ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার চায় বিসিএস

আগামী বাজেটে ল্যাপটপ ও প্রিন্টারে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবসা খাতের সবচেয়ে পুরোনো সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। এ ছাড়াও ল্যাপটপের ওপর থেকে বিভিন্ন কর প্রত্যাহারের দাবি এই সংগঠনের।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দেশের আইসিটি খাতের প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হলো ধারাবাহিক আয়োজন। প্রথম পর্বে আজ থাকছে বিসিএসের কথা। লিখেছেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি সুব্রত সরকার।

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ ও প্রসার, জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে সচেতনতার সৃষ্টি, এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সব ক্ষেত্রের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণ, তথ্যপ্রযুক্তি সহায়ক ও নির্ভর পরিবেশ সৃষ্টি, দেশে আইটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র তৈরি এবং বহির্বিশ্বে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি সৃষ্টির জন্য বহুবিধ কর্মসূচি প্রণয়ন ও কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার যে ধারা সূচিত হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এরই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নেও প্রযুক্তি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে যাবে, ২০৪১ সালে সামিল হবে উন্নত বিশ্বের কাতারে। স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিসিএস সরকারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় প্রস্তুত রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেশে স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে ল্যাপটপ কম্পিউটার আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপ করা হয়েছে। ল্যাপটপের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর প্রস্তাবের পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ার ফলে মোট ২৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক, অগ্রিম আয়কর (এআইটি), অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট যুক্ত হয়ে ল্যাপটপের মূল্য প্রায় ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে যে ল্যাপটপটির মূল্য ছিল ১ লাখ টাকা, সেটির মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা।

প্রকৌশলী সুব্রত সরকার
ছবি: সংগৃহীত

ল্যাপটপ কম্পিউটার এখন বিলাসী কোনো পণ্য নয়। সরকারের ৫০০ কোটি ডলার উপার্জনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে আউটসোর্সিং যাঁরা করছেন, তাঁদের প্রধান হাতিয়ার ল্যাপটপ। ব্যক্তি পর্যায়ে তরুণ মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সারও ল্যাপটপ ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন। এ ছাড়া শিক্ষা উপকরণ হিসেবেও ল্যাপটপ স্বীকৃত। বাংলাদেশে ল্যাপটপ উৎপাদনের কারখানা এখনও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। মাত্র এক থেকে দুটি কোম্পানি স্বল্প পরিসরে উৎপাদন শুরু করলেও চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। কেবল বাইরে থেকে আনা যন্ত্রাংশ এখানে সংযোজিত হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহ দিতে আমদানিতে বাড়তি শুল্ক বসালে, তা আসলে ব্যবহারকারীদের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়াবে। এর ফলে ভোক্তাদের একটি বড় অংশ তাঁদের চাহিদামতো ল্যাপটপ না কিনতে পেরে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মিছিলে পিছিয়ে পড়বে।

ল্যাপটপের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন পথে দেশে আসা অননুমোদিত ও রিফারবিশড ল্যাপটপের দৌরাত্ম্য বাড়বে। এ ক্ষেত্রে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। ল্যাপটপ এখন শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদার অংশ। আর দেশীয় প্রযুক্তি উৎপাদন কারখানাকে উৎসাহিত করতে পরিকল্পনামাফিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশে ল্যাপটপ উৎপাদনে অনেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও উৎপাদন শুরু করতে আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন। একটি পারসোনাল কম্পিউটার বা ল্যাপটপ তৈরি করতে প্রায় কয়েক হাজার ছোট ছোট যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়। যদি ল্যাপটপ কম্পিউটার আমরা এ দেশে উৎপাদন করতে যাই, সে ক্ষেত্রে প্রতিটি যন্ত্রাংশ এখানে উৎপাদন করতে হবে। আবার রোবট-নির্ভর কারখানা বসিয়ে উৎপাদন করতে গেলে যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদন হবে, তা রপ্তানি করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টিতেও আমাদের প্রচেষ্টা চলমান রাখতে হবে। ল্যাপটপের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন করকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্তরায় বলে আমরা মনে করি। তাই ল্যাপটপ কম্পিউটার আমদানিতে ১৫ শতাংশ কর থেকে অব্যাহিত প্রদান করা হোক।

প্রিন্টারসামগ্রী আমদানিতে কর প্রত্যাহার করতে হবে। এ দেশে প্রিন্টারসামগ্রী উৎপাদনে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও উৎপাদন শুরু করতে আরও সময়ের প্রয়োজন। তাই ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনায় ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

এবারের বাজেট আমাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বিসিএসের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করছি। বিসিএসের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত মনিটর আমদানিতে কর অব্যাহতির দাবি জানাচ্ছি। তথ্যপ্রযুক্তির প্রায় সব পণ্যের আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।

অনুলিখন: তারিকুর রহমান খান