে। সেই সঙ্গে ব্র্যান্ডটির টিভিগুলোতে রয়েছে স্মার্টথিংস ইকোসিস্টেম, যা এক প্ল্যাটফর্মেই যুক্ত করে দিতে পারে সব স্মার্ট ডিভাইসকে। স্মার্টফোন থেকে টিভি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স কিংবা নিরাপত্তাব্যবস্থা—সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজে। এর ‘এআই এনার্জি মোড’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে আনে এবং সংযুক্ত ডিভাইসের কার্যক্রম আরও স্মার্টভাবে পরিচালনা করে। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা ও সেবার জন্য রয়েছে ফ্যামিলি কেয়ার ফিচার, যার মাধ্যমে পরিবারের এবং পোষা প্রাণীর দেখাশোনাও সম্ভব দূর থেকে।