স্টিভ জবস, জেফ বেজোস ও ল্যারি এলিসন কি দত্তক সন্তান ছিলেন
বিশ্বের সফল উদ্যোক্তাদের আমরা সাধারণত চিনি তাঁদের ব্যবসায়িক দূরদৃষ্টি, উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি আর নিরলস পরিশ্রমের কারণে। তবে তাঁদের অনেকের জীবনের অজানা অধ্যায় অনেকেরই অগোচরে রয়ে গেছে। প্রযুক্তিজগতের তিন মহিরুহ অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ও ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন শৈশবে সবাই দত্তক সন্তান ছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকে বেড়ে উঠেছেন ভিন্ন পরিবারে। অবশ্য সেসব পরিবার থেকে তাঁরা ভালোবাসা পেয়েছেন। পেয়েছেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও। শৈশবের সেই অভিজ্ঞতা তাঁদের গড়ে তুলেছে দৃঢ়চেতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও সৃজনশীল মানুষ হিসেবে। দেখে নেওয়া যাক প্রযুক্তিজগতের এই তিন মহিরুহের জীবনের অজানা অধ্যায় সম্পর্কে।
স্টিভ জবস
স্টিভ জবসের জন্ম সিরীয় শিক্ষার্থী আবদুলফাত্তাহ জন্দালি ও মার্কিন তরুণী জোয়ান শিবলের ঘরে। জোয়ানের পরিবার সম্পর্কটিতে আপত্তি জানানোয় তিনি সন্তানকে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে যে দম্পতি নবজাতককে নিতে রাজি হয়েছিলেন, ছেলেসন্তান জেনে পিছিয়ে আসেন। পরে কর্মজীবী দম্পতি পল ও ক্লারা জবস তাঁকে দত্তক নেন। দত্তক মা–বাবার প্রতি জবসের টান ছিল গভীর। তিনি তাঁদেরকেই নিজের প্রকৃত মা–বাবা মনে করতেন। জৈবিক মা–বাবা প্রসঙ্গে তিনি বলতেন, ‘তাঁরা কেবল আমার শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর উৎস।’ পল-ক্লারার স্নেহ ও উৎসাহে ছোটবেলা থেকেই জবসের ভেতরে জন্ম নেয় কৌতূহল, সৃজনশীলতা আর নতুন কিছু করার তাগিদ। সেগুলোই পরবর্তী সময়ে তাঁকে অ্যাপল ও পিক্সারে উদ্ভাবনের পথে এগিয়ে দেয়।
জেফ বেজোস
জেফ বেজোসের জন্মনাম ছিল জেফরি প্রেস্টন জর্গেনসেন। তাঁর মা জ্যাকলিন কিশোরী বয়সে মা হয়েছিলেন। জেফের বয়স যখন মাত্র ১৭ মাস, তখন জ্যাকলিন স্বামীকে তালাক দেন। জেফের যখন চার বছর বয়স তখন তাঁর মা জ্যাকলিন বিয়ে করেন কিউবা থেকে আসা অভিবাসী মিগেল ‘মাইক’ বেজোসকে। মাইকই জেফকে দত্তক নেন এবং তখন থেকেই তাঁর পদবি হয়ে যায় বেজোস। মাইক ছিলেন শৃঙ্খলাবদ্ধ ও পরিশ্রমী মানুষ। তাঁর কাছ থেকেই ছোট জেফ শিখেছিলেন শেখার আনন্দ, অধ্যবসায়ের গুরুত্ব আর জীবনের নৈতিকতা। বেজোস পরে স্বীকার করেছেন, মাইক তাঁর জীবনের প্রধান অনুপ্রেরণা ছিলেন। সেখান থেকেই জন্ম নেয় বিজ্ঞানের প্রতি কৌতূহল, প্রযুক্তির প্রতি ভালোবাসা ও ব্যবসায়িক দূরদৃষ্টি। দত্তক হয়ে পাওয়া এই পরিবারই তাঁকে পরিণত করে অ্যামাজনের স্বপ্নদ্রষ্টা উদ্যোক্তায়।
ল্যারি এলিসন
ল্যারি এলিসনের জন্ম নিউইয়র্কে। ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীর গর্ভে। জন্মের পরপরই তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। তখন তাঁর মা তাঁকে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে খালা লিলিয়ান ও খালু লুইস এলিসন তাঁকে শিকাগোতে নিজেদের কাছে নিয়ে আসেন। শৈশব থেকেই এলিসন জানতেন, তিনি দত্তক সন্তান। তবে ১২ বছর বয়সে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করেন। লিলিয়ান ছিলেন স্নেহশীল, আর লুইস ছিলেন কঠোর স্বভাবের। দক্ষিণ শিকাগোর সাধারণ জীবনযাপন তাঁকে বানায় আত্মনির্ভর ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী। প্রতিকূল শৈশবই তাঁকে শক্ত করে তোলে। সেই দৃঢ়তা নিয়েই তিনি পরে ওরাকলের মাধ্যমে গড়ে তোলেন প্রযুক্তিজগতের এক বিশাল সাম্রাজ্য। অনেক বছর পরে ৪৮ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার জৈবিক মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। নিজের সাফল্যকে তিনি তাই প্রায়ই দেখেন ‘স্বনির্মিত মানুষের জয়’ হিসেবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া